বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হয়ে হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ রানে।

মঙ্গলবার মিরপুরে টানা আট ম্যাচ পরে টস জেতেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। সুযোগ পেয়েই আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশকে। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫৫ রানে ফেরেন রনি তালুকদার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে ৮৪ রান তোলেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ওই জুটিই বাংলাদেশকে দেখায় বড় সংগ্রহের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত যদিও ১৫৮ রানে বাংলাদেশ আটকে যায়। লিটন দাসের ব্যাটে আসে ৭৩ রান। এ ছাড়াও নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাকিব আল হাসানের ব্যাটে আসে ৪ রান।

ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সল্টকে শূন্য রানে ফিরিয়ে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তার প্রথম উইকেট।

প্রথম উইকেট পতনের সেই ধাক্কা ভালোমতো সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন ডেভিড মালান ও অধিনায়ক জস বাটলার। দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছেন দাভিদ মালান। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন জস বাটলার। তাদের ব্যাটে ইনিংসের মাঝপথে ভালো অবস্থায় আছে ইংল্যান্ড। আগের ম্যাচে আলো ছড়ানো মেহেদী হাসান মিরাজ বল পেলেন দ্বাদশ ওভারে। প্রথম তিন বলে তাকে একটি করে চার ও ছক্কা মারলেন জস বাটলার। ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি স্পর্শ করলেন দাভিদ মালান। সাকিব আল হাসানের করা ১৩তম ওভারে কোনো বাউন্ডারি আসেনি, তবে এ ওভারে ১০০ পেরিয়ে গেছে ইংল্যান্ড।

কিন্তু মোস্তাফিজের বলে মালান ও মিরাজের দুরন্ত থ্রোয়ে যখন বাটলার আউট, তখনই যেন ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। শেষের কঠিন সমীকরণ মেলাতে পারেনি ইংল্যান্ড। দলটির ইনিংস শেষ হয় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে।

এরপর মঈন আলিকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। ৯ রান করা এই অলরাউন্ডারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। একই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন তাসকিন। এর ফলে ২ উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে ট্রফি হাতে উচ্ছসিত বাংলাদেশ দল

শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ৩১ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর লেগের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তুলে ইংল্যান্ড।

বল হাতে দুর্দান্ত করেছেন বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৪ রান। উইকেট একটি। তাসকিন দুটি, তানভীর ও সাকিব নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে ৭৩ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন ওপেনার লিটন দাস। ৫৭ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। ৪৭ রানে শান্ত থাকেন অপরাজিত। ২২ বলে ২৪ রান করেন ওপেনার রনি তালুকদার।

বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে ওডিআই ক্রিকেটে উইকেটের সেঞ্চুরি ক্লাবে দ্রুততম রেকর্ডটি মোস্তাফিজুর রহমানের। ৫৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন তিনি ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে ছুঁয়েছেন বাঁ হাতি কাটার মাস্টার এই মাইলস্টোন। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরি ক্লাবে আফগানিস্তানের রশিদ খান (৪৪ ম্যাচ), পাকিস্তানের সাকলায়েন মুস্তাকের (৫১) পর তৃতীয় দ্রুততম রেকর্ডধারী নিউ জিল্যান্ডের শেন বন্ডকে (৫৪ ম্যাচ) ছুঁয়েছেন মোস্তাফিজ।

সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে ৩৩ ম্যাচে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা মোস্তাফিজ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে উইকেট শিকারে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান।ডেভিড মালানকে এক্সট্রা বাউন্সে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে ৮১তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পূর্ণ করেছেন উইকেটের সেঞ্চুরি। এই মাইলস্টোনে সাকিবের লেগেছিল ৮৪ ম্যাচ।সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে ৬ষ্ঠ বোলার হিসেবে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মোস্তাফিজ।

যে সংস্করণে উইকেটের সেঞ্চুরিতে দ্রুততম মাইলস্টোনে রশিদ খান (৫৩ ম্যাচ), মালিঙ্গা (৭৬ ম্যাচ), ইস সোধির (৭৮ ম্যাচ) পেছনে মোস্তাফিজ। মাইলস্টোন ম্যাচের দিনে করেছেন মিতব্যয়ী বোলিং (৪-০-১৪-১)।২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৪টিই দিয়েছেন ডট! খেয়েছেন একটি মাত্র বাউন্ডারি।

টস-ইংল্যান্ড

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৮/২ (লিটন ৭৩, শান্ত ৪৭*, রনি ২৪, রশিদ ১/২৩, জর্ডান ১/২১)

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪২/৬ (ম্যালান ৫৩, বাটলার ৪০, তানভীর ১/১৭, তাসকিন ২/২৬, সাকিব ১/৩০, মোস্তাফিজ ১/১৪)

ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী ও সিরিজ ৩-০-তে জয়ী

ম্যাচ সেরা: লিটন দাস

সিরিজ সেরা: নাজমুল হাসান শান্ত

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *