:: ফেনী বুলবুল ::
এই এই কি করেন? কি করেন? অফিস সহকারী ব্রজেনের চিৎকার। চিৎকার শুনে কি হয়েছে দেখতে উঠে গেলেন ম্যানেজার।গিয়ে দেখলেন বুড়া লোকটা টয়লেটের বাহিরে বেসিনের সামনেই দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করছেন।ব্রজেনকে থামিয়ে ম্যানেজার বুড়াকে বললেন প্রস্রাব শেষ করতে। প্রস্রাব শেষে ম্যানেজারের চেম্বারে বসে লিকার চায়ের সাথে লেক্সাস বিস্কুট খাচ্ছেন আর খোশ গল্প করছেন বুড়া। ম্যানেজার সাহেব বুঝলেন এখন আর প্রস্রাব ধরে রাখতে পারিনা, মাঝে মাঝে বিছানায়ও করে ফেলি। তাতে মিসেস খুউব রাগ করে, বলে এইগুলো পরিস্কার করার রোদে শুকাবার শক্তি এখন তার নাই। আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব বলেনতো কিভাবে পারবে তারওতো বয়স হয়েছে। তবু করে তবে সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করে। দীর্ঘ গল্পগুজব করে দু’জনের মাঝে বেশ আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে উঠলো। বুড়াকে ম্যানেজার নিজেই রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে রিক্সা ধরায়ে দিলেন। চেম্বারে ফিরে ম্যানেজার দু’চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছাড়লেন আর মনে মনে গ্রামে থাকা বাবা মায়ের কথা ভাবলেন, তার বাবাও ঠিক এই বয়সেরই।
ভদ্রলোকের নাম শাহজাহান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, আনবিক কমিশনে চাকুরি করতেন। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক, ছেলে মেয়েরা সকলে উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র মেয়ে স্বামীর সাথে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বড় ছেলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি করতে পরিবারসহ আমেরিকায় গিয়ে আর ফিরেননি। ছোটছেলে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার ডিওএইচএসে অফিস নিয়ে সফটওয়্যার ব্যবসা করে। বুড়ার সারাজীবনের আয় দিয়ে গড়া মিরপুর দুই নাম্বারের বাড়িতে স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে বাবা মায়ের সাথেই থাকে ছোটছেলে।ছেলে বৌ নাতনি নিয়ে বুড়া বুড়ির দিনগুলো হাসি আনন্দে ভালোই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ছেলে বৌ এর কেন জানি মনে হলো শ্বশুর শাশুড়ির সাথে থাকলে নিজের সংসার বলে তার মনে হয় না তাই সে স্বামী সন্তান সহ আলাদা করে নিজের মতো করে সংসার করতে চায়। কিন্তু ছেলে কোনভাবেই বুড়া বাবা মা-কে ফেলে আলাদা থাকতে রাজি নয়। এই বিরোধে ঝগড়াঝাঁটি করে ছয় মাস ধরে বৌমা বাপের বাড়ি গিয়ে থাকছে।ছেলেটা বারবার গিয়েও কোনভাবে বৌকে ম্যানেজ করতে পারছেনা। বুড়া বুড়ি অনেক পেরেশান ছেলের জন্য, তাছাড়া ছোট্ট নাতনিটাকে খুব মিস করছে।ছেলের সুখের জন্য কিছু একটা করতেই হবে এখন কি করবে সেটা নিয়েই দুজন সারাক্ষণ ভাবছে। অবশেষে বুড়া বুড়ি ঠিক করলো তারা আলাদা থাকবে। যে ছেলে মেয়েদের সুখ শান্তির কথা ভেবে সারা জীবন নিজেদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন তাদের সুখের জন্য এটা তারা অবশ্যই করবেন। জীবনের বাকি আর কয়টা দিন এমনি এমনিই কেটে যাবে।তারা জানেন ছেলে রাজি হবেনা তাই ছেলেকে রাজি করাতে বুদ্ধি খাটিয়ে অন্যভাবে কাজটা করার পরিকল্পনা করলেন।
একরাতে খেতে বসে বুড়া ছেলেকে বললেন- কেরাণীগন্জের জায়গাটার কথা জানিসতো! মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।এখনতো ঐ জায়গার অনেক দাম। খালি পড়ে আছে বহু বছর ধরে। জায়গার দাম যেভাবে বেড়েই চলছে তাতে দুষ্ট লোকজনের নজর পড়তে পারে।তাই ঠিক করেছি আমার ব্যাংকে কিছু টাকা আছে সেটা দিয়ে ওখানে একটা ঘর তুলবো যাতে জায়গা বেদখল হতে না পারে।বুড়ার কথা শুনে ছেলে বললো কিন্তু বাবা আমি অফিস নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত থাকতে হয় যে আমিতো ওখানে সময় দিতে পারবো না।বুড়া বললেন তোকে কিচ্ছু করতে হবেনা আমিই দেখবো সব। ছেলে বলে এই বয়সে তুমি এসব করতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে যাবা। বুড়া বললেন কিছু হবেনা বরং কাজে কর্মে থাকলে আমার শরীরটা আরো ভালো থাকবে।
কয়েকদিনের মধ্যে বুড়া কেরাণীগন্জের জায়গায় দুই রুমের একটা টিনশেড ঘর তোলার কাজে হাত দিলেন।বাথরুম এটাচড একটা রুম থাকার জন্য আর একটা রুম ডাইনিং আর কিচেন রুম হিসাবে ব্যবহারের জন্য। বুড়া মিস্ত্রীকে অহর্নিশ তাড়া দিতে থাকলেন কাজ দ্রুত করার জন্য। কাজ মোটামুটি শেষের দিকে আসলে বুড়া ছেলেকে বললো প্রতিদিন আসা যাওয়ায় সত্যি কষ্ট হচ্ছে, ভাবছি বাকি কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার আম্মাকে নিয়ে সেখানেই থাকবো।ছেলে শুনে বলে আরে বাবা তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে, সেখানে তোমারা কিভাবে থাকবে? বুড়া বলে আরে পাগল হাঁটা চলা ঘোরাফিরা করার জন্য কি সুন্দর জায়গা সেখানে, খোলামেলা গাছগাছালিতে ঘেরা।ওখানে থাকলে বরং আমাদের শরীরটা ভালো থাকবে। কাজের লোকেরও কোন অভাব নাই। তাছাড়া সম্পুর্ন কাজ শেষ হলেতো আমরা একটা কেয়ারটেকার ঠিক করে রেখে তোদের কাছেই ফেরত চলে আসবো। তুই বরং বৌমাকে বুঝিয়ে নিয়ে আয়।
দুইদিন অপেক্ষা করে তিনদিনের দিন ছেলে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে বুড়া বুড়ি খুব সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে ফলফলাদি কিনলেন, মিষ্টি দোকান থেকে মিষ্টি আর প্রিঙল চিপস কিনে একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলেন উত্তরা বিয়াই বাড়ি। কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুললো তাদের বৌমা-ই, শ্বশুর শ্বাশুড়ীকে দেখে যেন ভুত দেখলো বৌমা।কিন্তু বুড়া বুড়ি বৌমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আর পরিটা কোথায় পরিটা কোথায় বলে নাতনিকে খুঁজতে থাকলেন। নাতনি নানির হাত ধরে দাদা দাদির সামনে আসলেও তেমন কোন উচ্ছ্বাসিত নয়, বরং কেমন জানি দুরে দুরেই থাকছে। দাদী বললো পরিতো আমাদেরকে অনেকদিন না দেখে ভুলেই গেছে। যাহোক বুড়া বুড়ি বিয়াই বিয়াইন আর বৌমা এর সাথে আলাপ করে তাদের কেরাণীগন্জ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেন। আরো বললেন বৌমা-তো অনেকদিন বেড়ালো এখন ওরাওতো ওদের মতো করে ঘর সংসার সাজাতে হবে, তাই বৌমাকে নিয়ে যেতে এসেছেন। বিয়াইন সাহেবা বললো হুম তাতো করতেই হবে। বিকালের চা খেয়ে বুড়া বুড়ি বৌমা আর নাতনিকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। ছেলে রাতে বাসায় ফিরে বৌ বাচ্চাকে দেখতো কপালে চোখ। পরের দিন সকালেই বুড়া বুড়ি তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রওয়ানা দিচ্ছেন, আসলে তারা আগে থেকেই সব গুছিয়েই রাখছিলেন। ছেলে বললো আজকেই যেতে হবে কেন, আমি না হয় শুক্রবারে তোমাদের পৌঁছায়ে দিয়ে আসবো। বুড়া বললো আরে পাগল আমরা না থাকলে মিস্ত্রী সব উল্টাপাল্টা করে নষ্ট করে দিবে। বুড়ি বললো তুই না হয় শুক্রবারে এসে দেখে যাস। নাতনিকে বৌমাকে আদর করে বুড়া বুড়ি রওয়ানা করলো।বুড়া বুড়ি যেমন গাড়িটা বাড়ি পার হয়ে আসার পরপরই ডুকরে কেঁদে উঠলেন তেমনি ছেলেটাও কেন জানি পথের দিকে আনমনে চেয়ে থাকলো, আর তার দুই চোখের কোনা ভিজে উঠলো।
বুড়া বুড়ি এখন কেরাণীগন্জের ওই টিনশেডের বাড়িতেই থাকেন।বিদ্যুৎ-পানিসহ সকল ইউটিলিটি সংযোগ নেয়ার পর বুড়ার কাছে থাকা অবশিষ্ট টাকা স্থানীয় বাজারে একটি ব্যাংকে এফডিআর করে রাখেন। পেনশনের টাকা আর এফডিআর এর লাভের টাকা থেকে যে টাকা আসে তার বেশিরভাগই চলে যায় দুজনের ঔষধের খরচে, বাকি টাকায় কোনভাবে তাদের সংসার চলে।ছেলেরা টাকা দিতে চায় কিন্তু বুড়া নেয় না, তাদেরকে জানায় তার কাছে যে টাকা আছে তাতে তাদের ভালোভাবে চলে।বিগত কিছুদিন ধরে বুড়ার শরীরটা ভালো নেই। ছোট ছেলেটা প্রথম প্রথম প্রতিমাসে একবার করে দেখতে আসতো। এখন মাসে মাসে আসতে পারেনা তার ব্যাস্ততা বেড়েছ।বন্ধের দিন নাতনির ড্রয়িং কোচিং এইসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকে।
মাসের এক তারিখ বুড়া ব্যাংকে গেছেন, লাভের টাকা উঠায়ে ঔষধ নিয়ে আসবেন তাই। দুইজনের সারা মাসের ঔষধ সবসময় একসাথে কিনেন তিনি। আজ ব্যাংক থেকে ফিরে মুখটা ঘোমড়া করে ঘরে ঢুকলো বুড়া।চেহারা এমন কেন? শরীর খারাপ করছে কিনা? কি হয়েছে? বুড়ি প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু বুড়া নিশ্চুপ।পরে বুড়ি ঔষধের পোটলাটা রাখতে গিয়ে দেখলেন ঔষধ অন্য মাসের থেকে কম।ঔষধ কম কেন জিজ্ঞাস করলে বুড়া জানায় ডাক্তারের সাথে দেখা করে এলাম, ডাক্তার ঔষধ কমায়ে দিয়েছে।এখন থেকে আমার ঔষধ একবেলা, শুধু রাতে খেলেই হবে, তোমার আগের মতোই চলবে।
এক তরিখে ব্যাংক থেকে আসার পর থেকে গত এক সপ্তাহ ধরেই বুড়া কেমন জানি থমকে আছেন। আজকে দুপুরের দিকে বিদ্যুত বিলটা যখন হাতে পেলেন তখনই বিলটা দেখে বুড়া উত্তেজিত হয়ে গেলেন। প্রতি মাসে বিদ্যুত বিল আসে নয়শত টাকার মতো, এই মাসে বিল আসলো চুয়াল্লিশ শত প্লাস।বাসায় প্রতি মাসে যেসব বৈদ্যুতিক জিনিস চলতো গতমাসেও তাই-ই চলেছে তাহলে এত বিল এলো কেন? তারপরই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। বুড়ির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে জড়ো হল, সবাই ধরে বুড়াকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেল।কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ কোনভাবেই ভর্তী করবে না, তাদের এককথা করোনা টেস্ট না করে ভর্তী করানো যাবেনা। এলাকার এক তরুণের সহযোগীতায় বুড়াকে রিক্সা ভ্যানে শোয়ায়ে বুড়ি এই হাসপাতাল ঐ হাসপাতাল দৌড়াতে লাগলেন কিন্তু কোথায়ও কোন হাসপাতালে তাদের ঠাই হলোনা। হাসপাতালের সামনেই রিক্সা ভ্যানে বুড়াকে নিয়ে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন বুড়ি আর তরুন ছেলেটি হাসপাতালের লোকজনকে হাতে পায়ে ধরে বুঝানোর চেষ্টা করছে বুড়ার করোনা নয় স্ট্রোক ধরনের কিছু হয়েছে;কিন্তু কে শুনে কার কথা। ঐ হাসপাতালের সামনে দিয়েই ম্যানেজার সাহেব পায়ে হেঁটে কোথায়ও যাচ্ছিলেন। বুড়ির কান্না দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে রিক্সা ভ্যানে বুড়াকে দেখে তিনি চমকে উঠলেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে তরুণ ছেলেটি বিস্তারিত জানায়। ম্যানেজার বুড়ি কে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার ছোট ছেলেকে খবর দিয়েছেন ? বুড়ি বললো ছোটছেলে বৌ-বাচ্চা নিয়ে কানাড়া বেড়াতে গিয়ে করোনার কারনে আটকা পড়েছে। ম্যানেজার পকেটের মোবাইল বের করে কার সাথে যেন কথা বললেন এবং ভ্যান চালককে ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট হাসপাতালের নাম বলে সেদিকে নিয়ে যেতে বললেন। অন্য একটি রিক্সা নিয়ে তিনিও রওয়ানা হলেন। হাসপাতালে ম্যানেজারের পরিচিত লোক থাকায় নেয়ার সাথে সাথে বুড়াকে দ্রুত ইমার্জেন্সী ইউনিটে নিয়ে গেল।দ্রুত ঔষধ এনে তৎক্ষণিক ইনজেকশন পুশ করলো, অন্যান্য মেশিনারিজ সেট করে বুড়ার চিকিৎসা শুরু করলো। বুড়ি আসার সময় বুদ্ধি করে বুড়ার প্রেসক্রিপশনের ফাইলটা নিয়ে আসাতে ডাক্তার সেগুলো সব দেখলেন। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনগুলো দেখে বললেন ঔষধতো ঠিকই আছে, তারপর বুড়িকে জিজ্ঞাস করলেন বুড়া নিয়ম মেনে ঔষধ খেতেন কিনা। বুড়ি জানালেন ঔষধতো নিয়মিতই খেতো তবে সপ্তাহখানেক আগে ডাক্তার দেখায় এসে জানিয়েছিল ঔষধ তিনবেলার পরিবর্তে শুধু রাতে খেলেই হবে আর তখন থেকে শুধু রাতেই খেতেন। ডাক্তার বললেন এমনতো কোন প্রেসক্রিপশন ফাইলে দেখলাম না তাছাড়া উনার যে সমস্যা আর বয়স তাতে ঔষধ পরিবর্তনের প্রশ্নই আসেনা বরং যতদিন বাঁচবেন ততদিনই তিনবেলার ঔষধ যেভাবে দেয়া আছে সেভাবেই খেতে হবে।ম্যানেজার সাহেবকে ডাক্তার জানালেন বুড়ার ম্যাসিভ স্ট্রোক হয়েছে কারন তিনি ঔষধ খাওয়ায় অনিয়ম করেছেন, তিনবেলায় ঔষধ না খেয়ে একবেলা খেয়েছেন। উনার অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ বারো ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না, তাছাড়া স্ট্রোক করার পর হাসপাতালে আনতেও অনেক দেরী করে ফেলেছেন। ম্যানেজার দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।ঠিক দিন দশেক আগে মাসের এক তারিখে বুড়া ব্যাংকে এসেছিলেন আর যখন শুনলেন ব্যাংক আমানতের লাভের হার ছয় আর ঋণের সুদের হার নয় কার্যকর হয়ে গেছে তখনই তার চেহারা ভীষণ বিষন্নতায় ছেয়ে গেছিলো আর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন এই লাভের টাকাটাইতো একমাত্র আয়। আমরা বাবা ভাত খেয়ে বাঁচিনা, বাঁচি ঔষধ খেয়ে। এখন যে টাকা পাবো তাতে ঔষধ না খেয়েই মরতে হবে। হঠাৎ ডাক্তারের উচ্চস্বরে ম্যানেজারের সম্বিত ফিরলো দেখলেন কয়েকজন ডাক্তার আর নার্স অস্থির হয়ে এটা সেটা করছেন, আবার ইনজেকশন পুশ করছন। অক্সিজেন ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা দেখছেন। একজন তুলা দিয়ে মুছে দিচ্ছেন বুড়ার কান দিয়ে গড়িয়ে পড়া কয়েক ফোটা রক্ত। এইসব দেখতে দেখতে ম্যানেজারের চোখটা ততক্ষনে ইলেক্ট্রকার্ডিওগ্রামের মনিটরে আঁটকে গেল, তিনি দেখলেন একে একে তিনটা লাইনই সরল রেখায় রূপান্তরিত হয়ে গেলো। বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল আর ব্যাংকের নয় ছয়ের খেলায় সাঙ হলো শাহজাহান মিয়ার জীবন খেলা।