ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভিশপ্ত বছর

২০১৯ সাল ছিল ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভিশপ্ত বছর। চলতি বছরের গত নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। যা বাংলাদেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ রেকর্ড।

সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবলোপন বাদে শুধু খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। গত ৯ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট অবলোপনকৃত ঋণ ৪০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠিত ঋণের পরিমাণ কমবেশি ১৫ হাজার কোটি টাকা। গত সাড়ে ছয় বছরে ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিশেষ সুবিধায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিলের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। সবমিলিয়ে ব্যাংকিং খাতের দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপি, ঋণ অবলোপন, ঋণ পুনর্গঠন এবং পুনঃতফসিল করা ঋণকে একত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষায় স্ট্রেসড অ্যাসেট বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ বলা হয়।

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর লুটপাটের অভিযোগে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে (পিএলএফএসএল) প্রথমবারের মতো অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া অনিয়মের দায়ে বহিষ্কার করা হয় প্রতিষ্ঠানের ৯ পরিচালককে। এদিকে পিপলস লিজিং বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমানতকারীরা। তাদের আমানত ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমানতকারীরা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা ফেরত পেতে অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

সুদহার এক অঙ্কে না এলেও ৯টি সুবিধার চারটিতেই প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

২০১৮ সালের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, জুলাইয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, জুনে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ, মার্চে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ বা ধার নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ মাস নয় দিনেই (১ জুলাই-৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৪৭ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *