উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শূন্য থাকবে ১৬ লাখ আসন

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এরপরও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৬ লাখ আসন শূন্য থাকবে।

উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর তুলনায় এই স্তরে কলেজ, মাদ্রাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন বেশির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানে তুমুল ভর্তিযুদ্ধ হবে। এর বিপরীতে অখ্যাত, নামসর্বস্ব ও শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কলেজ ও মাদ্রাসা যথারীতি শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এসএসসি পরীক্ষার এই ফল সামনে রেখে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একাদশ শ্রেণি এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী আগামী ৮ ডিসেম্বর অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। দুই মাস ধরে চলবে ভর্তি কার্যক্রম। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও একই তারিখ থেকে আবেদন নেওয়ার চিন্তা আছে। আর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্লাস শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পৃথক দুটি ভর্তি নীতিমালায় এসব প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দুই নীতিমালা নিয়ে আগামীকাল দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া হয় এমন কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ৯১৮১টি। সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে ৫৬৫টি।

এছাড়া ডিপ্লোমা ইন কমার্স প্রতিষ্ঠান ৭টি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি) পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১৮শ। কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন আছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে আছে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ। এর মধ্যে এইচএসসি ভোকেশনালে পৌনে ৩ লাখ, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিতে (বিএমটি) ৪ লাখ আসন। সব মিলে আসনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ।

এবার এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে মোট পাশ করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী।

এতে এসএসসি, দাখিল আর কারিগরি-এই তিন ধারার ছাত্রছাত্রী আছে। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শুধু এসএসসিতে পাশ করেছে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন, মাদ্রাসায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন পাশ করেছে। সুতরাং আসন শূন্য থাকছে প্রায় ১৬ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বিদ্যমান সাড়ে ১১ হাজার কলেজ, মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে হাতে গোনা আড়াইশ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রায় ২শ কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট।

এছাড়া ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক থাকলেও হাতে গোনা ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের ৭ প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এবার এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬৯ জন।

জানা গেছে, চার্চ পরিচালিত তিনটি কলেজ হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ এবং নটর ডেম কলেজ এবারও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আর যত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা শিক্ষার্থীর এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে।

এ ক্ষেত্রে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনালে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে (জিপিএ নয়) ভর্তির মেধাক্রম তৈরি করবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রার্থী যেন তার প্রাপ্ত নম্বর মাথায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পছন্দের তালিকা দেন।

ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রথমদফায় আবেদন নেওয়া শেষ হবে মধ্য ডিসেম্বরে। এর ফল দেওয়া হবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে। অন্যদিকে কারিগরি বোর্ডের অধীনে সরকারি পলিটেকনিকে প্রথম দফায় আবেদন শেষ করা হবে ১৫ জানুয়ারি। বেসরকারি পলিটেকনিক এবং বিএমটি, ভোকেশনাল ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স প্রতিষ্ঠানে আবেদন নেওয়া হবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারও তিন ধাপে আবেদনের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। এবার শুধু অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে।

এর আগে এসএমএসেও আবেদন নেওয়া হতো। এবার ভর্তির ওয়েবসাইট xiclassadmission.gov.bd তে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবে।

খসড়া নীতিমালায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রাম আর পলিটেকনিকের মতোই বয়সসীমা তুলে দেওয়ার চিন্তা আছে। যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি ও দাখিলের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে তাদের আবেদনের শেষ তারিখ আলাদাভাবে ঠিক করা হবে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *