:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার কলেজের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর সই করা অফিস আদেশে বলা হয়, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ জন্য শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং এ বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওই শিক্ষককে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
অবশ্য ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী, তা অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়নি।
কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করেছে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। ইতিমধ্যে এ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শিগগির কলেজের পরিচালনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মুরাদ হোসেন সরকার বলেন, দুই বছর আগের অভিযোগ হঠাৎ করে কেন সামনে আনা হলো? এতেই বোঝা যায় এ ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক।
জানা যায়, এক্সট্রা ক্লাসের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে, ‘বাবার মতো’ আদর করছেন- এমন কথা শুনিয়ে তিনি তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। শ্রেণিকক্ষে নোংরা জোকস শুনিয়ে ‘ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন রিড’ করে মুরাদ ঠিক করতেন কাকে টার্গেট করবেন। এভাবে প্রায় এক দশক ধরে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের প্রাইভেট কোচিংয়ে নিয়ে বিকৃত যৌন লালসা মেটান তিনি। তার এমন কুপ্রবৃত্তির শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে।
যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিচার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মুরাদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। ওই অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও নানা অজুহাতে সেই প্রতিবেদন আজও জমা পড়েনি। এমনকি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, ভুক্তভোগীদের ‘ইমোশনাল ব্লাকমেইল’ করা ও হুমকি-ধমকি দিয়ে মুখ বন্ধের চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে অভিযুক্ত শিক্ষক, তদন্ত কমিটির সদস্য এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু হলে একের পর এক ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে থাকেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। যাদের সবাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার ডে-শিফটের দুজন শিক্ষার্থী শাখার শিফটপ্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কক্ষে আরও কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে কাঁদতে কাঁদতে শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করছে। একজন শিক্ষার্থী বলে, ‘আমি চাই না আমার মা-বাবা এটা জানুক। ওনাকে (শিক্ষক মুরাদ) আমার খুব ভয় লাগে।’
এ সময় সাবনাজ সোনিয়া কামাল চেয়ার থেকে উঠে এসে শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। ওই সময় নানা বাস্তবতার কথা তুলে ধরে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচারের জন্য তাদের কাছে কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের লিখিত অভিযোগ এবং আরও দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিডিও নিয়ে অনুসন্ধানে নামলে মুরাদের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে থাকে। যে দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিডিও আগেই প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে এসেছিল, তারা এবং তাদের অভিভাবকরা ঘটনার পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন এই প্রতিবেদকের কাছেও। এক অভিভাবক তার সন্তানের সঙ্গে ঘটা যৌন নিপীড়নের বর্ণনায় বলেন, তার মেয়েকে ‘বাবার মতো’ আদর করেছেন এ কথা বলে স্পর্শ করতে শুরু করেন মুরাদ হোসেন। প্রথমে তার মেয়ে এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও পরে যৌন হয়রানির বিষয়টি বুঝতে পারে। কোচিংয়ে নিয়ে গিয়ে কৌশলে মুরাদ যৌন নির্যাতন শুরু করেন। তারপর সামাজিকতা এবং পাপের ভয় দেখিয়ে এ কথা কাউকে না বলার জন্য রাজি করানো হয় তার মেয়েকে। কিন্তু অন্তর্দহনে ভুগতে ভুগতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আরও এক শিক্ষার্থীর (তার বান্ধবী) সঙ্গে শিক্ষক মুরাদের অন্তরঙ্গতার আলামত পেয়ে তার মেয়ে বুঝতে পারে তার সঙ্গে যা হচ্ছে, সেটি আরও কারও কারও সঙ্গে হচ্ছে। সে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে। তখন তারা জানতে পারে আরও অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও একই কৌশলে অন্তরঙ্গ হয়েছেন তাদের এই শিক্ষক।
এই অভিভাবক আরও জানান, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে তার মেয়ে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এমনকি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছে। তিনি আরও জানান, শিক্ষক মুরাদ ভুক্তভোগীকে অ্যাডাল্ট জোকস ও পর্নো ভিডিও দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতেন। ভয়ভীতির কারণে তার মেয়ে এতদিন সব নীরবে সহ্য করেছে। যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মুরাদের যৌন নিপীড়নের শিকার অন্য এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন সে প্রথমবার মুরাদ হোসেনের কোচিংয়ে পড়তে যায়। সে সময় থেকেই মুরাদ নিজেকে ‘বাবার মতো’ বলে দাবি করতেন। এভাবে তিনি কৌশলে তার এবং তার অভিভাবকের আস্থা অর্জন করেন। পরবর্তীতে আদর করার ছলে বিশেষ অঙ্গে স্পর্শ করা শুরু করেন। এভাবে অন্তরঙ্গ হওয়া শুরু করলেও ভুক্তভোগী শিশুকে মুরাদ বোঝাতে থাকেন যে, এগুলো ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা। আরও একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই শিক্ষার্থীকে। অভিযোগ জানাতে গিয়ে এই শিক্ষার্থীর মা বলেন, তার মেয়ে সাহস করে এই ঘটনা তাকে জানালে তিনি মেয়েকে মুরাদের কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু অন্যরা তাদের অভিভাবককে জানাতে সাহস না করায় এতদিন সব ঘটনাই চাপা পড়ে ছিল।
অষ্টম শ্রেণির আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে স্কুলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন শিক্ষক মুরাদ। জন্মদিন ও বিশেষ দিবসে অথবা কোনো কিছুর ছুতায় নানা উপহার সামগ্রী দিতেন তাকে। তার অভিভাবকদেরও জানান, তিনি তার বাবার মতো। মেয়েটির পড়াশোনার দিকে বিশেষ যত্ন নেওয়ার মধ্য দিয়ে অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করেন মুরাদ। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিযুক্ত মুরাদের কোচিংয়ে গণিত ও বিজ্ঞান পড়তে যেত মেয়েটি। ওই সময়ই দুটি ব্যাচের বিরতি চলাকালে কিংবা গণিতের এক্সট্রা কেয়ার নেওয়ার কথা বলে তাকে বসিয়ে রেখে ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ তৈরি করেন মুরাদ। প্রতিবার যৌন হয়রানির পর তিনি বলতেন, ‘এটাই শেষবার, এরপর আর করবে না।’ এমনকি ভুল স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া পড়তেন এবং মেয়েটিকেও ওই দোয়া পড়াতেন মুরাদ। হজে গিয়ে ওই মেয়ের (ভুক্তভোগী) জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন বলেও জানাতেন মুরাদ। নিজেকে ‘বাবার মতো’ দাবি করে পরক্ষণেই মুরাদ তাকে বলতেন, বয়সের ফারাক না থাকলে তাকে তিনি বিয়ে করতেন। শুরুতে বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে যৌন হয়রানির শিকার এই শিক্ষার্থী। বিকৃতমনস্ক এই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সে।
এই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ভালো-মন্দ বুঝে ওঠার আগেই তার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে অ্যাবিউজ করা হয়েছে। যখন সে বুঝতে শুরু করল তখন মুরাদ তার মেয়েকে বোঝান, বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেরই সম্মানহানি হবে। এছাড়া একাডেমিক ক্ষতির ভয়ও দেখানো হয় তার মেয়েকে। এমনকি ঘটনাটি জেনে যাওয়ার পর তাকেও (অভিভাবক) কনভিন্স করার চেষ্টা করেন মুরাদ।
সম্প্রতি এসব ঘটনা নিয়ে কানাঘুষা হতে থাকলে তার বাসায় আসেন অভিযুক্ত মুরাদ। এই শিক্ষককে অত্যন্ত প্রভাবশালী উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নও রাখেন এই অভিভাবক।
এসএসসি ২০২০ ব্যাচের সাবেক এক শিক্ষার্থী গুরুতর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় কোচিং ক্লাস শেষে এক্সট্রা সাপোর্ট দেওয়ার কথা বলে তাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখতেন। এরপর ক্লাসরুম নির্জন হলে তাকেও ‘বাবার মতো’ আদর করছেন জানিয়ে যৌন হয়রানি করতেন। এই প্রতিবেদকের কাছে সেসব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে তখন আদর ও যৌনতার তফাত বুঝতে দেরি হলেও পরে ঠিকই তিনি ব্যাপারটা ধরতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে সব সহ্য করে যেতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর যখন এই শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের কাহিনী সামনে আসতে শুরু করেছে, তখন তিনি নিজেও মুখ খুলতে সাহস করেছেন। এই শিক্ষার্থী জানান, সুন্দর ব্যবহার আর ধর্মীয় মূল্যবোধের লোকদেখানো চর্চার মাধ্যমে শিক্ষক মুরাদ হোসেন প্রথমে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের আস্থা অর্জন করেন। এমনকি ‘মা’ বলেও সম্বোধন করেন। নিজেকে ‘বাবার মতো’ দাবি করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তার বিকৃত যৌন লিপ্সা প্রকাশ পেতে শুরু করে। ঠিক যেমনটা সবার অভিযোগে এসেছে। আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘ভিকারুননিসায় আরও পরিমল আছে।’
ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীর মা জানান, শিক্ষক মুরাদ যে এমন কাজ করতে পারেন, সেটা তার কল্পনারও বাইরে ছিল। মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটেছে জানার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এছাড়া বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীও একই অভিযোগ তুলেছেন এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখাসংলগ্ন সিয়াম আইডিয়াল স্কুলের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে দুটি ভবন পার হয়ে অন্ধকার গলি ধরে এগোলে মিলবে অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদের কোচিং সেন্টারের সিঁড়ি। ওই ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থীদের পড়ান তিনি। এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লে ভেতরে থাকলেও সাড়া দেননি মুরাদ হোসেন। জানা যায়, সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেকে আড়াল করেন তিনি।
এর আগে ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে এবং প্রত্যাশা কোচিং সেন্টারসহ (বর্তমানে রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজ) কয়েকটি স্থানে পড়িয়েছেন অভিযুক্ত মুরাদ। এসব জায়গা থেকেও তার নামে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুরাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি দেখা করেননি। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো বিষয়টিকে তুচ্ছ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। আবারও জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জানাবেন। এ সময় বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি তিলকে তাল না বানানোর অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ব্যস্ততার কারণে তিনি অভিযোগপত্র পড়েননি। তবে কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি অভিযোগপত্র কিছুটা পড়েছেন বলে স্বীকার করেন। তদন্তের বিষয়েও কথা বলেন। কিন্তু কিছু সময় পর অধ্যক্ষ নিজেই ফোন করে বলেন, কোনো অভিযোগের প্রমাণ বা ভুক্তভোগীর স্বীকারোক্তি পেলে যেন তাকে আগে জানানো হয়।
ভুক্তভোগী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ তুলেছেন যে, অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
দুই সপ্তাহ পার হলেও তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করছে না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা একাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া, ফোন করে অহেতুক জেরা করা, মানসিকভাবে চাপে রাখাসহ নানা ব্যস্ততার অজুহাত দেখাচ্ছেন কমিটির সদস্যরা। তদন্ত কমিটির সদস্য প্রভাষক ফারহানা খানমের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ বেশি করেছেন ভুক্তভোগী অভিভাবকরা। একাধিক কল রেকর্ডেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। একটি কল রেকর্ডে শোনা যায়, অভিযুক্ত মুরাদ হোসেনের বরাত দিয়ে ফারহানা খানম একজন অভিভাবককে বলছেনÑ ‘এটি শিক্ষকদের টিউশন দ্বন্দ্ব।’ দীর্ঘ সেসব ফোনালাপে যৌন নিপীড়নের প্রসঙ্গই তোলা হয়নি। বরং অভিভাবকরাই তাকে (ফারহানা) তাদের মূল অভিযোগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। একপর্যায়ে ফারহানা খানম এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করেন, এসব কল যেন রেকর্ড করা না হয়। এ অবস্থায় আস্থা হারিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে অস্বাভাবিক কালক্ষেপণের কারণ জানতে ফারহানা খানমকে কল করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে কথা বলার সুযোগ দিতে চাননি। একাধিকবার বলেন, ‘তিনি ব্যস্ত আছেন, বাইরে আছেন, ফ্রি হয়ে কল করবেন।’
যৌন নিপীড়নে অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত বুধবার জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, তদন্তনাধীন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলতে চান না।
২০১১ সালে একটি সাড়া জাগানো ঘটনা ছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ। ওই বছরের ২৮ মে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৫ জুলাই তার বাবা বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরিমলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় পরিমলকে ৭ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর ধর্ষণের দায়ে শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আলোচিত ওই ঘটনার প্রায় এক যুগের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন আরেক শিক্ষক মুরাদ হোসেন। ভুক্তভোগীদের ভাষায়, পরিমলের চেয়ে মুরাদ আরও অনেক বেশি ভয়ংকর। সে এক-দুজন নয়, বহু মেয়ের জীবন দুর্বিষহ করে দিয়েছে।