:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
সৌদি আরব ও ইরান নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ‘সম্মত হয়েছে’। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে শুক্রবার উইয়ন নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
একটি যৌথ বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, ‘নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দুই মাসের মধ্যে দূতাবাস ও মিশন চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।’
তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাত বছর আগে শুরু হওয়া দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক উপসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। তাদের এই সম্পর্ক ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে ইন্ধন জুগিয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বেইজিংয়ে গোপন বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকের চার দিন পর দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেওয়া হলো। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলী শামখানি এবং সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ বিন মোহাম্মদ আল-আইবান।
ইরান, সৌদি আরব ও চীনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেহরান ও রিয়াদ ‘তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করতে এবং দুই মাসের বেশি সময়ের মধ্যে তাদের দূতাবাস ও মিশন পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। চুক্তিতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার স্বীকৃতি রয়েছে।’
দুই দেশের কর্মকর্তারা ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সক্রিয় করতেও সম্মত হয়েছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগের আরেকটি চুক্তিও সক্রিয় করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটির বিষয়ে সচেতন। ইয়েমেনে যুদ্ধের অবসান এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করার জন্য যেকোনো প্রচেষ্টাকে তারা স্বাগত জানায়।
২০১৬ সাল থেকে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ রয়েছে। তবে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে দুই দেশই। গত কয়েক বছরে ইরাকের বাগদাদে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়। এ বিষয়ে ইরাকের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওমানও।
এর আগে এক দিনে ৮১ জনের মৃতুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব সরকার, যাদের অধিকাংশ শিয়া মুসলিম। শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী এক ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিবাদে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। ওই ঘটনার জেরেই ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্কে ইতি টানে।
এ ছাড়া ইয়েমেন যুদ্ধে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে ইরান ও সৌদি আরব। ইয়েমেন সরকারের পক্ষে রয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন ইরান-সমর্থিত হুতি যোদ্ধারা।
এদিকে ইরান-সৌদি সম্পর্কের উন্নয়ন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
আলজাজিরার সাংবাদিক আলি হাশেম বলেন, ‘এই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ হলেই এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়। যেমন ইয়েমেন ও লেবাননের কথা বলা যায়। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা এসব দেশে তাদের মধ্যে সমঝোতা দেখতে পাব। এই চুক্তি এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এসব দেশে তাদের অনেক স্বার্থ রয়েছে।’