:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ বছরে বাংলাদেশের ঋণ আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭ দশমিক শূন্য ১২ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭১২ কোটি ডলার।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেবট রিপোর্ট বা বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩-এর তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে যা ছিল ৯১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ১৪৭ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি।
২০২১ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ছিল ৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে সম্মিলিতভাবে এসব দেশের বিদেশি ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৫ সালের পর ২০২২ সালে এই প্রথম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে। ২০২২ সালে এসব দেশ ঋণ পেয়েছে ১৮৫ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার; ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫৬ বিলিয়ন বা ৫৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই এক বছরে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে ৬৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় প্রকৃতির ঋণই কমেছে।
২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণ ছিল ২৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (২ হাজার ৬৫২ কোটি) ডলার; ২০১৮ সালে যা ৫৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন (৫ হাজার ৭১২ কোটি) ডলার ও ২০২২ সালে তা ৯৭ বিলিয়ন (৯ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়।
২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতি প্রকৃতি বদলে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশের ঋণ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। তবে বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয় আনুপাতিক হারে না বাড়লে ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এসব দেশের সরকারি ও বেসরকারি বন্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে যাওয়ার বিষয়টিকে। বলা হয়েছে, বন্ড কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এসব দেশ থেকে ১৮৯ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন।
মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বের সব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদহার বেড়েছে। সে জন্য নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ করার ব্যয় বেড়েছে।
ঋণের প্রবাহ নেতিবাচক হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এসব দেশের ঋণপ্রাপ্তির তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন মুদ্রার সাপেক্ষে মার্কিন ডলারের দরবৃদ্ধির কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যেসব দেশ ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রায় ঋণ নিয়েছে, তাদের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হলে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়।
সামগ্রিকভাবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণ কমে গেলেও যারা আইডিএ (বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) থেকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য, সেই দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এই দেশগুলোর মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই সময়ে বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়া। এই পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক তা পূরণের চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে ১১৫ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, তার অর্ধেক দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।