:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
অর্থপাচার ও জালিয়াতির অভিযোগে ১০ বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। এ ঘটনায় প্রায় ১০০ কোটি সিঙ্গাপুর ডলারের (৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা) সমতূল্য অর্থ, সম্পত্তি, বিলাসবহুল গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা অবৈধ কার্যক্রমের প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে, যার মধ্যে ছিল জাল নথি। এই নথি ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে তহবিল নিয়ে আসা হয়।
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ) একই সঙ্গে রাজধানী সিঙ্গাপুর সিটির বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে। বুধবার পুলিশের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানা গেছে। এ অভিযানকে দেশটির ইতিহাসে অর্থ পাচারবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি বলা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের তাংলিন, বুকিত তিমাহ, অরচার্ড রোড, সেন্তোসা ও রিভার ভ্যালি এলাকায় এসব অভিযান চালানো হয়। বিবৃতিতে পুলিশ আরও জানায়, এই ঝটিকা অভিযানে ৪০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। এর মধ্যে ছিল ফৌজদারি তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিভাগ (সিএডি), বিশেষ অভিযান কমান্ড বা রায়ট পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা।
এখন পর্যন্ত ৯৪টি সম্পত্তি ও ৫০টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যার মোট মূল্যমান ৮১ কোটি ৫০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার।
এছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, নগদ অর্থ, বিলাসবহুল ব্যাগ, গহনা, ঘড়ি, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও কিছু ভার্চুয়াল সম্পদের বিবরণযুক্ত নথি জব্দ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর পুলিশ জানায়, আটককৃতদের মধ্যে চীন, তুরস্ক, সাইপ্রাস, কম্বোডিয়া ও ভানুয়াতুর নাগরিক আছেন এবং তাদের বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন ৪০ বছর বয়সি এক সাইপ্রাস নাগরিক। তাকে বুকিত তিমাহর ইওয়ার্ট পার্কের এক বাংলো থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, তার শয়নকক্ষের বাইরে এসে দরজা খোলার নির্দেশ দিলে তিনি দরজা না খুলে তৃতীয়তলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন। পরবর্তীতে তিনি একটি নর্দমায় লুকিয়ে থাকেন। আহত অবস্থায় তাকে আটক করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ মতে, তার কাছে চীন ও কম্বোডিয়ার পাসপোর্টও ছিল।
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আরো সম্পদ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে। অভিযুক্তরা অর্থ পাচারের দায়ে দোষী প্রমাণিত হলে সিঙ্গাপুরের আইনানুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা এবং পাঁচ লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে। এছাড়া তারা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্সের ওয়েবসাইটে দেশটির কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ডেভিড চিউয়ের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে এনেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন চিউ।
চিউ বলেন, সিঙ্গাপুরের আর্থিক সিস্টেম ব্যবহার করে যারা অর্থ পাচারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এসব অপরাধীরা যাতে সিঙ্গাপুরে আস্তানা গাঁড়তে না পারে সেজন্য তাদের চিহ্নিত এবং প্রতিহত করার জন্য দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট একযোগে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন ‘আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে এসব অপরাধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যাতে সিঙ্গাপুরকে নিরাপদ স্বর্গ বানাতে না পারে সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।’
চিউ আরো বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার-আমরা যদি তোমাদের ধরতে পারি, তাহলে গ্রেফতার করা হবে। যদি তোমার কাছে অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায়, আমরা সেগুলো বাজেয়াপ্ত করবো। আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তোমাদের মোকাবেলা করা হবে।
বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপারে অর্থ পাচার করে যারা সিঙ্গাপুরে এনেছেন তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের কর্মাশিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন সম্পদ জব্দকারী শাখার সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা আরশাথ আরিফের একটি বক্তব্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।
আরিফ সেখানে বলেন, নানা উপায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে আনা হয়। বিভিন্ন দামি জিনিসপত্রের আদান-প্রদানের মাধ্যমেও অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে আনা হয় বলে তিন উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে দামি চিত্রকর্ম ও নানা ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র।
অনেক সময় অপরাধীরা বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসে এবং আসল পরিচয় গোপন করে লেনদেন করে। সেক্ষেত্রে যথাযথ নিরীক্ষা অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।