৩৮ বছর কোমায় থাকা ফুটবলারের ভালোবাসার কাহিনী

এরই নাম প্রেম! যিনি প্রায় ৩৮ বছর কোমায়, তার জন্য এ বার কী উপহার কেনা যায়? প্রাক্তন ফরাসি ফুটবলার জাঁ-পিয়ের অ্যাডামস (Jean Pierre Adams) স্ত্রী প্রতি অনুষ্ঠানের আগে এ প্রশ্নটিই নিজেকে করে থাকেন৷ ১৯৮২ সালে হঠাৎ যে দম্পতির জীবনে ছন্দপতন৷ সদা হাস্যময় ফুটবলার সামান্য অস্ত্রোপচারের ভুলে গত ৩৮ বছর কোমায়৷ একটা সময় ফ্রান্স এবং প্যারিস সাঁ জার হয়ে চুটিয়ে খেলেছেন তিনি৷ এখনও ফ্রান্সের অনেক মাঠে তার জন্য প্রার্থনা হয়৷ মিশেল প্লাতিনি তার চেনা ফুটবলারের জন্য অনেক কিছু করেছেন৷

৭২ বছরের প্রাক্তন ফুটবলার চোখের পাতা ফেলতে পারেন, খেয়ে হজম করতে পারেন, যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারেন-বেঁচে থাকা বলতে এ টুকুই৷ এই ৩৮ বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গ স্বামীর নিরলস সেবা করে চলেছেন তার শ্বেতাঙ্গ স্ত্রী বার্নাদেতি৷ প্রেমের শহরের যে কাহিনি হারিয়ে দিতে পারে বিশ্বের সেরা প্রেমের উপন্যাসকে৷

সময়ে ওষুধ দেওয়া, প্রতিদিন নিয়ম করে দাড়ি কামিয়ে দেওয়া, গোসল করানো, নতুন জামা পরিয়ে দেওয়া, একভাবে শুয়ে থেকে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া-এ সবই গত তিন দশক ধরে করে চলেছেন বার্নাদেতি৷ বলছেন, ‘জাঁ-পিয়েরকে কেউই তার জন্মদিন, বড় দিন বা ফাদার্স ডেতে উপহার দিতে ভোলেন না৷ আমি ওর জন্য টি শার্ট বা জাম্পার কিনে আনি৷ ও যে ব্র্যান্ডের জামা পরাতে ভালো বাসত, চেষ্টা করি সেই সব জামা কিনতে…৷’

তার ফুটবলার স্বামী কোমায় থাকলেও অনেক কিছু বুঝতে পারেন৷

জাঁ-পিয়েরের জন্ম সেনেগলে৷ পাঁচের দশকে জাঁ-পিয়েরের ঠাকুমা তাকে ফ্রান্সে নিয়ে আসেন৷ এর পর স্থানীয় একটি ফরাসি দম্পতি তাকে দত্তক নেন৷ তখন জাঁ-পিয়ের দ্বিতীয় ডিভিশনের ফুটবলার৷ বার্নাদেতি মনে করছেন, ‘সে সময় কৃষ্ণাঙ্গ কারও সঙ্গে প্রেম খুবই অভিনব৷ এ জন্য আমার পরিবারে শুরুতে সমস্যা হয়েছিল৷’

ফ্রান্সের জাতীয় টিমের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের মধ্যে এক জন জাঁ-পিয়ের৷ অল্প কিছু দিনের মধ্যে দেশের সেরা ক্লাব প্যারিস সাঁ জাতেও ডাক পান তিনি৷

একটা সময় খেলা ছেড়ে কোচিং শুরু করেন৷ সে সময় পায়ের একটি টেন্ডনে চোট পান৷ নিজে গাড়ি চালিয়ে যান হাসপাতালে৷ সেখানে দ্রুত তাকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়৷ সে সময় সেই হাসপাতালে হরতাল চলছিল৷ পরে জানা যায়, একাধিক ভুল হয় অস্ত্রোপচারের সময়৷ সে সময়ই হূদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে যান৷ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মামলা চালিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছেন স্ত্রী৷ বলছেন, ‘ওর পুরোনো ক্লাব এবং দেশের ফুটবল সংস্থা পাশে না থাকলে এত দিন মামলা টানা সম্ভব ছিল না৷’

আর তার আত্মত্যাগ? মৌনই থাকেন বার্নাদেতি৷

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *