উপকূলে আঘাত হেনে দুর্বল ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’, নিহত ৩

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ উপকূলে আঘাত হেনে ক্রমশ দুর্বল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে নিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছিল, মিধিলি খুব বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় হবে না। এটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।

পটুয়াখালীতে বিকেল তিনটার দিকে ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যায়। এটিই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়ো বাতাস ও মুষল ধারার বৃষ্টি কমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে মোংলা বন্দরের কাযক্রম বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গাছ উপড়ে চট্টগ্রামে ২ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গাছ উপড়ে পড়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাইয়ে গাছ উপড়ে পড়ে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।শুক্রবার বিকেলে সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নে গাছের ডাল ভেঙে আব্দুল ওহাব (৭১) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। 

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা জানান, নিহত ওই ব্যক্তি নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে গাছের ডাল ভেঙে পড়লে ওই ব্যক্তি মারা যান।

এদিকে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে ৩ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনায় খেলার সময় একটি গাছ উপড়ে শিশু সিদরাতুল মুনতাহার ওপর পড়ে। এতে গুরুতর আহত হয় সে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে টাঙ্গাইলের বাসাইলে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ২টার দিকে বাসাইল উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর বাড়ি উপজেলার মিরিকপুর গ্রামে। তিনি বাসাইলের কোটিপতি মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন এবং বাসাইল পূর্বপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পর আব্দুর রাজ্জাক তাঁর বাসাইল পূর্বপাড়ার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। বাসাইল উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের সামনে তিনি একজনের সঙ্গে কথা বলতে মোটরসাইকেল দাঁড় করান। এ সময় দমকা হাওয়ায় উপর থেকে মেহগনি গাছের একটি ডাল ভেঙে তাঁর ওপর পড়ে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায়। পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ বলেন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বন্দরে এখন ১৪টি জাহাজ রয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হেনে দূর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) নাগাদ আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *