:: সিফাত হক ::
স্প্যানিশ ক্লাব এফসি বার্সেলোনার কিছু বাংলাদেশি ভক্তদের নিয়ে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে ফেসবুক গ্রুপ ‘এফসি বার্সেলোনা লাভার্স ক্লাব বাংলাদেশ’। শুরু থেকেই মনিটরিং এর মাধ্যমে গ্রুপের পরিবেশ ঠিক রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এসেছেন এডমিনরা। বাংলাদেশে বসে সুদূর স্পেনের বার্সেলোনার অফিশিয়াল ফ্যান ক্লাবের সদস্য হওয়া কঠিন ছিল বাংলাদেশী ভক্তদের জন্য। অন্যান্য ফুটবল ক্লাবগুলো বিভিন্ন দেশের ভক্তদের গ্রুপকে যখন অফিসিয়াল রিকগনিশন দিয়ে দেয় সহজ পন্থায়, বার্সেলোনা থেকে অফিসিয়াল রিকগনিশন পাওয়ার জন্য পোড়াতে হয় অনেক কাঠখড়। সে কারণে বাংলাদেশে ইউরোপীয় অনেক ক্লাবের অফিসিয়াল ফ্যানবেস থাকলেও বার্সার অফিসিয়াল ফ্যান গ্রুপ ছিল না এতদিন।
২০১২ সালের দিকে প্রথমবারের মত বার্সার অফিসিয়াল ফ্যানগ্রুপ বা ‘পেনইয়া’র সম্পর্কে ধারণা আসে। ‘এফসি বার্সেলোনা লাভার্স ক্লাব বাংলাদেশ’ গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে স্বপ্নবান কয়জন তরুণ স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের এই গ্রুপকে অফিসিয়াল রিকগনিশন এনে দেওয়ার। কিন্তু অফিসিয়াল হওয়ার জটিল সব নিয়মকানুনের জন্য স্বপ্ন বারবার স্বপ্নই থেকে যাচ্ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বার কয়েক চেষ্টার করেও সফল হওয়া যায় নি। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এসে আবারও নতুন উদ্যমে অফিসিয়াল হওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করা হয় এই গ্রুপের পক্ষ থেকে। এবারের আড়াই বছরের যাত্রায় এই গ্রুপেরই কিছু সদস্য দায়িত্ব নিয়ে শুরু করেন কাজ। একটাই লক্ষ্য- যেভাবেই হোক অফিসিয়াল রিকগনিশন পেতে হবে। কখনো প্রক্রিয়াগত জটিলতায়, আবার কখনো নিজেদের ব্যস্ততার জন্য থেমে ছিল কাজ। গতি কমে গেছিল বারবার। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়লেও, কেউ কেউ ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা হাল ছাড়েননি।
এত দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার পেছনের কারণ গুলোর মধ্যে প্রধান কারণ, পেনইয়া রিকগনিশন আর যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা খুবই কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করে। প্রতিবার সামান্য ভুলের জন্যেও তাদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সংশোধন করে সমাধানে পৌঁছাতে হয়েছে। এমনকি পেনইয়ার নামকরণ এবং লোগো ঠিক করতেও দু’মাস এর বেশি সময় লেগে যায়। এই আড়াই বছরে বার্সেলোনা ক্লাবটিকে অনেক ঘটনাবহুল সময় পার করতে হয়৷ মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা কারণে চাপে ছিল বার্সার কর্তাব্যক্তিরা। করোনা মহামারীতে সব বন্ধ হয়ে গেলে আয় কমতে থাকে ক্লাবটির। বাড়তে থাকে ঋণ। ক্লাব প্রেসিডেন্ট বার্তোমেউ এর বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ, ক্লাব ক্যাপ্টেন লিওনেল মেসির ক্লাব ত্যাগের ইচ্ছা আর বার্তোমেউএর পদত্যাগ দাবিতে টালমাটাল অবস্থা হয় বার্সেলোনার। ক্লাব প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের মাধ্যমে স্থিতিশীল হয় পরিস্থিতি। নতুন প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন জোয়ান লাপোর্তা৷ এদিকে বাংলাদেশ থেকে অফিসিয়াল রিকগনিশন পাওয়ার কার্যক্রম চলতে থাকে। দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টার পর ৮ই জুলাই, ২০২১ বার্সার ওয়ার্ল্ড পেনইয়া ফেডারেশনে পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রথম বার্সেলোনা ফ্যানবেস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এই গ্রুপ কে। একই দিনে ফিলিস্তিন, ভারত, রোমানিয়া সহ বিভিন্ন দেশের ১৮টি ফ্যানবেস কে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় স্প্যানিশ ক্লাবটি। এর মাধ্যমে বার্সার বিভিন্ন অফিসিয়াল সুবিধা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশী বার্সা ভক্তরা। বাংলাদেশে বসে বার্সেলোনার অফিসিয়াল মেম্বারশিপ পাওয়ার মত সুবিধা পাওয়ার পথ খুলে গেল বাংলাদেশীদের জন্য। এর আগে রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বাংলাদেশী সমর্থক দের গ্রুপও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছিল নিজ নিজ ক্লাব থেকে।
ক্লাব নীতিমালা অনুযায়ী পেনইয়ার অফিশিয়াল নামকরণ করা হয়েছে ‘পেনইয়া ব্লাউগ্রানা বাংলা বার্সা ডি ঢাকা’। পেজের পক্ষ থেকে ফটো ফ্রেম বানানো হয়েছে ভক্তদের জন্য। পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পেনইয়ার কার্যক্রম সচল রাখার মাধ্যমে এফসি বার্সেলোনা ও তার বাংলাদেশি ভক্তদের মধ্যকার এ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।