:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৬৫০-এর বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করেছে ৪৭ জনকে।
নোয়াখালী : বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৫৩৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সুধারাম থানা। গ্রেফতার করেছে ১৯ জনকে। রোববার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম। শনিবার সকাল ৯টার দিকে মাইজদীতে জামায়াতের গণমিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলা করা হয়।
অপর দিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুক দাবি করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, রাজবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দাবিতে জামায়াতের ওই গণমিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের হামলায় ও শর্টগানের গুলিতে ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গুলি চালানোর বিষয়টি নাকচ করে ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি চালায়। জামায়াতের নেতাকর্মীরাই উলটো পুলিশের ওপর ককটেল হামলা চালিয়েছেন।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, শনিবার আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। পুলিশের সাথে আমাদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। আমি এ মামলার বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।
চুয়াডাঙ্গা : গণমিছিলের প্রস্তুতিকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামানসহ ৮ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার বেলা ৩টার দিকে শহরের শহিদ রবিউল ইসলাম সড়কের চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের কাছ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অপর গ্রেফতাররা হলেন জেলা বিএনপির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক আবু, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, আইলহাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু হানিফ, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ রানা ও ছাত্রদল নেতা আরমান আলী। পরে শহরের শহিদ রবিউল ইসলাম সড়ক নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণমিছিল শুরুর আগেই পুলিশ সদস্যরা দলের নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। পরে ৮ নেতাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে নেওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগের করা নাশকতা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা : শ্যামনগরে নাশকতা কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মুফতি মো. শহিদুল্যাহ সলিমকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। রোববার গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মো. সেলিম গাজীর ছেলে ও কাটুনিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
শ্যামনগর থানার ওসি নূর ইসলাম বাদল সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাকে সাতক্ষীরা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী : পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। রোববার নগরীর সাহেব বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা ১৩ ডিসেম্বর নগরীর উপশহরে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আরএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩ ডিসেম্বর জামায়াত-শিবিরের ওই বিক্ষোভ মিছিল থেকে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও পাথর ছুড়ে মারা হয়। এর ফলে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ঘটনার একদিন পর জামায়াতের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার এ মামলার আরও পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন, কাটাখালী এলাকার আকবর আলীর ছেলে শামীম হোসেন (৩৩), নওদাপড়ার আব্দুল করিমের ছেলে শিবির কর্মী তাহমিদুর রহমান (২০) ও এমারত হোসেনের ছেলে রায়হানুল ইসলাম প্রিন্স (২১), মেহেরচন্ডি গ্রামের তসলিম উদ্দীনের ছেলে আব্দুল হামিদ (৫১) এবং ভালুকপুকুর এলাকার এয়াকুব আলীর ছেলে শিবির কর্মী আজিজুল হক (২১)। এদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর : জেলার দলীয় কার্যালয় থেকে শনিবার গণমিছিলে অংশ নিতে যাওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৪ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। রোববার সকালে সদর মেট্রো থানার উপপরিদর্শক সাইদুর রহমান খান মামলাটি করেন। মামলায় ওই দিন আটক ৮ জনসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, মারধর, গুরুতর জখম ও ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেন কাজী বাবু ওরফে টাইগার বাবু, মো. রাসেল বাবু, দেলোয়ার হোসেন, জাফর মোল্লা, হাতিম, সোহান, মো. রাকিব হোসেন, হাসিব পিয়াল, প্রিতম, নজরুল, সাগর, শরীফ, লিখন ও সাইদুল মাহামুদ। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়। গ্রেফতার আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে রোববার বিকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।