:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়ে সপরিবারে হাজির হওয়া বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া পুলিশি নিরাপত্তায় রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসায় ফিরেছেন।
এমরান গ্রেফতার করা হবে না বলে সরকারের তরফ থেকে দূতাবাসকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে এ তথ্য জানালে তিনি বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দূতাবাসে অপেক্ষা করেছি। আমাকে গ্রেফতারের আশঙ্কা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। পরে পুলিশ এস্কট দিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে তিনি দূতাবাস প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর (এমরান আহম্মদ) স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ দূতাবাসের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন।
তবে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, দূতাবাসে আশ্রয় চাওয়ার বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার দূতাবাসে আশ্রয় চাওয়ার বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
দূতাবাসের সামনের ফুটপাথে ডিপ্লোমেটিক পুলিশ, এসপিবিএন, এপিবিএন, সিটিটিসি, থানা–পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দূতাবাসের বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদেরও সেখানে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
এমরান স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি মার্কিন দূতাবাসে আজকে পুরো পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য বসে আছি। বাইরে পুলিশ। আজকে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে…। আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে গত ৪-৫ দিন ধরে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার ভালোবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। স্রেফ ৩টা ব্যাগে এক কাপড়ে আমার ৩ মেয়েসহ কোনোক্রমে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে বসে আছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।’
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৬০ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলাচিঠির পক্ষে অবস্থান নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাতে তিনি সই করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়। যেখানে বিকেল ৪টার মধ্যে বিবৃতি সই করার কথা বলা হয়। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে সই করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সই করার সঙ্গে একমত নই। আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেত। এটা ওনাকে চাপে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে মনে হয়েছে। উনি বাংলাদেশের জন্যই যে শুধু সম্মান বয়ে এনেছেন তা কিন্তু নয়, উনি সারাবিশ্বের সম্পদ।’
এর পরদিন মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাঁকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি।’
এরপর গতকাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আইমন্ত্রী আনিসুল হক আজ সকালে এমরান আহম্মদকে বরখাস্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
শুক্রবার ডিএজি এমরানকে অব্যাহতি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর (জিপি/পিপি শাখা) অনুবিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসারস অর্ডার, ১৯৭২’ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’