:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে শুক্রবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, আজ পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা রয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আজকের এসব পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য রয়েছে, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া এর মধ্য দিয়ে যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের প্রতি সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তারও প্রতিফলন ঘটছে।’
ম্যাথু মিলার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং বিশ্বব্যাপী অগ্রসর গণতন্ত্রকামীদের জন্য আমাদের আজকের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সহযোগিতা কার্যক্রমের অংশ।’
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৪ মে নতুন একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে বিবৃতি দিয়ে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। একই সঙ্গে ব্লিঙ্কেন এ-সংক্রান্ত একটি টুইটও করেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচনে অনিয়ম, জালিয়াতি, ভোট কারচুপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে কর্মরত বা সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারি দল বা বিরোধী দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্য।
বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আজ আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২ (এ) (৩) (সি) (“৩ সি”)-এর অধীনে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে—ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে বাধা দেওয়া এবং নানা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন জানাতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
এ ছাড়া এক টুইটে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এই নীতি অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, তবে জড়িতদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।’
এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে র্যাব এবং এর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।