:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
দীর্ঘ ১৪০ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
মানহানির অভিযোগে গোপালগঞ্জে করা এক মামলায় গত ১৮ এপ্রিল জামিন পেলেও জামিননামার মূল কপি কারাগারে না পৌঁছানোর কারণে ঈদের আগে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার জামিননামার মূল কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো হলে রিজভীকে মুক্তি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ জানান, রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ৫০টি মামলায় জামিন পান। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং কুমিল্লার আদালত থেকে এসব মামলায় জামিন পান। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশির ভাগ মামলায় নাশকতার অভিযোগ আনা হয়। সর্বশেষ মানহানির মামলায় গোপালগঞ্জের আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
দলের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী জেল গেটে রিজভীকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান।
কারা ফটকে রিজভীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ডা. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘গোটা দেশই এখন কারাগার। ছোট কারাগার থেকে এখন বৃহত্তর কারাগারে প্রবেশ করেছি। বর্তমানে মানুষের কোনো অধিকার নেই। ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। গণতন্ত্রের মুক্তি মিললেই সব অধিকার ফিরে আসবে।’
রিজভী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে রুহুল কবির রিজভীকে আটক করা হয়। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ কোথায় হবে, এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই ৭ ডিসেম্বর বিকেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন নিহত ও বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হন।
বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নয়াপল্টনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এই অভিযানে ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকেও পুলিশ আটক করে। এক মাসের বেশি সময় কারাভোগের পর গত ৯ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাস জামিনে মুক্তি পান। প্রায় পাঁচ মাস পর ৫০ মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেন রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরেরও দায়িত্বে রয়েছেন। আশির দশকে আন্দোলনের সময় রুহুল কবির রিজভী পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তখন দেশে ও পরে বিদেশে তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। এর পর থেকেই তার পেটের সমস্যা জটিল হয়ে আছে।
চিকিৎসকের পরামর্শে প্রায় ৩০ বছর ধরে রিজভী হাতের স্পর্শে খাবার খান না। খোলা পানি খেতে পারেন না। বোতলজাত পানি পান করতে হয়। মহামারি করোনাকালেও তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার মাস হাসপাতালে ছিলেন। এর আগে তার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে খুবই সতর্কভাবে জীবনযাপন করতে হয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভীকে।