:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, সবশেষ দুই সেশনে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্রুপ।
আদানির দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধান করছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দুই বছরের অনুসন্ধানের পর গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
‘আদানি গ্রুপ: হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড’স থার্ড রিচেস্ট ম্যান ইজ পুলিং দ্য লার্জেস্ট কন ইন করপোরেট হিস্ট্রি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের থলের বিড়াল বের করে দেয় হিনডেনবার্গ রিসার্চ।
এই রিপোর্ট এমন সময় সামনে এলো, যখন বাজারে ফের শেয়ার বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহের তোড়জোড় চালাচ্ছে আদানি এন্টারপ্রাইজেস। ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বাজারে আসবে ২৭ জানুয়ারি। যা বন্ধ হবে ৩১ জানুয়ারি।
সম্প্রতি এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গৌতম আদানি ও তার সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং প্রতারণার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের ওই প্রতিবেদনের জেরে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ।
তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারানোয় বিনিয়োগকারীরা এরই মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। হিনডেনবার্গের সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছে তারা এবং শুক্রবার অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত যুক্তি উপস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপের ওপর বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসে ফাটল স্পষ্ট।
শুক্রবার আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দর ১৯ শতাংশের বেশি কমে ৩ হাজার ২৭৬ রুপির নিচে নেমেছে। তাছাড়া আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড এবং আদানি টোটাল গ্যাসের মতো কিছু সহযোগী সংস্থা দৈনিক ২০ শতাংশ পতনের সীমা স্পর্শ করেছে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনের জেরেই এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ। তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এরই মধ্যে তারা ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
গ্লোবাল সিআইও অফিসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার গ্যারি ডুগান বলেন, ‘ইস্যুটি ভারতীয় করপোরেট খাতের কেন্দ্রে আঘাত করেছে, যেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে৷ স্বভাবগতভাবেই তারা অস্বচ্ছ। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের করপোরেট গভর্নেন্সের বিষয়গুলোতে আস্থা রাখতে হবে।’
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো কারচুপি করে তাদের শেয়ারদর বাড়িয়েছে। মূলত কোম্পানিতে প্রোমোটর বা মালিকের কারসাজিতে স্টকের দাম বাজারে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনমতে, অন্য লোকের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর শেয়ার কিনে নিজের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানিরা, যা বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো দেয়ার সমান। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে প্রকাশ্যেই আদানি গ্রুপকে স্টকে তছরুপ ও হিসাবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আদানির পাঁচ কোম্পানির নাম রয়েছে এই জালিয়াতির তালিকায়।
হিনডেনবার্গের রিপোর্ট আরও বলছে, আদানি গ্রুপের পাঁচ বড় কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে ‘ডি-লিস্টিং’ তথা বাদ পড়তে পারে। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।
বর্তমানে লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা নগদের অভাবে ধুঁকছে এই কোম্পানিগুলো। যার ফলে বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে অপারগ আদানি গ্রুপ। সেই কারণেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে কোম্পানি।
অতীতে এক মার্কিন কোম্পানিকে নিয়ে একই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দেখা যায়, ওই কোম্পানির ৯২ ডলারের শেয়ার ২ ডলারে নেমে আসে। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ডি-লিস্টিং হয়ে যায় সেই কোম্পানি।
সাম্প্রতিক পতনের আগে গত কয়েক বছর গৌতম আদানির জন্য ছিল শুধুই উত্থানের গল্প। ২০২২ সালে এশিয়ার সর্বোচ্চ মুনাফা লগ্নিকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
২০২২ সালে এশিয়ার সর্বোচ্চ মুনাফা লগ্নিকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। গত পাঁচ বছরের উত্থানে ইলন মাস্কের টেসলা ইনকরপোরেশনকেও পেছনে ফেলেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের অবস্থান পাকা করেছেন গৌতম আদানি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিলেন ভারতীয় এ ধনকুবের। ওই সময়ে আদানি ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
কিন্তু সাম্প্রতিক পতনের ধাক্কায় ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে আদানির সম্পদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা গত বুধবারের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম।
আদানি গ্রুপের বিষয়ে দুই বছর তদন্তের পর গত ২৪ জানুয়ারি গুরুতর নানা অভিযোগের বিশদ বিবরণসহ একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, তারা হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে ‘অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গবেষণাবিহীন’ প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
জবাবে হিনডেনবার্গ অবশ্য বলেছে, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি সঠিক। এর বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ হবে অযৌক্তিক।
গত পাঁচ বছরের উত্থানে ইলন মাস্কের টেসলা ইনকরপোরেশনকেও পেছনে ফেলেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের অবস্থান পাকা করেছেন গৌতম আদানি।
এমনকি গত সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসেন ভারতীয় এ ধনকুবের। ওই সময় আদানি ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
কিন্তু সাম্প্রতিক পতনের ধাক্কায় ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে আদানির সম্পদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা গত বুধবারের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই বিস্ফোরক প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, শেয়ার বিক্রির উদ্যোগকে বানচাল করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যে প্রচারের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে।
আরও বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গের এই প্রতিবেদন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গবেষণাবিহীন। তারা প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবে। জবাবে হিনডেনবার্গ অবশ্য বলেছে, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি সঠিক। এর বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ হবে অযৌক্তিক।
ফর্বসের তালিকায় গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। তবে ব্লুমবার্গের তালিকায় তার অবস্থান চতুর্থ। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, বুধবার বিকেল পাঁচটায় তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১৯ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ১৯৮০-এর দশকে ব্যবসা শুরু করা গৌতম আদানির মালিকানায় আছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি। সেই সঙ্গে আছে কয়লা আমদানির অনুমোদন। আদানির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশি কয়লা আমদানি করে।
ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ২২ শতাংশ হয় তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই বিদ্যুতের বেশির ভাগই উৎপাদন করা হয় কয়লা থেকে। আদানির গুদামজাতকরণ (ওয়্যারহাউস) ব্যবসাও দিন দিন বড় হচ্ছে।
ভারতের ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্য এসব গুদামে মজুত করা হয়। ২০১৯ সালে সাতটি বিমানবন্দর কিনে নেয় আদানি গ্রুপ। এই বিমানবন্দরগুলো দিয়ে ভারতের বিমানযাত্রীদের এক-চতুর্থাংশ যাতায়াত করেন। এ ছাড়া দেশটিতে আকাশপথে পরিবহন করা পণ্যের এক-তৃতীয়াংশই আনা-নেওয়া করা হয় আদানির মালিকানায় থাকা বিমানবন্দরগুলো দিয়ে।
ভারতের মুম্বাই শহরের নাবি মুম্বাই এলাকায় বিশাল একটি খালি জমি রয়েছে। দুই বছরের মধ্যে সেখানে শহরটির দ্বিতীয় বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আদানি গ্রুপের।
আদানির কাছ থেকে দিনে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এই চুক্তি হয়েছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর অভিযোগ, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে বেশি দরে এই বিদ্যুৎ কিনছে। গত ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুৎ আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা আসা শুরু হয়নি। জানা গেছে, আগামী মার্চ মাসে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে।