ইসলামের আলোকে বিয়ে ও সাজসজ্জা

:: কানিজ ফাতেমা ::

বাংলাশের বিয়ে আয়োজনে বউকে মঞ্চের উপর বসিয়ে রাখা আমার কাছে বেশ অদ্ভুত লাগে। আমার অনেক বান্ধবীই স্রেফ লাল শাড়ি, বিয়ের দিনের ভারী মেকআপ সমৃদ্ধ সাজগোজের জন্যই বিয়ে করে ফেলেছে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে তোমার সখ হয়না আমি প্রতিবারই বলি অমন ধবধবে সাদা মেকাপ নিয়ে স্টেজে বসে থাকার সখ অন্তত আমার হয়না। বিয়ের দিন, প্রিয়জনের জন্য আপনি অবশ্যই নিজের সেরা সাজটাই সাজবেন কিন্তু এখানে আপনি বউতো না যেন মঞ্চে বসা কোন লাইভ পারফর্মিং আর্ট, বাকীরা নীচে চেয়ার নিয়ে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে কোন পার্লারের সাজ কেমন হল,গয়নাপাতি আর কাপড়ের দাম-মান।

অথচ মেয়েদের জন্য মেকাপ কিন্তু হারাম কিছু নয়, এটা মেয়েদের স্বভাব,ফিতরাত।তাকে আজকের আধুনিক জগত ছেড়ে জঙ্গলে রেখে আসলেও সে কিছুদিন পর ঠিকই কিছু না কিছু থেকে রঙ খুঁজে নিয়ে নিজের গালে, ঠোঁটে মেখে নিবে, চোখের নীচটা এঁকে নিবে, আজকালের ব্লাশ ওন, কাজল, আইলানার, কাজল। ইসলামও মেয়েদের এই স্বভাব অস্বীকার করে না।হাদীসেই আছে, ‘মেয়েদের জন্য রং হালাল,পুরুষের জন্য সুগন্ধী’। যেমন, মেয়েদের কালো ছাড়া অন্য যেকোন রঙে চুল রাঙ্গানোও (হেয়ার ডাই) হালাল।

কিন্তু শর্ত হল,এর কোন সাজসজ্জাই মাহরাম ব্যতীত অন্য কাউকে দেখানো যাবেনা।

তবে সব মেকাপ বা মেকওভার সামগ্রী এই হাদীসের নির্দোষ ক্যাটাগরিতে পরেনা যেমন আলগা পাপড়ি(আইল্যাশ),কন্ট্যাক্ট লেন্স। পরচুলা পরা হারাম হলে আলগা পাপড়ি,কন্ট্যাক্ট লেন্স লাগানোও হারাম হওয়ার কথা কিন্তু কেন জানি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে দেখিনা। ভ্রু প্লাকতো হারামই! বুখারী আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে বর্নিত, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নরনারীদের উপর, যারা দেহে উল্কি আঁকে ও একে দেয়,যারা ভ্রু চেঁছে সরু করে,যারা সৌন্দর্যের মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে,যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’

আমার পরিচিত অনেককেই বলতে শুনি, ভ্রু প্লাগতো করতে চাইনি, কিন্তু বিয়ের দিন পার্লারে জোর করে দিয়েছে,বা বিয়ের দিন পার্লারে করেই দেয়। এই কথাটা শুনে এত হাসি আসে,জোর করে পার্লারে ভ্রু প্লাক করা আর বিয়ের প্রলোভনে ওইটা করে ফেলা একই কথা।

ভ্রু প্লাক হারাম হওয়ার একটা বড় কারন চেহারার ধরন বদলে যাওয়া। আইভ্রু মানুষের চেহারার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইডেন্টিকাল হেয়ার।

ছবি এডিটং টুল ব্যবহার করে আইভ্রুটা সরিয়ে ফেলবেন বাঁ উনিশ বিশ করে দেখবেন,আপনার চেহারা পুরোই বদলে যাবে। আমি আমার পরিচিত অনেককেই আইভ্রু প্লাক করে ওভারনাইট নিজের চেহারা বদলে ফেলতে দেখেছি, ওভাল শেপ দিলে চেহারা এক রকম হবে আবার স্ট্রেইট বা তির্যক রাখলে আরেক রকম হবে। সার্জারি ছাড়া চেহারায় সস্তায় এত বদল শুধু আইভ্রু প্লাক করেই সম্ভব আর এজন্যই এটা হারাম।

অনেকেই আছেন অন্য সময় পরিপূর্ণ পর্দা করেন কিন্তু নিজের বা অন্যের বিয়ের দিন পর্দা বাসায় খুলে আসেন,কেউ স্বেচ্ছায় আবার কেউ সমাজের চাপে। আজকাল অনেকে হিজাব পরে বিয়ে করছেন,আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু মেকাপ করে মুখ খোলা রাখা সম্ভবত জায়েজ কিছু না,মুখ খোলা রাখতে হলে তা একেবারেই নিরাভরন হতে হয়।

এখন মনে হতে পারে ইসলাম কত্ত কঠিন,সব হারাম,সব নিষেধ!আসলে তা না,ইসলাম মানুষের বাহিরের মেকী লোক দেখানো সৌন্দর্যের চেয়ে আত্নিক সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে বেশী জোড় দেয়। একজন পুরুষ যার মাথায় চুল নেই (মাথায় চুল না থাকা খুঁত নয়,আমরা যার যার জায়গায় কেউই নিখুঁত নই) কিন্তু মাথাভর্তি পরচুলো লাগিয়ে কাউকে ভুল বার্তা দেয়া যেমন দোষনীয় তেমনি ফলস আইল্যাশ,কন্ট্যাক্ট লেন্সও তাই। ইসলাম এখানে সততাকে প্রাধান্য দেয়।আল্লাহ যা দিয়েছেন তা সন্তুষ্টি ও সবরের সাথে গ্রহন করে আত্নবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে।

অনেককেই দেখি কুরআন,হাদীসের দলীল দিয়ে একেবারেই মেয়েদের সব কিছু নিষেধ করে দেয়।এটা ইসলামী রীতি না।আবু হোরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘আমার কাছ থেকে মেয়েদের প্রতি সদাচারন করার শিক্ষা গ্রহন করো।কেননা, মেয়েদের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে তৈরী করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরেরটাই সবচেয়ে বাঁকা।অতএব, এদেরকে তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে।আর যদি ফেলো রাখো তবে বাঁকা হতেই থাকবে।কাজেই মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। ’(বুখারী)

তাই সময় নিয়ে আস্তে আস্তে বোঝাতে হবে, ভালোবেসে বুঝিয়ে বললে মেয়েরা শোনে না,এমন মেয়ে কমই আছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *