একজন লাকি আখন্দ

:: ফজলে এলাহী ::

বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের আকাশে যে কজন মেধাবী উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে চিরদিন জ্বলজ্বল করবে তাঁদের মধ্যে লাকি আখন্দ অন্যতম।

১৯৫৬ সনের ১৮ই জুন জন্মগ্রহন লাকি আখন্দ মাত্র ১৪ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সেই এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন। ১৯৬৩-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে লাকি সারগাম থেকে লাকি আখন্দের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয় যা ছিল ‘লাকি আখন্দ’ সেলফ টাইটেলড শিরোনামে যে অ্যালবাম দিয়েই লাকি আখন্দ শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় প্রবেশ করেন । লাকির গাওয়া ‘এই নীল মনিহার’ , ‘আমায় ডেকোনা’ , ‘নীলা’, ‘মামুনিয়া’ গানগুলো হয়ে যায় কালজয়ী আধুনিক গান । যে লাকির কণ্ঠের গান ১৯৮৪ সালে এদেশের মানুষ শোনে অথচ অনেকেই জানে না যে এতদিন ধরে হ্যাপি আখন্দের গাওয়া (লাকির প্রয়াত আপন ছোট ভাই ] ‘’আবার এলো যে সন্ধ্যা’’, ‘’কে বাঁশি বাজায় রে’’ ফেরদৌস ওয়াহিদের কণ্ঠের ‘’ মামুনিয়া’’, ‘’ আগে যদি জানতাম ‘’ এর মতো জনপ্রিয় গানগুলো এই লাকি আখন্দেরই সৃষ্টি ।

হ্যাপি আখন্দের কণ্ঠের কালজয়ী ‘’আবার এলো যে সন্ধ্যা ‘’ গানটির পেছনেও রয়েছে একটি চমৎকার গল্প যা হলো –

‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির গীতিকার এস এম হেদায়েত ও লাকী আখন্দ ১৯৭৫ সালের দিকে নওগাঁর জমিদার মামুনলাল চৌধুরীর বাড়ীতে যান মামুনলাল এর নিমন্ত্রণে। সেখানে যাওয়ার পর সারাদিন ঘরবন্দী থাকার পর জমিদার মামুনলাল কে বলে রিক্সায় ঘুরতে বের হোন। রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় পথের দুধারে ধান ক্ষেত দেখতে পেলেন। যে ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে রাস্তা আর সেই রাস্তায় দুজনে রিক্সা করে যাচ্ছেন। এই অপরূপ দৃশ্য দেখে লাকী বন্ধু হেদায়েত কে একটি গান লিখতে অনুরোধ করে। হেদায়েত প্রথমে চুপ থেকে কিছুক্ষণ পর লাকী কে ‘ আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে ‘ লাইন দুটো শুনায়। লাইন দুটো শুনে লাকী শুরুতে তেমন পাত্তা দিলো না। এর কিছুক্ষণ পর ‘ চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে মিশে গেছে’ লাইন দুটো শুনালে লাকীর মনে ধরে যায়। সেদিনই গানটি লিখে ফেলেন এস এম হেদায়েত।

নওগাঁ থেকে ঢাকায় ফিরে গানটির সুর করার কাজে বসে যান হেদায়েত ও লাকী। রক এন্ড রোল এর উপর গানটির সুর তৈরি করে ফেলেন লাকী। গানটি তৈরি করার সময় ছোট ভাই হ্যাপি পাশে ছিল। সে গানটি তুলে নেয় নিজের কণ্ঠে। লাকী ও হেদায়েত এর পছন্দ হয়ে যায়। ঠিক করেন গানটি হ্যাপিকে দিয়েই গাওয়াবেন।

তারপর কিছুদিন পর হঠাৎ করে হ্যাপি আখন্দ বাংলাদেশ টেলিভিশন এর নওয়াজিশ আলী খান এর একটি অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি গান দরকার পড়লে লাকিকে না জানিয়েই পুরনো দুটি গান ( কে বাঁশি বাজায়রে ও এই পৃথিবীতে আসে যারা) এর সাথে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি রেকর্ড করিয়ে নেন। রেকর্ড করার সময় হ্যাপি রিদম প্যাটার্ন বদলে ফেলেন হ্যাপি। রেকর্ড করানোর পর লাকীকে জানিয়ে দেন ‘ভাইয়া টেলিভিশন এর অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি গান দরকার হওয়ায় তোমার নতুন সুরের গানটাও দিয়ে দিয়েছিলাম’। এরপর রেকর্ড করা গানটি শুনেন লাকী। শুনেই মুগ্ধ হয়ে যান। না জানিয়ে রেকর্ড করা ও রিদম প্যাটার্ন বদলানোর রাগ ,অভিমান সব মুছে ফেলেন খুশীতে । পরবর্তীতে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির ‘ঘুড্ডি’ ছবিতে গানটি ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য যে ‘ঘুড্ডি’ ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে হ্যাপি অভিনয় করেন । এটাই হ্যাপি অভিনীত প্রথম ও শেষ ছবি ছিল। এরপরের ইতিহাস সবারই জানা। বাংলা ব্যান্ড ও পপ সঙ্গীতের সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় গানগুলোর তালিকায় স্থান পায় ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা ‘ গানটি ।

লাকী আখন্দের সুরারোপে করা প্রতিটি গানের কথার উপর সুরের যে প্রভাব তা যে কাউকেই সহজে মুগ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। লাকী আখন্দকে তাই সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। সুর ও সঙ্গীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তী। সফট্‌-মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই হয়ে উঠেছে এক একটি মাষ্টারপিস।

তুমুল জনপ্রিয় গান ‘যেখানে সীমান্ত তোমার – কুমার বিশ্বজিৎ’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে – সামিনা চৌধুরী’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা – হ্যাপী আখন্দ’, ‘কে বাঁশি বাজায়রে – হ্যাপী আখন্দ’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে – হ্যাপী ও লাকী’, ‘নীল নীল শাড়ী পড়ে – লাকী আখন্দ’, ‘পাহাড়ি ঝর্ণা – লাকী ও হ্যাপী’, ‘হঠাৎ করে বাংলাদেশ – লাকী আখন্দ’ সহ আরও অনেক শিল্পীর অনেক অনেক জনপ্রিয় গান বাংলা সঙ্গীতের এই কিংবদন্তীর সুরারোপ ও সঙ্গীতায়োজনে করা।

১৯৮৭ সালে ছোট ভাই ‘হ্যাপী আখন্দের’ মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছায় নির্বাসন নেন এই গুণী শিল্পী। মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে আবারও ফিরে আসেন সঙ্গীতাঙ্গনে। প্রাণের টানে ফিরে আসেন গানের মাঝে। সঙ্গীত ভক্ত শ্রোতাদের সৃষ্টির বেদনায় ভাসাতে আবারও দুটি হাত মেলে দিয়ে ধরেন সেই পুরোনো কীবোর্ডস, কথার পরতে পরতে সাজান সঙ্গীতের অপার্থিব স্বরলিপি। আর কথামালাগুলো সুরের ওম পেয়ে মেতে উঠে সৃষ্টির উল্লাসে।

লাকি আখন্দ শুধু একজন উঁচু মানের শিল্পী নন একজন সুরকারও বটে । লাকি আখন্দ কেমন সুরকার তা জানতে লাকি আখন্দের নিজ কণ্ঠের ও অন্য শিল্পীদের গাওয়া সব গান বাদ দিয়ে শুধু যদি ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবামটি শুনলেই হবে । দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে থাকার পর ১৯৯৮ সালে ফিরলেন নিজের একক ‘পরিচয় কবে হবে’ অ্যালবাম দিয়ে আর অন্য শিল্পিদের দিয়ে তৈরি করলেন ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার ‘ নামের একটি চিরস্মরণীয় অতুলনীয় অ্যালবাম । ১৯৯৮/৯৯ সালের কুরবানির ঈদে ‘’বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’’ অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় সাউন্ডটেক থেকে যা প্রকাশের সাথে সাথেই শ্রোতাদের মাঝে আলোড়ন তোলে । অ্যালবামের শিল্পীরা ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, তপন চৌধুরী ,কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরী । অর্থাৎ বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গানের দেশসেরা ৬ জন শিল্পী যারা দুটি ধারার গানে নিজেদের চিরস্মরণীয়দের তালিকায় নিয়ে গেছেন ততদিনে । সেই ৬ জন শিল্পীর দুটি করে ১২ টি গান যেন নান্দনিক কোন প্রেম কাহিনী হয়ে ধরা দিলো । অ্যালবামটি প্রথম দিন শোনার পর ভাবছিলাম সম্ভবত ভুলবশত ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ রাখা হয়েছে , অ্যালবামের নাম হওয়া উচিৎ ছিল ‘’নান্দনিক জীবন আমার’’ কারণ কথা,সুর,কম্পোজিশন, গায়কি মিলিয়ে ১২ টি গানই মুগ্ধ করা মনা শীতল করা গান যা হাজারবার শুনলেও পুরনো হবে না কোনদিন ।

লাকি আখন্দ যে ধরনের সুর করেন তা নিয়ে সংশয় ছিল ব্যান্ড সঙ্গীতের ঝড়তোলা কণ্ঠ আর্কের হাসান এর কণ্ঠ নিয়ে । কারণ হাসান খুব দ্রুত তাল লয় ও উঁচু স্কেলের গান খুব ভালো গায় কিন্তু অ্যালবাম শুনে পুরো বিস্মিত হয়ে গেলাম ! হাসানের কণ্ঠ উপযোগী করে ‘এতো দূরে যে চলে গেছো ’ ও ‘জানিনা তো সে ‘ শিরোনামের দুটি গান করানো লাকি আখন্দের মতো সুরকারের পক্ষেই সম্ভব । অস্থির উম্মাদনার হাসানের গান দুটো হাসানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা দুটি গান হয়ে থাকবে যা মনে দিবে শীতল পরশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেইসময় প্রায় গানে হাসানের কণ্ঠের কিছু অদ্ভুত কারুকাজ থাকতো যা লাকি আখন্দ নিজেও বাদ দিলেন না। ‘এতো দূরে যে চলে গেছো ‘’ গানটিতে হাসানের কণ্ঠের ভেতর থেকে তিনটি শব্দ যোগ করা হয় যা গানটিকে করেছে অন্যরকম । তবে সব কারুকাজই আজকের মেধাবীদের মতো সফটওয়্যার দিয়ে দেয়া নয় সব কারুকাজই ছিল যান্ত্রিকতা ছাড়া কণ্ঠ দিয়ে । শুধু নবীন হাসান নয় ব্যান্ড সঙ্গীতের দুই জনপ্রিয় কণ্ঠ মহাতারকা আইয়ুব বাচ্চু ও জেমসের কণ্ঠের ৪ টি গানগুলোও দারুন সুন্দর ও ৪ টি গানেই বাচ্চু ভাই ও জেমস ভাইয়ের কণ্ঠ উপযোগী সুর ও কম্পোজিশন । অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘শুভেচ্ছা’-তে জেমসের ‘লিখতে পারিনা কোন গান ’গানটি তো হয়ে গেলো বাম্পার হিট গান , সব বয়সী শ্রোতাদের কাছে জেমসের গানটি জনপ্রিয়তা পায় তবে অ্যালবামে জেমসের কণ্ঠে ‘’ভালোবেসে চলে যেও না’’ গানটি এমন কোন জেমস ভক্ত নেই যাদের প্রিয় তালিকায় নেই ।

তপন চৌধুরী , সামিনা চৌধুরী ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া গানগুলোতেও দারুন সুন্দর সুর করেছিলেন লাকি আখন্দ । সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় যে অ্যালবামে লাকি আখন্দের একোসটীক গীটারের অসাধারন কিছু কাজ আছে যা অ্যালবামটিকে করেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও হৃদয় ছোঁয়া । বিশেষ করে সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠের ‘’এই রাত কত জানা ‘’ গানটিতে লাকির একক গীটারের টিউনটি অসাধারন লাগে । এই ধরনের কাজ এখন কোন গানে কল্পনাতেও পাওয়া যাবে না।

এছাড়াও ১৯৯৯-এ প্রাইম অডিও –র ব্যানারে প্রকাশিত ব্যান্ড মিক্সড ‘দেখা হবে বন্ধু’ অ্যালবামে আর্কের জনপ্রিয় শিল্পী হাসানের জন্য একটি গানের সুরারোপ করেন তিনি। হাসানের গাওয়া সেই গানটি হলো ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা কিছু ভালোবাসা দাও’।

১৯৯৮ সালে কলকাতার অঞ্জন দত্ত বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানে লাকি আখন্দের সাথে পরিচিত হোন। সেদিনের আগে লাকি আখন্দকে অঞ্জন দত্ত চিনতেন না। সেই অনুষ্ঠানে আয়োজকদের অনুরোধে অঞ্জন দত্তের গানের সাথে স্টেজে লাকি আখন্দ কীবোর্ড বাজান। লাকির পারফরমেন্সে অঞ্জন দত্ত এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তীতে অঞ্জন দত্ত তাঁর ‘’ হ্যালো বাংলাদেশ’’ অ্যালবামে লাকি আখন্দকে উদ্দেশ্য করেই ‘’লাকি আখন্দ ‘’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত ।

লাকি আখন্দ সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্মের শিল্পী, শ্রোতারা জানে না সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য । আজকের তথাকথিত সুপারস্টার শিল্পীরা লাকি আখন্দের একটি গানও শুদ্ধভাবে গাইতে পারেনা সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য । লাকি আখন্দের মতো এমন একজন গুণী মানুষ জীবিতবস্থায় বাংলা গান থেকে দূরে সরে যান। নতুন নতুন শিল্পীরা লাকির কোন নতুন সৃষ্টিতে কণ্ঠ দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি যা বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। লাকি আখন্দের আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল কিন্তু আমরা তা নিতে পারেনি শুধুমাত্র আমাদের অবহেলা ও হীনমন্যতার কারণে। লাকি আখন্দ জীবিতবস্থায় দেখে গেলেন বাংলা গানের বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির অধপতন যেখানে সফটওয়্যার শিল্পীদের দৌরাত্ন। দীর্ঘদিন কান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০১৭ সালের ২১ শে এপ্রিল বাংলা গানের এই মহারাজ আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গিয়েছিলেন ।

লাকি আখন্দের সুর করা কিছু গানের লিংক
চলোনা ঘুরে আসি – https://app.box.com/s/4zyz9gtqt6t7s1oltis6
বলেছিলে কাল তুমি আসবে – https://app.box.com/s/71fxqzjifc0smb29h32c
কে বাঁশী বাজায় রে – https://app.box.com/s/yrp7vhy7uohkehzc0

হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা – https://app.box.com/s/jycbl8r45iumejo4dks7

এতো দূরে যে চলে গেছো –
https://app.box.com/s/g6a8ik0igx1bkrrh6hyh

নীলাঞ্চলে ভাসি আমি – https://app.box.com/s/c5x4yxp41qs6eo2r5qfq

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *