টেস্ট থেকে ওয়ার্নারের রাজসিক বিদায়

:: ক্রীড়া প্রতিবেদন ::

দীর্ঘ এক যুগের ১১২ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২৬ সেঞ্চুরি ও ৩৭ ফিফটিতে ৮ হাজার ৭৩৬ রান দিয়ে শেষ করলেন ডেভিড ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে প্রায় এক যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে রাজসিক বিদায় হল বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের অধিকারী ওয়ার্নারের। 

ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ঝলমলে এক ইনিংস রাঙিয়ে দলকে জেতানোর পথে করেছেন ৫৭ রান।

মাঠ ছাড়ার সময় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এসসিজি) দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে বিদায় জানান ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনারকে। ওয়ার্নারও দুই হাত উঁচিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছার জবাব দিতে দেখা যায়। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। রানের সংখ্যায় তিনি পেছনে ফেলেন ম্যাথু হেইডেন, মার্ক ওয়াহ, মাইকেল ক্লার্কের মতো কিংবদন্তিদের।

মাঠের ক্রিকেটের মাধ্যমে বিনোদন দেয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবেন ওয়ার্নার। বাঁহাতি এই ওপেনারের আশা লোকেরা তাকে রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী হিসেবে মনে রাখবে।

ম্যাচ শেষে ওয়ার্নার বলেন, ‘রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী। যেভাবে খেলেছি, তাতে লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি বলে বিশ্বাস করি এবং আশা করি তরুণেরাও আমাকে অনুসরণ করবে। সাদা বল থেকে টেস্ট ক্রিকেট—এটাই আমাদের খেলার শীর্ষবিন্দু। তাই কঠোর পরিশ্রম করো এবং লাল বলের ক্রিকেট খেলো; কারণ, এটাও মজার।’

সতীর্থদের দেখিয়ে ওয়ার্নার বলেন, ‘আমার মনে হয় যখন তাদের মাঠে নামতে দেখব কিন্তু আমি খেলব না, তখন একটু আবেগতাড়িতই হব। তবে যেটা বলেছি এই দলটা দারুণ। আমাদের বেশির ভাগের বয়সই ত্রিশের ওপাশে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আরও তরুণ না হলেও এই দলটা কর্মক্ষম, বিশ্বমানের এবং অসাধারণ।’

গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়, অ্যাশেজ ড্র, পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই—ওয়ার্নারের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ কয়েক মাসের সারমর্ম এটাই।

ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট শেষে ওয়ার্নার বলেন, ‘এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার চেয়েও বিশেষ কিছু। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়, অ্যাশেজ ড্র, এরপর বিশ্বকাপ। এখানে এসে ৩-০ ব্যবধানে জয় অসাধারণ অর্জন। দুর্দান্ত অনেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকাটা গর্বের মনে করি। নেটে ও জিমে তারা অনেক পরিশ্রম করে। ফিজিও, স্টাফরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। কৃতিত্ব তাদের দিতেই হবে। তারা অসাধারণ। তাদের আর কখনো নেটে মোকাবিলা করা হবে না।’

এর আগে ১৪ রানে এগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেও সুবিধা করতে পারেনি শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে গতকাল তৃতীয় দিনেই খাদের কিনারায় চলে যায় সফরকারীরা। চতুর্থ দিনের খেলা পাকিস্তান আজ শুরু করেছিল ৭ উইকেট ৬৮ রানে থেকে। দেখার ছিল পাকিস্তান কতদূর ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারে। অষ্টম উইকেটে ৮৯ বলে ৪২ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আমির জামাল। রিজওয়ানকে আউট করে জুটি ভাঙেন নাথান লায়ন। ৫৭ বলে ১ চারে রিজওয়ান করেন ২৮ রান।

চতুর্থ দিনে পাকিস্তানের  সাফল্য বলতে রিজওয়ান-জামালের ৪২ রানের এই জুটিই।  এরপর স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ৬ রান যোগ করে শেষ ২ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানেই অলআউট সফরকারীরা। ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৩ রান আসে সাইম আইয়ুবের ব্যাট থেকে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জশ হ্যাজলউড। ৩ উইকেট নেন নাথান লায়ন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও ট্রাভিস হেড।

পাকিস্তান ১১৫ রানে অলআউট হয়ে সিডনি টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায়  ১৩০ রান। ১৩০ রান তাড়া করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই ভেঙে যায় অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের প্রথম  ওভারের শেষ বলে খাজাকে এলবিডব্লু করেন সাজিদ খান। রিভিউ নিয়েও আম্পায়ার্স কলে আউট হয়েছেন খাজা।  এরপর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মারনাস লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়াকেও আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিদায়ী টেস্ট ইনিংস খেলতে নামা ওয়ার্নারকে নিয়ে সাবলীলভাবে এগোতে থাকেন লাবুশেন। দ্বিতীয় উইকেটে ১৪৩ বলে ১১৯ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। ফিফটি পেয়েছেন দুজনই। যেখানে ওয়ার্নার পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৭তম ফিফটি। ফিফটির পর সিডনি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকদের থেকে অভিবাদন পেয়েছেন। জুটি গড়ার পথে বেশ কয়েক বার জীবনও পেয়েছেন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। কখনো ক্যাচ মিস, কখনো বা এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি। পাকিস্তান রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলের কারণে উইকেট নিতে পারেনি।

ওয়ার্নারের শেষ টেস্ট ইনিংসে করেছেন ৫৭ রান। ৭৫ বলের ইনিংসে ছিল ৯ চার। ২৫তম ওভারের পঞ্চম বলে ওয়ার্নারকে এলবিডব্লুর ফাদে ফেলেন সাজিদ। আম্পায়ার আউট দেওয়ার রিভিউ করেও বাচতে পারেননি ওয়ার্নার। কারণ সেটা ছিল আম্পায়ার্স কল। অস্ট্রেলিয়ার বাহাতি ব্যাটারের বিদায়ের পর তাদের স্কোর হয়েছে ২৪.৫ ওভারে ২ উইকেটে ১১৯ রান। এরপর চার নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন স্টিভ স্মিথ। লাবুশেনকে নিয়ে বাকি পথ নিরাপদে পাড়ি দেন স্মিথ। ২৬তম ওভারের পঞ্চম বলে জামালকে কাভার-পয়েন্ট এলাকা দিয়ে ঠেলে ১ রান নিয়ে স্মিথ ৮ উইকেটের জয় এনে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৭৩ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন লাবুশেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন আমির জামাল। ব্যাটিংয়ে ৮২ রান ও বোলিংয়ে ৬৯ রানে ৬ উইকেট—এমন অলরাউন্ড পারফর্ম করেন জামাল।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক মাসুদ। প্রথম ইনিংসে ৩১৩ রানে অলআউট হয়েছে পাকিস্তান। ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৮ রান করেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন কামিন্স।  এরপর অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে অলআউট হয়েছে। প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রানও করেন লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার করেন  ৬০ রান। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন জামাল। ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সিরিজসেরা হয়েছেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক সিরিজে নেন ১৯ উইকেট।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *