:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাপ দিয়েছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। চাঞ্চল্যকর এই সংবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট।
২০২২ সালের ৭ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইমরান খানকে সরানোর কথা বলা হয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইমরান খানের নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে তার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নথি সাইফার এর বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে দ্য ইন্টারসেপ্ট । সাইফার মূলত পাকিস্তানের একটি গোপন সরকারি নথি প্রেরণ ব্যবস্থা, যা তাদের দূতাবাসগুলো ব্যবহার করে থাকে।
ইন্টারসেপ্ট জানায়, গোপনীয় সেই নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান এর মধ্যে বৈঠকের বিবরণ রয়েছে।
‘সিক্রেট’ শিরোনামের ওই নথিতে ইমরান খান সরকারের পতন হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে তা আলোচনা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এর ব্যতয় ঘটলে কী হবে তা-ও জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক পরই মার্কিন ও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের মধ্যকার ওই বৈঠক হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান ওই সময় মস্কো সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র ইমরানের ওই সফরকে রুশ পক্ষপাত হিসেবেই নিয়েছিল এবং বাইডেন প্রশাসন তাতে ক্ষুব্ধ ছিল।
ওই বৈঠকের কয়েকদিন আগে মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফর নিয়ে কথা বলেছিলেন।
দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মস্কো সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেন। লু বলেন, ‘যেখানে গোটা ইউরোপের মানুষজন উদ্বিগ্ন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সেখানে কেন একেবারে খোলাখুলি নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেন? এমন অবস্থান নেওয়াও সম্ভব?’
এ ছাড়া যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব থেকে পাকিস্তান বিরত থাকাতেও ক্ষুব্ধ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
নথিতে বলা হয়, এসব কারণে গেলো বছরের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের দুই কর্মকর্তার মধ্যে এক বৈঠকে পাকিস্তান সরকারকে ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুতের জন্য উৎসাহিত করা হয়।
অন্যথায়, ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত না করলে পাকিস্তানকে বিশ্ব থেকে এক ঘরে করে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের দূত সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
এই বৈঠকের একদিন পরেই ২০২২-এর ৮ মার্চে সংসদে ইমরান খানের বিরোধীরা অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়।
ফাঁস হওয়া নথিটি প্রমাণের জন্য চেষ্টা করেছে জানিয়ে ইন্টারসেপ্ট জানায়, ওয়াশিংটন, ডিসি-তে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে গোপন নথি থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য মিথ্যা জানিয়ে তা অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে ইন্টারসেপ্ট। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জালিনা পোর্টারকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমাকে খুব স্পষ্টভাবে বলতে দিন যে এই অভিযোগগুলোর কোনো সত্যতা নেই।”
ইমরান খান অবশ্য গত বছরের মার্চ মাসেই ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে নিজ সমর্থকদের অবহিত করেছিলেন। ওই সময় তার মিত্ররাও তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, বিদেশিরা হুমকি দিয়েছে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে না হয় পাকিস্তান এর পরিণতি ভোগ করবে। এমনকি ২৭ মার্চ একটি জনসভায় এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও সবাইকে দেখিয়েছিলেন তিনি।
তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বছরের সাজা হওয়ায় পাকিস্তানের নির্বাচন আইন ২১৭-এর ১৬৭ ধারার অধীনে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। ফলে নির্বাচন আইন ২০১৭-এর ২৩২ ধারার সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩ (১) (এইচ) ধারার অধীনেও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়েছেন ইমরান।