বায়ুদূষণে বছরে ২ লাখ মানুষের মৃত্যু

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট রোগে চিকিৎসার জন্য একজন ব্যক্তির বছরে ব্যয় ৮ হাজার টাকার বেশি।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।

গবেষণায় নানানো হয়, ২০ বছরে বায়ুদূষণজনিত রোগ বালাইয়ের কারণে মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৫ বছরে প্লাস্টিক দূষণও বেড়েছে দ্বিগুণ। এর ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছে শহরাঞ্চলের মানুষ।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, ২০২০ সালেই প্লাস্টিক দূষণের কারণে দেশের পর্যটন খাতে ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং মাছ চাষে ২০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। একই বছর প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

সেমিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, শিল্পের কারণে নয় বরং ইটভাটা ও উন্মুক্ত নির্মাণের কারণে বায়ূ দূষণ বেশি হচ্ছে। আর বায়ু দূষণ কমাতে ইটভাটা বন্ধ,রাজধানীতে যানবাহন কমাতে স্কুলবাস চালুর বিকল্প নেই বলে মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। বায়ুদুষণ বন্ধে নগরীতে যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন আতিকুল ইসলাম।

এ সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নগরায়নের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের হচ্ছে খুব দ্রুত। এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশের ক্ষতির কারণে ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে শহরগুলি জিডিপির ৪৪ শতাংশ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে যা প্রায় ৩১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

অনুষ্ঠানে ব্রিজ, বায়ু ও প্লাস্টিকের দূষণ বন্ধে সঠিক নীতি গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরি এবং সরকারের শক্ত অবস্থানের ওপর জোর দেন আলোচকরা।

সেমিনারটি পরিচালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন । এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত।

দূষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ল্যানসেট কমিশনের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ও সিসার বিষক্রিয়ায় ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ মারা গেছেন। তাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মারা গেছেন বায়ুদূষণে।

গতকাল মঙ্গলবার অনলাইন জার্নাল ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে প্রতি ৬ জনে একজন দূষণের কারণে মারা গেছেন। যুদ্ধ, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, যক্ষ্মা বা মাদকের কারণে বার্ষিক বৈশ্বিক মৃত্যুর চেয়ে এ হার বেশি।

আজ বুধবার সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দূষণের কারণে মৃত্যুর হার গত ২ দশকে ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা এর পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে।

গবেষণার প্রধান লেখক রিচার্ড ফুলার বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব প্রচুর। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়ে। বিশাল স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডায় দূষণ প্রতিরোধ উপেক্ষিত।’

ল্যানসেট কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের পর সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি ছিল পানিদূষণ। পানিদূষণে ২০১৯ সালে ১ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন অকাল মৃত্যু ঘটে। এরপর মৃত্যুর কারণ হিসেবে শীর্ষে ছিল সিসার বিষক্রিয়া।

গবেষণা অনুসারে, মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটেছে দূষণকে অগ্রাধিকার দিতে অক্ষম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

গবেষণার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, দূষণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হওয়া ১০টি দেশের বেশিরভাগই আফ্রিকার। দেশগুলো হলো চাদ, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, নাইজার, সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়া, লেসোথো, বুলগেরিয়া ও বুরকিনা ফাসো। 

এ ছাড়া, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণে মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে ছিল ভারত।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৈশ্বিক মৃত্যুহার এবং দূষণের মাত্রার উপর বিজ্ঞানীদের তথ্য বিশ্লেষণ অনুসারে, শিল্পপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াসহ নগরায়ণের ফলে বায়ু দূষণে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দূষণজনিত মৃত্যু ৭ শতাংশ বেড়েছে।   

এর আগে ২০১৭ সালে একই গবেষণার প্রাথমিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এতেও বলা হয়েছিল, প্রতি বছর দূষণে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এর অর্থ প্রতি ৬ জনে একজনের মৃত্যুর কারণ দূষণ। এতে করে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য, গবেষকরা ২০১৯ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন।  

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *