নিষেধাজ্ঞায় পড়লে পোশাক নেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর দুশ্চিন্তায় আছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত যুক্ত করে তৈরি পোশাকের ঋণপত্র দিয়েছে একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বুধবার বলেন, একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো ঋণপত্রের সাধারণ শর্তের মধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা পণ্য নেবে না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

তবে কোন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এমন শর্ত দিয়েছে কিংবা কোন পোশাক কারখানাকে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা জানাননি বিজিএমইএ সভাপতি।

ফারুক হাসান বলেন, নতুন শর্ত দেওয়ায় দুশ্চিন্তা একটু বাড়ল। কারণ, এতে করে অনেক ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে না–ও পারে। তার কারণ হচ্ছে, নতুন এই শর্তের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আবার ক্রেতা পণ্য না নিলে স্টক হয়ে যেতে পারে। অনেক ব্যাংক আবার ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র স্বাভাবিকভাবে খুলবে। এটিকে বড় করে দেখবে না। কারণ, তাদের এই খাতের ওপর বিশ্বাস রয়েছে।

ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সরকারের ওপর মহলে কথা বলবেন বলেও জানান বিজিএমইএর সভাপতি।

এ ঘটনার পর উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায় পড়বেন কি না, জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘অবশ্যই উদ্যোক্তারা টেনশনে পড়বেন। যদিও আমরা মনে করি না, ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বিশ্বের সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, সেহেতু অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত হয়তো দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।’

শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর দুশ্চিন্তায় পড়েন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্র গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় নতুন নীতি ঘোষণা করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতি প্রকাশকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, শ্রমিকদের হুমকি দেবে, ভয় দেখাবে, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘শঙ্কা’ প্রকাশ করে বাণিজ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে শ্রম ও মানবাধিকার নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ দেখানো হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৫০ ভাগই হয়েছে ইইউ এবং যুক্তরাজ্যে। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ বছরের নভেম্বরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়নের চেয়ে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ কম।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *