:: সাবিহা তাবাসসুম ::
হাসপাতাল সফরের ২৩তম দিন, দুপুর ২:৩০-২:৪০, তুমি সবাইকে ডেকেছিলে কি যেন বলবে। আইসিইউতে একজনের বেশি অনুমতি নেই ভেবে প্রথমেই আমি গেলাম; হতবাকের মত তাকিয়ে আছি। তুমি সব বর্ননা করতে লাগলে কখন কিভাবে কোথায় গোসল দেওয়াবো, কোথায় দাফন করাবো । তোমাকে থামিয়ে হাত বুলিয়ে বলছিলাম যে এসব বলতে হবেনা আমি জানি, কেবল দোয়া পরতে থাকো, আজই ঠিক হয়ে যাবে সব। তুমি তাও বলে যাচ্ছিলে সব আর আম্মু,আপু ভাইকে ডাকতে বললে।
তখনও জানিনা ওটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা ছিল। আর কিছু বলবে কিনা জানতে চাইলে তুমি ইশারাতে কথোপকথন শেষ করলে, কারন খানিক পরেই রক্ত কাশি আসতে শুরু হলো।
আমি এরপরও শেষ মুহূর্ত অবদি চেয়েছি, আশা করছিলাম তুমি ফিরবে। বিকেল ৪টায়, তোমার পারমিশান নিয়েই ডক্টর ভেন্টিলেশন এরপর লাইফ সাপোর্ট দেয়। সকালে সেই বনসই টিও আমি করেছি, আমাকে আল্লাহ্ এতটা পাথর হৃদয় কি করে দিলেন যে এশার সময় যখন ডক্টর আশা ছেড়ে দিলেন তখনও ভাবছি যে তুমি ফিরবে।
আল্লাহর সাথে নিজের জানের সাথে সওদা করেছি সেটাও মানতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু সেটা হয়তো অন্যায় বলেই তুমি আর বেশি সময় নেওনি। রাত শেষ হবার আগেই বিদায় নিয়ে গেলে উজ্জ্বল সুন্দর হাসি মুখে।
কিন্তু খুব আফসোস হয়, আরও কিছুটা সময় যদি থাকতাম তোমার কাছে, আরেকটু বেশি তোমাকে মন ভরে দেখে নিতে পারতাম, আরেকটু সময় ধরে তোমাকে ছুঁয়ে থাকতে পারতাম, হয়তো আরও কিছু বলতে আমাকে।
এই ১১ জুলাই পার করা খুব কষ্ট হয়ে যায় বাবা, দুই বছর চলে গেল আজ। কিন্তু তোমার শূন্যতা কেবল বাড়ছে বাবা।
ঐদিন হয়তো অনেক কথাই বাকি ছিল, আমরা না হয় পরের দেখায় সব কথা সেরে নিব। চিন্তা করোনা, শীঘ্রই দেখা হবে আবার। ততদিন ওপারে নিজের খেয়াল রেখো।
আর ততদিন তোমার কাপড়গুলোর ঘ্রান হয়ে থাক আমার অক্সিজেন।