:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের ৪৯টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবাজারের আগুন ১২টা ৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন আর ছড়াবে না। তবে পুরোপুরি নির্বাপণে আরও সময় লাগবে। এখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নির্বাপণ ও ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন।
এদিকে আগুনে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৯টি ইউনিট কাজ করে।
একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি-বিমান-নৌ ও সেনাবাহিনী। তবে তাদের পানি সংকটে পড়তে হয়। পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে পানি নেওয়া হয়। দীর্ঘ পাইপে পানি নেওয়ার কারণে চাপ না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটেছিল।
অন্যদিকে হাতিরঝিল থেকে পানি নেয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। কয়েক দফায় হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি নেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। সে দুর্ঘটনায় ওই এলাকার অধিকাংশ দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন সেখানে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলে টিনকাঠ দিয়ে নির্মিত দুই ও তিন তলাবিশিষ্ট চার ইউনিটের ‘বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স’ নামে কাপড়ের পাইকারি মার্কেট।
বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে মার্কেটটিতে দুবার আগুন লাগে। প্রথমবার প্রায় ২ হাজার ২০০ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দ্বিতীয়বারের আগুনে আংশিক দোকান পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা দাঁড়ায়। সে সময় সরকার থেকে ১ কোটি টাকা, ডিসিসি থেকে ৪০ লাখ টাকা এবং টিন ১১ বানসহ দোকানদারদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে মার্কেটটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। সে সময় সরকার থেকে শুরু করে সব ধরনের ক্রেতার একটি সহানুভূতি ছিল মার্কেটের ওপর।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই আগুন লেগে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের (গুলিস্তান ইউনিট) কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার চারটি ইউনিটে বিভক্ত। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০টি। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক কমিটি ২০১৭ সালে বঙ্গবাজারের এ চারটি ইউনিটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করে বাজার কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর ১ হাজার ৩০৫টি শপিং মল/মার্কেট ও বিপণিবিতানের মধ্যে ৬২২টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৬৭৮টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র পাঁচটিকে ‘সন্তোষজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।
স্বাধীনতার আগে রেলের জায়গায় এই বঙ্গবাজার মার্কেটের গোড়াপত্তন। শুরুতে ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও হকাররা বসতেন। ফুলবাড়িয়ায় তখন ঢাকার প্রধান রেলস্টেশন ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টিনশেড দোকানগুলো ভেঙে পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে রেল কর্তৃপক্ষ মালিকানা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় দোকানিরা ইজারা নিয়ে দোকান বসানোর অনুমতি পান। ১৯৮৫ সালে সিটি করপোরেশন জায়গাটির মালিকানা পায় এবং ১৯৮৯ সালে সেখানে মার্কেট নির্মিত হয়। তখন থেকেই এটির নাম হয় বঙ্গবাজার। ২১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের এ বঙ্গবাজার ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের বড় বাজার হিসেবে পরিচিতি পায়।