:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
টানা ৩২ বছর সাজা খাটার পর কারাগার থেকে বেরিয়ে এই জল্লাদ বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৭১ দিন।
সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
রোববার গভীর রাতে সাভারের হেমায়েতপুরের একটি বাসা থেকে শাহজাহানকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবার ভোরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউল আজম ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান।
এদিকে গত ১০ জুন সাভারের হেমায়েতপুরে বাসা ভাড়া নেন শাহজাহান। সেখানে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। ২৩ জুন দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার বুকে ব্যথা উঠে। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন ওই বাসার মালিক আবুল কাশেম।
বাসার মালিক জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকেই মারা যান জল্লাদ।
এসআই মশিউল বলেন, শাহজাহানের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।
জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বোন ফিরোজা বেগমও।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন আমার ভাই। রোববার রাতে তার বুকে ব্যাথা উঠে। পরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
ফিরোজা বেগম বলেন, এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে তার মরদেহ গ্রহণ করেছি আমি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন (৪৪ বছর) কারাভোগ শেষে ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি পান প্রধান জল্লাদ মো. শাহজাহান।
কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ ও অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তাঁর দণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে।
কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন শাহজাহান। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি করেছিলেন।
মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছিলেন, তাঁর থাকার কোনো জায়গা নেই। বাড়িঘর কিছুই নেই। তাই সরকারের কাছে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন শাহজাহান। তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন যে প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর প্রথম ফাঁসি দেন আলোচিত একটি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে। একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন কারাদণ্ড মওকুফ হয় বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া কারাগারে যাঁরা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন।
৪০ বছর বয়সে অবিবাহিত অবস্থায় শাহজাহান কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপর ৭৩ বছর বয়সে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর বিয়ে করেন।
গত ৩১ মার্চ প্রতারণার অভিযোগে স্ত্রী-শাশুড়িসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভালো নেই জানিয়ে দাবি করেন, প্রতারণার শিকার হয়ে হারিয়েছেন সব। কাজ ও থাকার জায়গা চেয়ে সরকারের প্রতি আবেদনও করেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কারাগারের নথি অনুসারে ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। এ ছাড়া উভয় রায়ে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।