:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে মরক্কোয় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ জনে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৫০০-র বেশি।
ভূমিকম্পের পর মরক্কোর কিছু অঞ্চলের গ্রামবাসীরা সোমবার পর্যন্ত টানা চতুর্থ রাত ঘরের বাইরে কাটিয়েছেন।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
মরোক্কতে আঘাত হানা শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তা প্রায় ২৯০০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া হতাহতদের উদ্ধারসহ জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য মরক্কোর প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে স্পেন, ব্রিটেন এবং কাতারের অনুসন্ধান দল।
ভূমিকম্পের আঘাতে টিনমেল গ্রামে প্রায় প্রতিটি ঘর ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এবং গ্রামবাসীদের সবাই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। গ্রামের বিভিন্ন অংশে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা অসংখ্য মৃত পশুর দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম পুরোপুরি সমতল হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির আল হাউজ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, আর এর পরে রয়েছে তারউদান্ত প্রদেশ। মারাকেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, যদিও ইউনেস্কো-সুরক্ষিত পুরোনো এই শহরটিও ভূমিকম্পে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ইউএসজিএস বলছে, ১৯৬০ সালের পর শুক্রবার এই ভূমিকম্প দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ওই বছর দেশটিতে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মরক্কোতে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল।
ভূমিকম্পের ফলে বিপুল পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কাদামাটি এবং পাথরের তৈরি ঘরগুলোর অধিকাংশই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে বিপুল পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছে। স্থানীয়রা খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শোকার্ত স্বজনদের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছে মারাকেশের আকাশ-বাতাস।
মরক্কোর এই ভূমিকম্পে বিপুল পরিমাণ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর বিপুল পরিমাণ মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে দেখা গেছে, মারাকেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ আশ্রয়ের জন্য দিগ্বিদিক ছুটছে। কিন্তু নির্ধারিত কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতেও বিপুল পরিমাণ মানুষ খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটায়।