অধিকারের আদিলুর-এলান কারামুক্ত

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪ মিনিটে তারা কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আজ বিকেল পাঁচটার দিকে আদিলুর ও নাসিরের জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছায়।

তাদের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানো মাত্রই সব নিয়মকানুন মেনে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। তারা কারাগারের ভেতরে শাপলা ভবনে ছিলেন।

কারাগার থেকে বেরিয়ে আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করেছি। ন্যায়ের জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া এক মামলায় তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

গত ১০ অক্টোবর আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দিয়েছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ। একই সাথে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও স্থগিত করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ এর একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে সাজার বিরুদ্ধে আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান আপিল করেন। পরে আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।

আদালতে জামিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভুঁইয়া। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত তাদের ২ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ সেপ্টেম্বর ৫০ পৃষ্ঠার পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর সাজাপ্রাপ্তরা সশ্রম কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান তারা।

রায়ের পর তাদের বিরুদ্ধে দুই বছর কারাদণ্ডের রায় বাতিল চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাব পাশ হয়েছে।  ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের রায় বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইইউ এমপিরা। 

২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেয় সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।’

‘পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *