মোদির মন্ত্রিসভায় ৩০ মন্ত্রী ও ৪১ প্রতিমন্ত্রী

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রোববার শপথ নিয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতাসংগ্রামী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এ সময় মোদির নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ নেন। মন্ত্রিসভার ৭১ সদস্যের মধ্যে মন্ত্রী ৩০ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ৪১ জন।

এবারের মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছে বিজেপি। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর চেতনা ধারণ করে ২৪টি অঙ্গরাজ্য থেকে মন্ত্রী নেওয়া হয়েছে বলেও পর্যবেক্ষণ দেশটির মিডিয়ার।

মোদির মন্ত্রিসভায় ৩০ মন্ত্রী ও ৪১ প্রতিমন্ত্রী

মোদির নেতৃত্বে টানা এক দশক ধরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ভারত শাসন করেছে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি।

সরকার গঠনের জন্য এনডিএ জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে মোদিকে। নতুন সরকারে রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামন, এস জয়শঙ্করসহ প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীদের অনেকেই স্থান পেয়েছেন। সরকারে ফিরেছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। মন্ত্রিসভার মোট সদস্যের মধ্যে ৬০ জনই বিজেপির, বাকি ১১ জন বিভিন্ন শরিক দলের।

মন্ত্রিসভায় সর্বনিম্ন ৩৬ থেকে সর্বোচ্চ ৭৪ বছর বয়সী নেতাদের ঠাঁই হয়েছে। এ ছাড়া ‘অন্যান্য অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর’ (ওবিসি) ২৭ জন, দলিত সম্প্রদায়ের ১০ জন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাঁচজন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।

মন্ত্রিসভায় নতুন সাতজনকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ভারত থেকে ১৩ জন মন্ত্রিসভায় এসেছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজনই কর্ণাটকের।

কড়া নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ আট হাজার অতিথি অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জুগনাথ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচণ্ড, সেশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ছাড়াও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা এই অতিথিদের।

এ ছাড়া ভারতীয় শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি, অভিনেতা শাহরুখ খান, রজনীকান্ত ও অক্ষয় কুমার এবং পরিচালক রাজকুমার হিরানির মতো বিশিষ্টজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মোদির মন্ত্রিসভায় যাঁদের ঠাঁই হলো

মন্ত্রী : রাজনাথ সিং (সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী); অমিত শাহ (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী); নীতীন গড়করি (সাবেক মন্ত্রী); বিজেপি সভাপতি জে পি (জগৎ প্রকাশ) নাড্ডা; মধ্য প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান; নির্মলা সীতারামন (সাবেক অর্থমন্ত্রী); এস জয়শঙ্কর (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী); হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল; কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জনতা দলের (সেক্যুলার) এইচ ডি দেবগৌড়া কুমারাস্বামী; মহারাষ্ট্রের এমপি পীযূষ গয়াল; ওড়িশার এমপি ধর্মেন্দ্র প্রধান; বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার জিতন রাম মাঝি; জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লাল্লন সিং; আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনওয়াল; মধ্য প্রদেশের বিজেপির এমপি বীরেন্দ্র কুমার (সাবেক মন্ত্রী); তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) কিঞ্জিরাপু রামমোহন নাইডু; কর্ণাটকের বিজেপি এমপি প্রহ্লাদ ভেঙ্কটেশ জোশি (সাবেক মন্ত্রী); ওড়িশার বিজেপি এমপি জুয়েল ওরাম (সাবেক মন্ত্রী); বিহারের বিজেপি এমপি গিরিরাজ সিং (সাবেক মন্ত্রী); ওড়িশা বিজেপির এমপি অশ্বিনী বৈষ্ণব (সাবেক মন্ত্রী ও আইএএস কর্মকর্তা); মধ্য প্রদেশের বিজেপি এমপি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া (সাবেক মন্ত্রী); বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদব; রাজস্থানের বিজেপি এমপি গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত (সাবেক মন্ত্রী); ঝাড়খণ্ডের বিজেপি এমপি অন্নপূর্ণা দেবী (সাবেক মন্ত্রী); অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি এমপি কিরেন রিজিজু (সাবেক মন্ত্রী); উত্তর প্রদেশের বিজেপি এমপি হরদ্বীপ সিং পুরি (সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আইএফএস কর্মকর্তা); গুজরাটের বিজেপির এমপি (লোকসভা) মনসুখ মাণ্ডাভিয়া (সাবেক মন্ত্রী); তেলেঙ্গানা বিজেপির সভাপতি কিষণ রেড্ডি; লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) এমপি চিরাগ পাসওয়ান; গুজরাট বিজেপির সভাপতি সি আর পাটেল।

দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রী : হরিয়ানার বিজেপি নেতা রাও ইন্দ্রজিৎ সিং (সাবেক প্রতিমন্ত্রী); জম্মু কাশ্মীর বিজেপির এমপি জিতেন্দ্র সিং (সাবেক প্রতিমন্ত্রী); রাজস্থানের বিজেপি নেতা অর্জুন রাম মেঘাওয়াল (সাবেক মন্ত্রী); মহারাষ্ট্রের শিবসেনার (একনাথ শিন্ডে) এমপি প্রতাপরাও গণপতরাও (পিজি) যাদব; উত্তর প্রদেশের এমপি আরএলডির নেতা জয়ন্ত চৌধুরী।

প্রতিমন্ত্রী : উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেতা জিতিন প্রসাদ (সাবেক মন্ত্রী); সাবেক মন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক; উত্তর প্রদেশের বিজেপি এমপি পঙ্কজ চৌধুরী; সাবেক মন্ত্রী কিষাণ পাল; মহারাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার (অঠওয়ালে) নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রামদাস অঠওয়ালে; জেডি-ইউর রাজ্যসভা এমপি রাম নাথ ঠাকুর; বিজেপির এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায়; আপনা দলের (সোনেলাল) নেতা উত্তর প্রদেশের এমপি অনুপ্রিয়া পাটেল; কর্ণাটকের বিজেপি এমপি ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ভি সোমান্না; অন্ধ্র প্রদেশের টিডিপির এমপি চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি; উত্তর প্রদেশের বিজেপি এমপি এস পি সিং বঘেল; কর্ণাটকের বিজেপি নেত্রী শোভা করন্দলজে; বিজেপির এমপি কীর্তিবর্ধন সিং; বিজেপি নেতা বি এল শর্মা; পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এমপি শান্তনু ঠাকুর; কেরালার একমাত্র বিজেপি এমপি সুরেশ গোপী; সাবেক প্রতিমন্ত্রী তামিলনাড়ুর এল মুরুগান; উত্তরাখণ্ডের বিজেপি নেতা অজয় টামটা; তেলেঙ্গানা বিজেপির এমপি বন্দি সঞ্জয় কুমার; উত্তর প্রদেশ বিজেপির এমপি কমলেশ পাসওয়ান; রাজস্থান বিজেপির এমপি ভগীরথ চৌধুরী; বিহার বিজেপির এমপি সতীশ চন্দ্র দুবে; ঝাড়খণ্ড বিজেপির এমপি সঞ্জয় শেঠ; পাঞ্জাবের বিজেপি নেতা রবনীত সিং বিট্টু; মধ্য প্রদেশ বিজেপির এমপি দুর্গাদাস উইকে; মহারাষ্ট্র বিজেপির এমপি রক্ষা খাড়সে; পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এমপি সুকান্ত মজুমদার; মধ্য প্রদেশ বিজেপির এমপি সাবিত্রী ঠাকুর; ছত্তিশগড় বিজেপির এমপি তোখান সাহু; বিহার বিজেপির এমপি রাজভূষণ চৌধুরী; অন্ধ্র প্রদেশ বিজেপির নেতা ভূপতি রাজু শ্রীনিবাস বর্মা; পূর্ব দিল্লির বিজেপির এমপি হর্ষ মলহোত্রা; গুজরাট বিজেপির এমপি নিমুবেন বামভানিয়া; পুনের বিজেপি এমপি মুরলিধরন মহল; কেরালা বিজেপির নেতা জর্জ কুরিয়ান; আসাম বিজেপির এমপি পবিত্র মার্ঘেরিটা।

অনুপস্থিত জোটসঙ্গী মমতা

মোদির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। এর আগে গতকাল এক বিবৃতিতে কংগ্রেস জানায়, গত শনিবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সভাপতি খাড়গে। তাই রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানে খাড়গেই উপস্থিত থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক পশ্চিমবঙ্গের দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এমনকি দলটির কোনো প্রতিনিধিও অংশ নেননি।

গত শনিবার এক বৈঠকের পর মমতা জানান, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ আসেনি তাঁর কাছে। এলেও তিনি যেতেন না। মমতা তখন আরো বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে যে সরকার তৈরি করছে, তাকে আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না! দেশের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *