:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় ১৫ মাস পর তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হলেন।
সোমবার ৯টা ১৫ মিনিটে তিনি মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ খাদিজার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মো. শাহজাহান আহমেদ জানান, জামিনের কাগজপত্র গতকাল রোববার কারাগারে পৌঁছায়। পরে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। সোমবার ভোরে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়। পরিবারের কোনো স্বজন না আসায় তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছিলেন না। খাদিজার স্বজনের কারাগারে পৌঁছাতে দেরি করায় ৯টার কিছু পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাফটকে তাঁর বোন চিশতিয়া তাঁকে রিসিভ করেন। খাদিজাতুল কুবরা মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বোনের সঙ্গে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
মুক্তির পর খাদিজা কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় তো হয়েছেই। বিনা দোষে আমি প্রায় ১৫ মাস জেল খাটলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আর এখন বলতে চাই না। বলার মতো মন-মানসিকতা আমার নেই। কারাগারের ভেতরে খুব বেশি ভালো ছিলাম না। নামাজ পড়ে, রোজা রেখে আর লেখাপড়া করে সময় কাটিয়েছি। আজকে আমার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। তাই এখান থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব।’
বেলা ১১টা ৭ মিনিটে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি সরাসরি পরীক্ষার হলে গিয়ে আসন গ্রহণ করেন।
খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তিনি পুনঃভর্তি নিয়ে ২০২০-২১ সেশনে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
আজ সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর একটায়।
খাদিজার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূরানা। তিনি বলেন, ‘খাদিজা পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।’
এর আগে বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়।
অন্যদিকে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে খাদিজা আবেদন করেন, যা রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের সঙ্গে গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগ আবেদন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। ফলে এ সময় পর্যন্ত খাদিজার জামিন স্থগিত থাকে। আগের ধারাবাহিকতায় খাদিজার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম শুনানি করেন। খাদিজার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে মিরপুরের বাসা থেকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তার জামিন হয়নি। গত ১৫ মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার ছিলেন, সেই মামলার বিচার শুরুই হয়নি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ ছাড়া তারা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছে। এটা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারার অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
সঞ্চালক খাদিজা গ্রেফতার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন।