:: ক্রীড়া প্রতিবেদন ::
ভারতের কাছে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার সাথেও পারল না পাকিস্তান। জিততে হলে সেই রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে করতে হতো ৩৬৮ রান। এমন কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ৬২ রানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
দারুণ এ জয়ে পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া। সমান পয়েন্ট নিয়ে রানরেটের ব্যবধানে পাঁচে নেমে গেছে পাকিস্তান।
৩৬৮ রানের লক্ষ্যে নামে প্রথম ৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪০ রান করে পাকিস্তান। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাবর আজমের দলের স্কোর দাঁড়ায় ৫৯ রান। এরপর চড়াও হয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল পাকিস্তানের। ১২ তম ওভারের পঞ্চম বলে প্যাট কামিন্সকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে তুলে মারেন শফিক। সীমানার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা শন অ্যাবট বল ধরলেও তা হাত ফসকে হয়ে যায় ছক্কা। এটাই পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ছক্কা। শফিক আউট হলে ৬৬ রানেই ভেঙে যেতে পারত পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। পাকিস্তানি ওপেনারের স্কোর তখন ২৭ রান।
অ্যাবটের ক্যাচ মিস হতে না হতেই আরেকটি ক্যাচ মিস করেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৮ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পুল করতে যান ইমাম। মিড উইকেটে ক্যাচ মিস করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ক্যাচ মিসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেই ওভারের ফিফটি করেন ইমাম। ওভারের পঞ্চম বলে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে ২০ তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন ইমাম।
ফিফটির পর দুই ওপেনার ইমাম, শফিক দুজনেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। ২০ তম ওভার থেকে পাকিস্তান নিয়েছে ১৩ রান। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের এই ওভারে শফিক দুটি ও ইমাম একটি চার মেরেছেন। নিয়মিত বোলারদের দিয়ে যখন উইকেট তোলা যাচ্ছে না, তখন কামিন্স বোলিংয়ে নিয়ে এলেন মার্কাস স্টয়নিসকে। স্টয়নিস এসে নিজের প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছেন। ২২ তম ওভারের প্রথম বলে স্টয়নিসকে তুলে মারতে যান শফিক। মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ধরেছেন ম্যাক্সওয়েল। ৬১ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করেন শফিক। উদ্বোধনী জুটিতে শফিক-ইমাম ১২৭ বলে ১৩৪ রান যোগ করেছেন।
শফিকের পর দ্রুত ইমামের উইকেটও তুলে নিয়েছেন স্টয়নিস। ২৪ তম ওভারের চতুর্থ বলে স্টয়নিসকে কাট করতে যান ইমাম। টপ এজ হওয়া বল থার্ড ম্যান বাউন্ডারিতে লুফে নেন মিচেল স্টার্ক। ১০ চারে পাকিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটার করেছেন ৭১ বলে ৭০ রান। তাতে পাকিস্তানের স্কোর হয় ২৩.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৪ রান। তিন নম্বরে নামা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম দারুণ ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ২৭ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অ্যাডাম জাম্পাকে পুল করতে যান বাবর। শর্ট মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন কামিন্স। ১৪ বলে ১৮ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
শফিক, ইমাম, বাবরের বিদায়ে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ২৬.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৫ রান। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তানের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল। চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন রিজওয়ান ও শাকিল। এই জুটি ভাঙতে স্টয়নিস অবদান রেখেছেন ফিল্ডার হিসেবে। ৩৫ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কামিন্সকে পুল করতে যান শাকিল। টপ এজ হওয়া বল কাভার থেকে উল্টোদিকে দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন স্টয়নিস। ৩১ বলে ৫ চারে ৩০ রান করেন শাকিল। তাতে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৩৪.২ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩২ রান।
ইফতেখার আহমেদ (২৬), মোহাম্মদ রিজওয়ানরা (৪৬) আউট হওয়ার পর ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় পাকিস্তান। শেষদিকে রীতিমতো উইকেট পতনের কারণে ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা।
শুক্রবার ভারতের বেঙ্গালুরুর এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ১৮তম ম্যাচে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। এই জুটিতে তারা ৩৩.৫ ওভারে ২৫৯ রান করেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা রেকর্ড ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রানের জুটি।
এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই তারকা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৭২ রানের জুটি গড়েন।
তবে বিশ্বকাপে উদ্বোধনীতে রেকর্ড ২৮২ রানের জুটি গড়েন শ্রীলংকান দুই তারকা ব্যাটসম্যান তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। তারা ২০১১ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠ পাল্লেকেল্লেতে এই রেকর্ড গড়েন। তাদের সেই রেকর্ড আজও অক্ষত আছে।
শুক্রবার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ উদ্বোধনীতে ২৫৯ রান করার পর অস্ট্রেলিয়া শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি।
পরপর দুই বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ওপেনার মিচেল মার্শ ও তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মিচেল মার্শ ১০৮ বলে ১০টি চার আর ৯টি ছক্কার সাহায্যে ১২১ রান করে ফেরেন।
এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভ স্মিথ, ডেভেডি ওয়ার্নার, জশ ইনজিলস, মার্কাস স্টয়নিস, মার্নাস লাবুশেন, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড। দলের হয়ে ১২৪ বলে ১৪টি চার আর ৯টি ছক্কার সহায্যে ১৬৩ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার।
পাকিস্তানের হয়ে ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে এ নিয়ে দুই ম্যাচে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট শিকার করলেন পাকিস্তানের তারকা পেসার।