:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন সিনেটর আনোয়ারুল হক কাকার। পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটের এই সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আগামীকাল রোববার শপথ নেবেন বেলুচিস্তানের এই রাজনীতিক।
এর আগে অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং জাতীয় পরিষদের বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজ। আনোয়ারুল হক কাকার নাম নিয়ে তারা ঐকমত্য পোষণ করার পরেই বহুল প্রত্যাশিত এ ঘোষণাটি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আনোয়ারুল হক কাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
শেহবাজ শরিফের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন রাজা রিয়াজ।
তিনি বলেন, আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে হবে একটি ছোট প্রদেশ থেকে। আনোয়ারুল হক কাকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমি এই নামটি প্রস্তাব করেছি আর প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মতি জানিয়েছেন।
আনোয়ারুল হক কাকার ২০১৮ সালে বেলুচিস্তান থেকে ছয় বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের মার্চে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। পাশাপাশি তিনি প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সিনেটের স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়ী, উপদেষ্টা কমিটি, অর্থ ও রাজস্ব, বৈদেশিক বিষয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটিরও সদস্য।
২০১৮ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)। তিনি সিনেটে এই দলের সংসদীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তারপরও মাত্র পাঁচ মাস আগে দলটি তাঁর স্থলে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়।
আনোয়ারুল বরাবরই বেশ সক্রিয় রাজনীতিবিদ। উচ্চ কক্ষে (সিনেট) নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও আনোয়ারুলকে দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির এই আইনপ্রণেতা পশতুন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। তাই তিনি পশতুন ও বেলুচ উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।
পিএমএল-এন ও পিপিপিসহ মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সিনেটরের সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি ২০০৮ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে কোয়েটা থেকে পিএমএল–কিউ–এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। রাজনীতিবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী আনোয়ারুল বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
আনোয়ারুল ১৯৭১ সালে বেলুচিস্তানের কিল্লা সাইফুল্লাহ জেলার মুসলিমবাগ এলাকায় জন্ম নেন। নিজ শহরে স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।
পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন দিন আগে ৯ আগস্ট রাতে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। আর জাতীয় পরিষদ মেয়াদ পূর্ণ করলে ৬০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হবে।
সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ (১এ) অনুযায়ী, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদের আওতায় জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম প্রস্তাব করতে হয়।