চারুকলা শিক্ষায় গ্রাফিক্সের গুরুত্ব

।। নজরুল ইসলাম তোফা ।।

বাংলাদেশের চারুকলা শিক্ষায় গ্রাফিক্সের গুরুত্ব অপরিসীম।  বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে শিক্ষার হার উন্নত দেশের তুলনায় কম বলা চলে। দেখা যায়,  স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটেনি সেই হারে। মানুষের জীবন যাপনের ব্যাপক পরিবর্তনও ঘটেছে। সেই সাথে রুচিবোধের পাশাপাশি সামাজিক রীতিনীতি, কৃষ্টি কালচারের চর্চাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন এদেশের সরকার বৃহৎ একটি স্বপ্ন আর আশা আকাঙ্ক্ষার আলোকে সমাজ পরিচালিত করছে। বাংলাদেশের এমন এই সরকার বিরাট এক পরিবর্তন এবং ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক একটি প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

একুশ শতকের বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো শপথ নিয়েছিলেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণই ছিল সরকারের মূল নির্বাচনী ইশতেহার।

আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগের সূত্র ধরে ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা ছিল যে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠীরাই সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা চালু, নতুন নতুন জ্ঞানভিত্তিক সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সমন্বয়েই এক জ্ঞানভিত্তিক সমাজের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুতরাং তাদের প্রধান এই বিষয়ের কাজও ত্বরান্বিত হচ্ছে। আসলেই এমন এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ সত্যিই বিশ্বের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের সঙ্গে মিলিয়েই বাংলার জনগোষ্ঠীকে উপহার দেওয়া খুব প্রয়োজন বৈকি। আমাদের দামাল ছেলেরা অনেক রক্ত দিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আজকের এ বাংলাদেশ পেয়ে আজ আমরা তিল তিল করেই দাঁড়াতে শিখছি। তাই এদেশের নতুন প্রজন্মের সোনার ছেলেরা হাতের নাগালে পাবে আধুনিক ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশ ও সমৃদ্ধশালী নতুন জীবন। ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই স্বপ্ন এবং লক্ষ্য পূরণ করবে তা আমার অনুধাবন করতে পারি।

‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ২০০৯ সালের ১৭ থেকে ১২ নভেম্বরে “ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট” নামক এ বিষয়ে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপ রেখায় কম্পিউটার গ্রাফিক্সের গুরুত্ব ও তার যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় আসা উচিত ছিল।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে চারুকলা কলেজ খোলার প্রয়োজনীয়তা সরকার অনুভব করছে তা শিকার করে নিতেই হয়। কিন্তু এমন এই প্রয়োজনীয়তার পাশা পাশি দেখা যায় শিক্ষালয়ে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যবহার এবং সংযোজন ঘটানোর কোনই উদ্যোগ শুরু হয়নি। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উন্নতিশীল সারা বিশ্বে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহার করে তাঁরা অনেক অর্থ উপার্জন করছে। এমন এই উদ্যোগের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশকে আর এক ধাপ উন্নয়নের সহযোগিতা করতে পারবে বলে মনে করি। সুতরাং শিক্ষাঙ্গনে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের প্রয়োজন রয়েছে এবং পাঠদানের জন্যে পাঠ্য সিলেবাসেরও দরকার আছে। এমন এ আশু প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার গ্রাফিক্স বিষয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের সামাজিক চাহিদা ও বাধা অনেকাংশে কমে যাবে। তাই এক সময় দেখা যাবে,  কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথকে আরও প্রসারিত করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারুকলা বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তিও হচ্ছে। তাদের এমন এই প্রয়োজনীয়তায় চারুকলায় সঠিক ভাবে কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহার হচ্ছে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে একটি জাতিকে উন্নত শিখরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আসলে বলাই যায় যে, একটি জাতি কতটুকু উন্নত হলো, যদি তাদের থাকে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শৈল্পিক চেতনা।

বাংলাদেশের চারুকলার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা দেরিতে হলেও প্রায় সত্তর বছর হতে চলেছে। সুতরাং দেশ স্বাধীনের পর চারুকলার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ব্যাপক প্রসার হলেও তথ্যপ্রযুক্তি যুগে এসে যেন এশিক্ষায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশে পিছিয়ে। চারুকলা চর্চার প্রয়োজনীয়তা লক্ষনীয়ভাবে বৃদ্ধি করতে পারলে অবশ্যই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি ধাপ অগ্রসর হবে। প্রচলিত শিক্ষা এবং সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে না পারলেই ভবিষ্যতে কর্ম সংস্থান নিয়ে বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হবে। এমন কথাগুলো বলেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তির মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা থেকে মন্ত্রিত্ব পাওয়া এমন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও বলেছেন, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকার তৈরির কারখানা। আসলেই তো, এমন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রকৃত অর্থে সামনের দিন গুলোতে আমাদের সন্তানদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা অসম্ভব হবে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পাঠ্যক্রম, পাঠদান পদ্ধতি ও শিক্ষক সহ শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের চারুকলা শিক্ষায় কম্পিউটার গ্রাফিক্স সমন্বয় ঘটিয়ে এবং পাঠদানের জন্যে সিলেবাসের অনুমোদন আশু প্রয়োজন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী ‘সঠিক সময়েই’ মোস্তাফা জব্বারকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। হয়তো বা তাঁর চৌকস ও সুদক্ষ তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানের আলোকেই গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

লেখকঃ  টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *