:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৪৪ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৭৯ কোটি ২১ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্য মতে, জুলাই-আগস্ট এ দুই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইউরোপের বাজারে মধ্যে জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। স্পেনের বাজারে ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ফ্রান্সের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়াও ইইউর অন্যান্য দেশেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইউরোপের বাজার সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে জার্মানিতে। চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট-এই দুই মাসে দেশটিতে ১০৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯১০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জার্মানিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এরপরই রয়েছে স্পেনের বাজার। দেশটিতে এই দুই মাসে ৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ফ্রান্সের বাজারেও এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক।
ইউরোপের বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও। দেশটিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা তার আগের অর্থবছরের এক সময়ে ছিল ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারে ১২০ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে সর্বাধিক পোশাক রপ্তানি হয়েছে জাপানে। দেশটিতে এই দুই মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এরপরেই আছে ভারত। দেশটিতে গত দুই মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পোশাক।
রপ্তানির এমন উলম্ফনের বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দুই মাসের জন্য অর্ডার বেশি ছিল। তাই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সামনের অক্টোবর, নভেম্বরে এমন প্রবৃদ্ধি থাকবে না। সামনের মাসগুলোর জন্য অর্ডার অনেক কম এসেছে। এরমধ্যে গ্যাস সংকটে উৎপাদন কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সময় মতো পণ্য ডেলিভারি না দিতে পারলে ক্রেতা ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। বন্দর এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে তবেই রপ্তানি আরো বাড়বে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এখন এই রপ্তানি সাময়িক। সামনে ভয়াবহ সংকট দেখা যাচ্ছে। রপ্তানির এই ধারা থাকবে না। গ্যাস সংকটে উৎপাদনই ঠিক মতো করা যাচ্ছে না। একইসাথে অর্ডারও নাই আগের মতো। এছাড়াও ডলারের মূল্যের যে পার্থক্য করে দেওয়া হয়েছে তা মোটেও ঠিক হয়নি। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে উদ্যেক্তারা। ডলারের এমন মূল্য বেধে দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাই।’
একই সময়ে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পৌঁছেছে।
অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ আর ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে এ সময়ে রাশিয়া ও চীনে রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ২৯ এবং ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে রপ্তানি বেড়েছে, এটা ভালো খবর। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি খুচরা ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে। এ কারণে আগামী মাস থেকে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ বেশ কয়েকটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড বিক্রয় এবং অবিক্রীত স্টক হ্রাসে ভুগছে, তাই তারা এখন অর্ডার এবং উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই শিল্পটি সামনে আরেকটি অশান্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।