চাকরির সাক্ষাৎকার প্রস্তুতি

চাকরির সাক্ষাৎকারের আগে চর্চা করে নেওয়াটা উত্তম উপায়। শুধু চর্চা করে নেওয়াটাই না বরং সাক্ষাৎকারে আপনি কি বলতে যাচ্ছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া যে সাক্ষাৎকারের দিন আপনাকে কেমন লাগবে। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নিজের অঙ্গভঙ্গি, চাল চলন এসব দিকে আগে থেকেই সর্তক থাকতে হবে, কারণ অধিকাংশ মানুষই কথা বলার সময় নিজের অঙ্গভঙ্গির ব্যাপারে সর্তক থাকে না।

ভেবে বসবেন না যে একটি সাক্ষাৎকারের পরপরই আপনাকে চাকরির অফার করে বসবে, আপনাকে পরবর্তীতেও সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। আপনার পুরো চাকরির জীবনে অনেক সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে যদি না আপনি একটা চাকরি নিয়েই পুরো জীবন কাটিয়ে দেন।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, কেউই আপনাকে মেরে ফেলবে না। সর্বোচ্চ যা হতে পারে আপনি চাকরিটা নাও পেতে পারেন। আর এর কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে পারেনঃ যেমন স্বচ্ছন্দবোধ হয় এরকম পোশাক পড়ুন, সাক্ষাৎকারের জায়গায় সময় নিয়ে উপস্থিত হোউন, সাক্ষাৎকারের আগে ফ্রেস হয়ে নিন, পানি খাওয়ার দরকার পরলে পানি খেয়ে নিন। কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস প্রশ্বাস নিলে সতেজতা অনুভব করতে পারবেন।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, কেউই আপনাকে মেরে ফেলবে না। সর্বোচ্চ যা হতে পারে আপনি চাকরিটা নাও পেতে পারেন। আর এর কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে পারেনঃ যেমন স্বচ্ছন্দবোধ হয় এরকম পোশাক পড়ুন, সাক্ষাৎকারের জায়গায় সময় নিয়ে উপস্থিত হোন, সাক্ষাৎকারের আগে ফ্রেস হয়ে নিন, পানি খাওয়ার দরকার পরলে পানি খেয়ে নিন। কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস প্রশ্বাস নিলে সতেজতা অনুভব করতে পারবেন।

সাক্ষাৎকারের আগে একটি সাফল্যমণ্ডিত সাক্ষাৎকারের চিত্র কল্পনা করে নিন। জড়তা কাটিয়ে শান্তভাবে বসে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা কল্পনায় সাজিয়ে নিন। মূল বিষয় হচ্ছে নিজেকে শান্ত করে তুলুন।

ভেবে বসবেন না যে একটি সাক্ষাৎকারের পরপরই আপনাকে চাকরির অফার করে বসবে, আপনাকে পরবর্তীতেও সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। আপনার পুরো চাকরির জীবনে অনেক সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে যদিনা আপনি একটা চাকরি নিয়েই পুরো জীবন কাটিয়ে দেন। ইতিবাচক দিক হচ্ছে আপনি আপনার স্বীয় চাকরিটাই উত্তম করে তুলতে পারেন আপনার জন্য এবং এটা ভেবে খুশী হতে পারেন যে, কিছু বছরের মধ্যে আপনিই ডেস্কের অপরপাশে থাকবেন কারো চাকরির সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।

সাক্ষাৎকারের আগের দিন
• কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। কোম্পানির ওয়েবসাইট (যদি থেকে থাকে) থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যেমন, কোম্পানির ইতিহাস, সর্বশেষ অবস্থা। এইসকল তথ্যাবলি সাক্ষাৎকারে তুলে ধরার চেষ্টা করুন।

• নিজের সম্পর্কে বলার জন্য ৬০ সেকেন্ডের তথ্যাবলী প্রস্তুত করুন যা কিনা ‘নিজের সম্পর্কে বলুন?’ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন।

• নিয়োগকর্তাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য কিছু প্রশ্নাবলী তৈরি করুন যেখানে পদবী নিয়ে, কোম্পানি সম্পর্কে এবং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রশন থাকবে (আমাদের সম্পর্কে কি কিছু জানার আছে?)

• এই পদের জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং সবথেকে কম আনন্দদায়ক বিষয়গুলো কি কি ?

• পদন্নোতি এর সুযোগ কি আছে ?

• পদবীর সাথে কোম্পানির যোগসূত্র কোথায় ?

দুটি পছন্দের প্রশ্ন
১ . “ভবিষ্যতে কি আপনার প্রমোশন হওয়ার সুযোগ আছে?”, এটি একটি অনেক পুরনো প্রশ্ন এবং আপনার উন্নতির জন্য আপনার চেষ্টা এই প্রশ্ন থেকে অনেকটা বোঝা যায়।

২ . আপনি কি বলতে পারবেন আপনার কাজ কিভাবে আপনার কোম্পানির সামগ্রিক কাঠামোতে প্রভাব ফেলে? এই প্রশ্ন দ্বারা আপনি দলগত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করছেন।

• কোম্পানির বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি সম্পর্কে জানুন। ভেবে দেখুন আপনার খরচ ও অন্যান্য চাহিদার সাথে তা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।

• একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, যে কোন পোস্ট এর জন্য আগে থেকেই একটি বেতন কাঠামো চিন্তা করে রাখা হয়। যদি আপনি নিজেকে ব্যতিক্রমী প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না ।

• আপনি যাদের নাম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে চান তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিন।

সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার পূর্বে
১. আপনাকে কি পেশাদার কেউ মনে হচ্ছে? নিজেকে আয়নায় দেখুন। নিজেকে মার্জিত এবং সুন্দর দেখলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়।

২. নিম্নোক্ত জিনিসগুলো আপনার সাথে নিয়ে যাবেন:
• ভালো মানের কাগজে আপনার জীবনবৃত্তান্তের অনেকগুলো কপি ।

• আপনার রেফেরেন্সের একটা কপি ।

• কিছু পয়েন্ট টুকে রাখার জন্য একটি নোটপ্যাড ।

ইন্টারভিউতে আপনার মেজাজ হওয়া উচিত সাবলীল। সোজা হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে এবং এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব আরাম করে বসুন। আপনার পরিধান খুব বেশি টাইট হওয়া উচিত না। কারণ আপনার সার্টের বোতাম খুলে আসছে এই ধরনের দৃশ্য খুব একটা গ্রহনযোগ্য নয়। ছোট্ট একটি টার্ম মনে রাখুন ।

প্রচলিত সব প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে রাখুন
• আপনার সম্পর্কে বলুন (Tell me about yourself )

• আপনি কেন আপনার আগের চাকরিটি ছেড়েছেন? (Why did you leave or are you leaving your last position?)

• আপনি এই কোম্পানি সম্পর্কে কি জানেন? (What do you know about this company?)

• আপনার সবল এবং দুর্বল দিক কি কি? (What are your strengths and weaknesses?)

• আপনি এই কোম্পানিতে কেন কাজ করতে আগ্রহী? (Why do you want to work for this company?)

• আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কি? (What has been your most significant achievement?)

• কেন আপনাকে এই কোম্পানিতে নেয়া উচিত? (Why should we hire you?)

• আপনার প্রত্যাশিত বেতন কত? (What are your salary expectations?)

• আপনি যদি এই কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের একজন হতেন তাহলে এখানে কি পরিবর্তন আনতেন? (If you were the boss, what would you change about this company?)

সাক্ষাৎকারে আগমনের পর
১. একটু আগে আসুন, বিল্ডিং এর ভেতর কমপক্ষে ১০ মিনিট আগে ঢুকুন। আপনার অবস্থান থেকে অফিস এর জন্য কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে রওনা দেন।

২. নিয়োগকারী দলের অন্যতম কর্তব্য হলো প্রতিটি ইন্টারভিউ যেন হয় আলাদা এবং সুস্পষ্ট হয় তা নিশ্চিত করা।একজন প্রার্থীকে তার জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা কেমন তার একটি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কি ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে তা আগে থেকেই একটু ভেবে রাখুন।

৩. Go to the restroom and check your appearance one last time.

৪. রিসেপশনিস্ট এর কাছে আপনার পরিচয় একটি পেশাদারি মনোভাব নিয়ে দিবেন ।

৫. নিয়োগকারী দলের সাথে আপনার করমর্দনটি হতে হবে একটু কাঁপানো ও কিছুটা জোরে ।

৬. তাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসিও আপনি দিতে পারেন।

সাক্ষাৎকারের সময়
১. আপনার যেসব পয়েন্ট সাজিয়ে এনেছেন তা যেন মনে না হয় যেন আপনি তা মুখস্ত করে এসেছেন

২. আলাপটি উপভোগ করুন। এর মধ্যেই চেষ্টা করুন কোম্পানি সম্পর্কে যা জানতে ও শিখতে ।

৩. প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন এবং ভালমতো শুনুন।

৪. সবশেষে নিয়োগকারী দলকে ধন্যবাদ জানান।

সাক্ষাৎকারে যা করণীয়
* চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগেই ভালোভাবে জেনে নিন।

* প্রত্যাশিত পদ এবং কাজ সম্পর্কে জানুন।

* সাক্ষাৎকারে সচরাচর যেসব প্রশ্ন করা হয়, তা নিয়ে ভাবুন; সম্ভাব্য উত্তর অনুশীলন করুন।

* প্রতিষ্ঠান ও প্রত্যাশিত পদের সঙ্গে মিল রেখে সাক্ষাৎকারের দিন পোশাক বাছাই করুন।

* সাক্ষাৎকারে যাওয়ায় আগে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ও সেখানে পৌঁছানোর পথঘাট জেনে নিন।

* সাক্ষাৎকারের দিন হাতে সময় রেখে রওনা দিন, নির্ধারিত সময়ের আগে উপস্থিত হন।

* যাওয়ার পথে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে বিলম্ব হলে, সাক্ষাৎকার আয়োজনের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাকে ফোনে তা জানিয়ে দিন।

* সাক্ষাৎকার পর্বে জীবনবৃত্তান্তসহ প্রয়োজনীয় সনদ ও তথ্যপ্রমাণ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।

* অপেক্ষা ও সাক্ষাৎকার কক্ষে সবার সঙ্গে শান্ত, ভদ্র ও আন্তরিকভাবে কথা বলুন।

* সাক্ষাৎকারের সময় সরাসরি দৃষ্টিবিনিময় করুন। দৃষ্টিতে থাকবে আত্মপ্রত্যয় ও নমনীয় ভাব।

* কাঙ্ক্ষিত পদ ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিজের উৎসাহের বিষয়টি সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করুন।

* নিজের অর্জন ও দক্ষতার বিষয়ে জোর দিন।

* প্রশ্ন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত উত্তর দিন।

* চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

* উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত হন, কিন্তু সৎ থাকুন।

* সাক্ষাৎকারের সময় তাড়াহুড়া নয়। ধীরে চিন্তা করে শান্তভাবে উত্তর দিন।

* প্রশ্ন না বুঝলে ‘দুঃখিত’ বলে তা আবার উল্লেখ করতে অনুরোধ করুন।

* বেতনের ব্যাপারটি আগেই ভেবে রাখুন, বুঝেশুনে প্রত্যাশিত বেতনের অঙ্ক বলুন।

* সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার অন্তত ২৪ ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি নোট দিতে পারেন।

সাক্ষাৎকারে যা বর্জনীয়
* পোশাক বাছাইয়ে সতর্ক হন। অতি উজ্জ্বল, ঝকমকে, বিচিত্র রঙের পোশাক বর্জনীয়।

* অতিরিক্ত ও কটু সুগন্ধী ব্যবহার করবেন না। তামাকজাতীয় পদার্থের দুর্গন্ধের ব্যাপারে ধূমপায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে।

* সাক্ষাৎকারে যেতে বিলম্ব কাম্য নয়।

* চাপ ও জড়তার কারণে সব প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

* বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু কাউকে সঙ্গে নেবেন না।

* চুইংগাম জাতীয় কিছু মুখে নেবেন না। সঙ্গে বাহ্যিক জিনিসপত্র না নেওয়াই ভালো।

* সাক্ষাৎকারে কৌতুক বা কথার কথা বলবেন না।

* বিতর্কিত বিষয় না তোলাই ভালো।

* কথাবার্তা ও যুক্তিতে আক্রমণাত্মক হবেন না।

* অতি আত্মবিশ্বাস সর্বনাশ ডেকে আনে।

* হতাশা ও নেতিবাচক কথা বলবেন না।

* বর্তমান বা পুরোনো চাকরি নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন না।

* কোনোভাবেই মিথ্যা বলা যাবে না।

* ওজর দেবেন না।

* প্রশ্ন না বুঝে উত্তর দেবেন না।

* শুধু ‘হ্যাঁ-না’ উত্তর দেবেন না।

* ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যার প্রসঙ্গ টানবেন না।

* সাক্ষাৎকারকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার একেবারে বর্জনীয়।

* চাকরি পাওয়ার আগেই নিজ থেকে বেতন-ভাতার প্রসঙ্গ তুলবেন না।

* সাক্ষাৎকার শেষ হতে না হতেই ফোন দিয়ে ফল জানার চেষ্টা করবেন না। বারবার ফোন দেওয়াও উচিত না।

অনেক প্রশ্ন আপনাকে ফাঁকা ছেড়ে দিতে হবে। সব প্রশ্নের জন্য প্রেরণা যোগাতে নিচের মৌলিক তিনটি মতবাদ মনে রাখুনঃ আপনি কি কাজটি করতে পারেন, আপনি কি কাজটি করবেন এবং আপনি কি এটি করার জন্য উপযুক্ত হবেন?

অনলাইনে চাকরির সাক্ষাৎকার 
আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগের কাজ অনলাইনেই সম্পন্ন করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে চাকরির আবেদন পূরণের পাশাপাশি ভিডিও সাক্ষাৎকারও দিতে হয় অনলাইনে। এক্ষেত্রে যা কিছু আপনার জানা উচিত।

ভিডিও সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় অনেক প্রতিষ্ঠান স্কাইপে বা গুগল হ্যাংআউটের মতো মাধ্যম ব্যবহার করেন। কারো কারো নিজস্ব সফটওয়্যারও রয়েছে। তবে মাধ্যম যাই হোক না কেন, সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও সাক্ষাৎকার বলে হেলা করার কিছু নেই।

অনলাইনে ভিডিও সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে জার্মান বিশেষজ্ঞরা একটি তালিকা তৈরি করেছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী জেনে নিন ভিডিও সাক্ষাৎকারের জন্য কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন।

আগে ভালোভাবে জেনে নিন
যে প্রতিষ্ঠান আপনার সাক্ষাৎকার নেবে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। তারা ঠিক কখন, কীভাবে, কোন মাধ্যম ব্যবহার করে সাক্ষাৎকার নেবে সেটা জানা জরুরি। তাহলে প্রস্তুতি সহজ হয়।

প্রোফাইল ঠিক করুন
আপনার স্কাইপ বা গুগল অ্যাকাউন্ট ঠিকঠাক আছে তো? মানে প্রোফাইল ছবিটি কেমন? যদি সেটা বেশ আগের তোলা হয়ে থাকে তাহলে বদলে ফেলুন। বরং এখানে জুড়ে দিন একটি হালনাগাদ, শোভন ছবি। পাশাপাশি চাকরি বদলের আগ্রহের কথা আগেভাগেই ইন্টারনেটে লেখার দরকার নেই। এটা বরং গোপনই রাখুন।

সুনির্দিষ্ট উত্তর দিন
ভিডিও সাক্ষাৎকারের সময় অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। বরং আপনাকে যে প্রশ্ন করা হচ্ছে, অল্প কথায় সেটির উত্তর দিন।

ওয়েবক্যাম ব্যবহারে সতর্কতা
আপনার ওয়েবক্যাম আপনাকে ছাড়াও আরো অনেক কিছু দেখাতে সক্ষম। বিশেষ করে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডে বিরক্তিকর কিছু থাকলে তা সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তিকে বিরক্ত করতে পারে। তাই সাধারণ, সাধাসিধে ব্যাকগ্রাউন্ড বেছে নিন। আলোর ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করুন, যাতে সেটা হালকাভাবে আপনার চেহারার ওপর পড়ে। আলো সামনের দিক থেকে হলে ভালো। যদি আপনার পেছনে কোনো বাতি জ্বলে, তাহলে আপনাকে ভিডিওতে ঠিকভাবে দেখতে পাবেন না চাকরিদাতা।

সরাসরি তাকান
এই কাজটা কঠিন। তবে প্রয়োজনে বন্ধুদের সঙ্গে আগে চেষ্টা করে নিতে পারেন। চাকরির সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় সরাসরি ওয়েবক্যামের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। তাহলে অপর পাশে যিনি বা যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করবেন যে আপনি তাঁদের দিকে তাকিয়েই কথা বলছেন। এটা ভদ্রতা। আর খেয়াল করবেন, ক্যামেরাটি যেন আপনার চোখের সমান দূরত্বে থাকে।

পরিশ্রম হলেও বিরক্ত হবেন না: ভিডিও সাক্ষাৎকারেও আপনাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করা সম্ভব। অনেক চাকরিদাতা তেমনটা করতেও পারেন। এতে অবশ্য বিরক্ত হলে চলবে না। বরং মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর দিয়ে যান। আপনার ধৈর্যও কিন্তু চাকরির জন্য জরুরি।

সবশেষে

আমি আমার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি. আমার পূর্বপ্রস্তুতি ছিল এবং আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমি পারব.ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পুরোটাই গণ্ডগোল হয়ে গেল:

“আমি দরজায় নক করলাম, ঢুকলাম এবং ভিতরে গিয়ে একটু হাসি দিয়ে বসলাম. ইন্টারভিউটি ভালই হচ্ছিল যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি খেয়াল করলাম আমার নীল কলমের কালি বের হয়ে আসছে. কালি ছড়িয়ে পরেছে এবং আমি অনেকটা জমে গেলাম. “ইন্টারভিউ টীম কি খেয়াল করেছে ব্যাপারটা?” ভাবতে ভাবতেই আমি আমার পকেট মুছা শুরু করলাম এবং পাশাপাশি উত্তর দিতে থাকলাম. তারা এমন ভাব করলেন যেন ব্যাপারটি তারা দেখেনি, কিন্তু তখনি বুঝতে পেরেছিলাম যে পুরো ব্যাপারটি তাদের খুব একটা মনঃপূত হয়নি. আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমি চাকরিটি পাইনি।”

আপনি যতই যোগ্যতা সম্পন্ন হন এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যান না কেন, ইংরেজিতে বডি ল্যাংগুয়েজ বলে একটা ব্যাপার আছে যা আপনার ঠিক হতে ।যদি আপনার একজন রাজনীতিবিদের মতো বাকপটুতা থাকে কিংবা আপনার উচ্চারণ শুদ্ধ ব্রিটিশ হলেও ভুল বডি ল্যাংগুয়েজ আপনাকে ডুবানোর জন্য যথেষ্ট।

ইন্টারভিউতে আপনার মেজাজ হওয়া উচিত সাবলীল। সোজা হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে এবং এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব আরাম করে বসুন। আপনার পরিধান খুব বেশি টাইট হওয়া উচিত না। কারণ আপনার সার্টের বোতাম খুলে আসছে এই ধরনের দৃশ্য খুব একটা গ্রহনযোগ্য নয়। ছোট্ট একটি টার্ম মনে রাখুন ।

আপনার পা বারবার ঝাঁকি দেয়া বা আঙ্গুল নাড়ানো থেকে বিরত থাকুন। এর দ্বারা বোঝায় আপনি আত্মবিশ্বাসী নন ।

সর্বোপরি আপনি যা তাই থাকার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত কিছু করে দেখানোর চেষ্টাই আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যা বলেন তা বিশ্বাস করেন এবং যা বিশ্বাস করেন তাই যদি বলেন, সব ধরনের যোগাযোগের এর ক্ষেত্রে তা আপনাকে সাহায্য করবে।

জটিল প্রশ্ন

কিছু প্রশ্ন আপনাকে সহজভাবে আটকে দেবে। আপনি কতটা প্রস্তুতি নিয়েছেন সেটা কোন ব্যাপার নয়, এই ইন্টারভিউ প্রশ্নগুলো সু-নিয়ন্ত্রিত কণ্ঠস্বরকে অর্থহীন এবং অস্পষ্ট করে তুলবে। ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন কিছু সদস্য আছে যারা অর্থহীন এবং আপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পছন্দ করে ।

ইন্টারভিউ প্রশ্নাবলী মোকাবিলা করার চাবি হলো এটি মনে করা যে সব সাক্ষাৎকারগ্রহীতা – যাই হোক তাদের প্রশ্নগুলোর মানে তারা আপনাকে নিয়োগ দিতে চান। তারা পোস্টটি পূরণ করতে চান এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করেছেন সে ব্যাপারে নিজেদেরকে আশ্বস্ত করতে চান।
চাকরিতে আপনাকে তারা নির্দেশ করবেন এমন কোন কিছুর চেয়েও সাক্ষাৎকার চাপ খারাপ হতে পারে। কিছু প্রশ্ন বারবার উত্থাপিত হতে পারে এবং “আপনার নিজের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন।” এমন একটি প্রশ্ন হতে পারে। তাদের কাছে নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্ন বলার ঝোঁক সংযত করুন। আপনি আপনার জীবনবৃত্তান্তের যে তিনটি অথবা চারটি বিষয় তাদের স্মরণ করাতে চান সেগুলো তুলে ধরুন এবং ঐগুলো সম্পর্কে কথা বলুন।

কেউ একজন আমাকে আমার ডিগ্রী কোর্স সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, যখন অন্য কেউ একধাপ এগিয়ে যাবেন এবং “আপনার কোর্সে বিজনেস কমিউনিকেশন নেই বলতে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?” এরকম কিছু বলতে পারেন। ইহা ছাড়া কিভাবে আপনি আপনার কাজটি করতে সক্ষম হবেন! মনোভাবটা একজন সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার মতো হতে হবে এবং প্রার্থী বেশ আত্মরক্ষামূলক হয়ে উঠবেন ও যুক্তি দিতে শুরু করবেন। প্রকৃতপক্ষে, এটি চাপের মধ্যে রেখে প্রার্থীর একটি পরীক্ষা এবং এটি কাজ করে।

অনেক প্রশ্ন আপনাকে ফাঁকা ছেড়ে দিতে হবে। সব প্রশ্নের জন্য প্রেরণা যোগাতে নিচের মৌলিক তিনটি মতবাদ মনে রাখুনঃ আপনি কি কাজটি করতে পারেন, আপনি কি কাজটি করবেন এবং আপনি কি এটি করার জন্য উপযুক্ত হবেন? প্রথমে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতাসমূহ সম্পর্কে বলার মাধ্যমে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করুন, দ্বিতীয় আপনার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করার মাধ্যমে এবং তৃতীয় আপনার দলবদ্ধ কাজের রেকর্ড আপনাকে চাপের মধ্যেও একটি ভালো পর্যায়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে সাহায্য করবে।

এখানে ইন্টারভিউ প্রশ্নগুলোর দুটি জটিল প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিতে হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

১. আপনার ক্ষমতা এবং দুর্বলতা কি কি ?

কি বলতে হবে না
সম্পূর্ণসততা (যেমন- আপনার মদের নেশা আছে এটি স্বীকার করে আপনি কোন পয়েন্ট জিততে পারবেন না) প্রকাশ করা যুক্তিযুক্ত নয়। ধরুন আপনি বললেন আপনার কোন দুর্বলতা নেই এবং আপনি অহংকারী ও আত্ম-সচেতনতা বর্জিত একজন ব্যক্তি হিসেবে প্রদর্শিত হবেন। একটি দীর্ঘ, স্পষ্টত আপনার প্রশংসনীয় গুণাবলী দ্বারা প্রস্তুতকৃত তালিকা আপনার কোন সাহায্যে আসবে না।

১. কি বলতে হবে
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা এমন একজনকে খুঁজছেন যে তার দুর্বলতা এবং ক্ষমতাসমূহ সম্পর্কে অকপটে বলতে বাস্তবসম্মত হয়। তাদের নিজেদের দৃষ্টিগোচর থেকে আপনি আপনার দুর্বলতাগুলো প্রতিরোধ করতে কোন পদক্ষেপসমূহ নিয়েছিলেন সেগুলো বর্ণনা করতে এবং আপনার যোগ্যতার দাবির সপক্ষে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা প্রয়োজন। সুতরাং, উদাহরণস্বরূপ, বিশৃঙ্খল হওয়া আপনার একটি সমস্যা, কিভাবে অগ্রাধিকার দিতে এবং তালিকা তৈরি করতে শিখেছেন তা ব্যাখ্যা করুন।

২.কোন কৃতিত্বের জন্য আপনি সবচেয়ে গর্বিত?

কি বলতে হবে না
একটি স্কুল নাটকে অভিনয় আপনার গর্বিত মুহুর্ত হতে পারে। কিন্তু সাক্ষাৎকারগ্রহীতা সত্যিই এটি জানতে চান না। প্রচলিত নিয়ম হলোঃ যদি একটি দক্ষতা আপনার চাকরির সাথে প্রাসঙ্গিক না হয় তবে এটি ছেড়ে দিন।

কি বলতে হবে
আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে হস্তান্তর করতে পারেন এমন দক্ষতাসমূহ ব্যবহার করে আপনি অর্জন করেছেন এরূপ কিছু চিন্তা করুন। আপনি কি কখনও একটি অনুষ্ঠান সংগঠিত করতে অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পূরণ করতে চাপের মধ্যে কাজ করেছেন? অথবা আপনি কি একটি বাজেট পরিচালনা করেছেন , যদিও এটি ক্ষুদ্র হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা একটি কর্মস্থলে?

সাক্ষাৎকারের পর
তাই এখন আপনি কি করবেন? প্রার্থনা করবেন, নীরবে “সব হারিয়ে গেছে” এরকম অনুভূতির সাথে কাঁদবেন অথবা পরবর্তী কল আসা সম্পর্কে নিজের উপর আস্থা রাখবেন এবং অন্যান্য সম্ভাব্য শূন্য পদে আবেদন করতে থাকবেন। আপনার গুণাবলী সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পরবর্তীতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন চিঠি লিখতে ভুলবেন না।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *