:: সিলেট প্রতিনিধি ::
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বালুবাহী ট্রাক ও শ্রমিক বহনকারী পিকআপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১৫ জন।
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ১৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. সিজিল মিয়া (৫৫), একলিম মিয়া (৫৫), হারিছ মিয়া (৬৫), সৌরভ মিয়া (২৭), সাজেদুর (৬০), বাদশা মিয়া (৩০), সাধু মিয়া (৫০), রশিদ মিয়া (৫০) ও মেহের (২৫); সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শাহীন মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (২৬) ও আওলাদ হোসেন (৫০); হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনা বারহাট্টার আওলাদ মিয়া (৪০)।নিহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হারিছ মিয়া (৫০), সৌরভ (২৫), সাধু মিয়া (৪০), তায়েফ নুর (৪৫), সাগর (১৮), রশিদ মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (৫৫), বাদশা মিয়া (৪৫) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ওয়াহিদ আলী (৪০)।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে (সিলেট-ন ১১-১৬৪৭) করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-০৭৮০) সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন ও পরে হাসপাতালে আরও চারজন মারা যান।
খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানাপুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেবে প্রশাসন
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
আজ বুধবার সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে আসা স্বজনদের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা গেছে। মরদেহগুলো সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ১৫ দিনে নিহত ২৫
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, গত ১৫ দিনে এই সড়কে উল্লেখ্যযোগ দুর্ঘটনার মধ্যে ৪ জুন ভোরে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শায়েস্তগঞ্জের সুদিয়াখলা এলাকায় এ সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। ৩ জুন মাধবপুর উপজেলার কাউসারনগর এলাকায় পিকআপভ্যানের চাপায় পথচারী, ২৬ মে মাজার জিয়ারতে যাওয়ার পথে বাহুবলের মৌচাক এলাকায় তিন নারী যাত্রী এবং একই দিন পৃথক দুর্ঘটনায় আরও দুজন নিহত হন। সর্বশেষ আজ ১৪ নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের রশিদপুর এক সময় দুর্ঘটনার জন্য আলোচিত ছিল। রশিদপুরে তিনটি সড়ক মিলিত হয়েছে। এই মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তিন উপজেলার বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও করে। এ মহাসড়কে ২০১২ সালে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীমসহ ৮ জন। ২০২১ সালে দুটি বাসের সংঘর্ষে ১১ যাত্রী নিহত হন।