আয়াতুল কুরসী পাঠের তাৎপর্য ও ফজিলত

আয়াতুল কুরসী হচ্ছে পবিত্র কোরআন শরীফের দ্বিতীয় সুরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত। এটি কোরআন শরীফের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আয়াত এবং ইসলামিক বিশ্বে এটি ব্যাপকভাবে মুখস্ত করা হয়। এতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর জোরালো ক্ষমতার কথা বর্ণনা করে।

আয়াতুল কুরসী
اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم

বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।

বাংলা অনুবাদ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনিই চিরঞ্জীব; যাবতীয় সবকিছুর ধারক । তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয় । আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর । কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন । তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন । তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে । আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয় । তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান ।[২:২৫৫]

ফজিলত

আয়াতুল কুরসী পাঠের কিছু ফজিলত –

১. সহীহ্ বোথারী শরীফে লিখিত আছে, যে ব্যাক্তি প্রভাতে ও শয়নকালে আয়াতুল কুরসী
পড়েন , আল্লাহ তায়ালা তার স্বয়ং রক্ষক হন। সুতরাং সমস্ত দিবাবাত্রিতে শয়তান তার নিকটে আসতে পারেনা। কারণ, শয়তান ওয়াদা করেছে যে, যে ব্যাক্তি আয়াতুল কুরছি পড়বে আমি তার কাছে যাব না।

২. শুক্রবার আসরের নামাযের পর নির্জন স্থানে বসে এই আয়াত ৭ বার পাঠ করলে মনে এক আশ্চর্যভাবের উদয় হয় এ ঔ সময় পাঠকারীর দোয়া কবুল হয়।

৩. ক্রমান্নয়ে ৩১৩ বার পড়লে ইনশাল্লাহ্ সকল কাজে জয়লাভ করা যায়।

৪. যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর ১ বার পড়বে তার রিযিক বৃদ্ধি পাবে।

৫. হযরত রাসূল (স:) এর ইন্তেকালের সময় হযরত আযরাঈল (আ:) বলেছেন, আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর ১ বার পড়বে, আমি তার রূহ (আত্মা) অতি সহজে কবয করব।

৬. নাসায়ী শরিফে বর্নিত আছে, নবী (স:) বলেন, যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর নিয়মিত ১ বার আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জন্য বেহেস্তে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতিত আর কোন বাধা থাকবে না।

৭. ঘর হতে বাহির হওয়ার সময় এই আয়াত পড়ে বের হলে কারো মুখাপেক্ষী হবে না।

৮. আবু হুরায়রা (র:) বর্ননা করেন, রাসূল (স:) ইরশাদ করেছেন এ আয়াতটি যে ঘরে পাঠ করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালায়ন করে।

৯. রাতে একাকী পথ চলার সময় এই আয়াত পাঠ করতে থাকলে দেও, জীন, পরী, ভূত, প্রেত ইত্যাদি কাছে আসতে পারেনা।

১০. দৈনিক ৫০ বা ১৭০ বার পড়লে মনের বাসনাপূর্ন হয়।

১১. ৫০ বার পড়ে বৃষ্টির পানির উপর ফুক দিয়ে খেলে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

১২. ঘর, বাগান ও দোকানের প্রবেশ দরজায় এই দোয়া লিখে ঝুলিয়ে রাখলে রিযিক বৃদ্ধি পায়, চোর-ডাকাত সেখানে প্রবেশ করতে পারেনা ও অগ্নিদাহ হয় না

জান্নাতের দরজা
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪) হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাত প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (সুনানে বাইহাকী )

মর্যাদাসম্পন্ন মহান আয়াত
আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) নবী (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসূল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসী। (নাসায়ি) উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত:নবী (সা.) উবাই বিন কা‘বকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “ তোমার কাছে কুরআন মজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন: (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়্যূল কাইয়্যূম) তারপর রাসূলুল্লাহ্ নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেন: আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ”।সহীহ মুসলিম ১৭৫৫)

ফেরেশতা নিযুক্তকারী আয়াত
আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তুক সদকার মাল চুরি করতেছে তখন তিনি আগন্তুকের হাত ধরে বললেন, “আল্লাহর কসম ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ”।তখন আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন ।তাই দয়া করে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন । পরদিন সকালে রাসূল (সাঃ) এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন “গতকাল তোমার অপরাধী কি করছে ?” আবু হুরায়রা (রাঃ)তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন । রাসূল (সাঃ) বললেন , “অবশ্যি সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে ।” পরদিন আবু হুরায়রা (রাঃ) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবার ও চুরি করতে আসল তখন তিন তাকে পাকড়াঁও করলেন আর বললেন “এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ।” এবার ও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর শপথ করে যে আর আসবে না ।পরদিন আবার ও রাসূলের তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বলেন, “ আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে ।” পরদিন ও আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবার ও চুরি করতে আসল তখন তিন তাকে পাকড়াঁও করলেন আর বললেন “এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব ।তুমি বার বার শপথ কর আর চুরি করতে আসে ।” চোর যখন দেখল এবার সে সত্যিই রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে , “আমাকে মাফ কর ।আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন ।” আবু হুরায়রা (রাঃ) সেটা জানতে চাইলে চোর বলে ; “যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল……) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহাড়াদার নিযুক্ত করবে যে তোমার সাথে থাকবে আর কোন শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না ।” এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন । পরদিন রাসূল (সাঃ) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন ।তখন রাসূল (সাঃ) বললেন ; “ যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে ।” রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন ;“তুমি কি জান সে কে ?” আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন ; “ না ।” রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন , “সে হচ্ছে শয়তান ।” [সহীহ বুখারী নং ২৩১১]

শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার আয়াত
হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত :রাসুল (সা.) বলেছেন:সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম:২১০৩)

উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাকত। একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মত এক জন্তু দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয় । তিনি বলেন: তুমি কি ? জিন না মানুষ? সে বলে: জিন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন: এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে: জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন: তোমার আসার কারণ কি? সে বলে: আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবী বলেন: তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বলে: সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ্র কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসূলুল্লাহ্ বলেন: খবীস সত্য বলেছে”
(সহীহুত্ তারগীব:১/৪১৮)

আয়াতুল কুরসীর অঙ্গ রয়েছে

উবাই বিন কাব থেকে বর্ণিত:নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহর কসম!যার হাতে আমার প্রাণ আয়াতুল কুরসীর একটি জিহবা ও দুটি ঠোট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকে। মুসনাদে আহমদ: ২১৬০২

পবিত্র কোরআনে বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত ও সুরা রয়েছে, যা খুবই ফজিলতপূর্ণ। তন্মধ্যে আয়াতুল কুরসি অন্যতম। আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে আসুন জেনে নিই, কী বলেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)।

ইমাম আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন, একদিন উবাই ইবনে কা’বকে নবী (সা.) জিজ্ঞেস করেন, কোরআনের মধ্যে কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই তা বেশি জানেন। হুজুর (সা.) আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আয়াতুল কুরসি। অতঃপর হুজুর (সা.) বলেন, হে আবুল মানজার! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার আত্মা। এর একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, যা দিয়ে সে আরশের অধিকারীর পবিত্রতা বর্ণনা করে।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে উবাই ইবনে কা’ব (রহ.)-এর পিতা তাঁকে বলেন : আমার খেজুর ভর্তি একটি বস্তা ছিল এবং প্রতিদিন সেটা আমি পরিদর্শন করতাম। কিন্তু একদিন কিছুটা খালি দেখে রাত জেগে পাহারা দিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, যুবক ধরনের কে একজন এলো! আমি তাকে সালাম দিলাম; সে সালামের উত্তর দিল। অতঃপর জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি জিন না ইনসান? সে বলল, আমি জিন। আমি বললাম, তোমার হাতটা বাড়াও তো। সে বাড়ালে আমি তার হাতে হাত বুলাই। হাতটা কুকুরের হাতের গঠনের মতো এবং কুকুরের লোমও রয়েছে। আমি বললাম, সব জিন কি এ ধরনের? সে বলল, সব জিনের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বেশি শক্তিশালী। এরপর আমি তাকে বললাম, যে উদ্দেশ্যে তুমি এসেছ, তা তুমি কিভাবে সাহস পেলে? সে উত্তরে বলল, আমি জানি যে আপনি দানপ্রিয়। তাই ভাবলাম, সবাই যখন আপনার নিয়ামতের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে, তাহলে আমি কেন বঞ্চিত হব? অবশেষে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের অনিষ্ট হতে কোন জিনিস রক্ষা করতে পারে? সে বলল, তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’।

সকালে উঠে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে রাতের ঘটনাটি বললে হুজুর (সা.) বলেন, দুষ্ট তো ঠিক বলেছে।

ইমাম আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন, আবু সালিল (রহ.) বলেন : নবী (সা.)-এর কোনো এক সাহাবির সঙ্গে লোকজন কথা বলতেছিল। কথা বলতে বলতে তিনি ঘরের ছাদের ওপর ওঠেন। তখন তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার জিজ্ঞেস করেন যে বলতে পারো, কোরআন শরিফের কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড়? তখন জনৈক সাহাবি বলেন, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল… এই আয়াতটি সবচেয়ে বড়। অতঃপর সেই লোকটি বলল, আমি এই উত্তর দেওয়ার পর হুজুর (সা.) আমার কাঁধের ওপর হাত রাখেন এবং আমি এর শীতলতা বুক পর্যন্ত অনুভব করছিলাম। অথবা তিনি বুকে হাত রেখেছিলেন এবং আমি এর শীতলতা কাঁধ পর্যন্ত অনুভব করছিলাম। অতঃপর হুজুর (সা.) বলেন, হে আবু মানজার! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ।

ইমাম আহমাদ (রহ.) বর্ণনা করেন, সালমা ইবনে ওয়ার্দান বলেন, তাঁকে আনাস ইবনে মালিক (রহ.) বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো এক সাহাবিকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? সাহাবি বললেন, না, আমার কাছে ধন-সম্পদ কিছুই নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তোমার কাছে কি ‘কুল হু আল্লাহু আহাদ’ নেই? তিনি বললেন, জি, আছে। রাসুল (সা.) বলেন, এটা হলো কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। এরপর বলেন, তোমার কাছে কি ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ নেই? তিনি বললেন, জি, আছে। রাসুল (সা.) বলেন, এটা হলো কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার কাছে কি ‘ইজা জুলজিলাত’ নেই? সাহাবি বললেন, জি, আছে। তিনি বললেন, এটা হলো কোরআন শরিফের এক-চতুর্থাংশ। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার কাছে কি ‘ইজা জায়া নাসরুল্লাহি’ নেই? সাহাবি বললেন, জি, আছে। হুজুর (সা.) বলেন, এটা হলো কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। এরপর রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার কাছে কি ‘আয়াতুল কুরসি’ নেই? সাহাবি বললেন, জি, আছে। রাসুল (সা.) বললেন, এটাও কোরআনের এক-চতুর্থাংশ।

আবু যর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) বলেন, একদিন আমি নবী (সা.)-এর কাছে এলে তাঁকে মসজিদে বসা দেখি এবং আমিও গিয়ে তাঁর কাছে বসি। এরপর নবী (সা.) বলেন, হে আবু যর! নামাজ পড়েছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, ওঠো, নামাজ পড়ো। আমি উঠে নামাজ পড়ে আবারও গিয়ে বসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তখন বলেন, মানুষ শয়তান থেকে এবং জিন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষও শয়তান হয় নাকি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজ সম্বন্ধে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, এটা একটি উত্তম বিষয়। তবে যার ইচ্ছা বেশি অংশ নিতে পারে এবং যার ইচ্ছা কম অংশ নিতে পারে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আর রোজা? তিনি বললেন, এটি একটি উত্তম ফরজ এবং তা আল্লাহর কাছে অতিরিক্ত হিসেবে জমা থাকবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সাদকা? তিনি বললেন, এটা বহুগুণ বিনিময় আদায়কারী। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন দান সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, অল্প সংগতি থাকতে বেশি দেয়ার সাহস করা এবং দুস্থ মানুষকে গোপনে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বপ্রথম নবী কে? তিনি বললেন, হজরত আদম (আ.)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কি নবী ছিলেন? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনকারী নবী ছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, তাঁরা হলেন ৩১০-এরও কিছু বেশি। তবে অন্য সময় রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তাঁরা ছিলেন ৩১৫ জন। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসুল (সা.) বললেন, ‘আয়াতুল কুরসি।’ (নাসায়ি)

আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) হতে ধারাক্রমে ইমাম আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন, আবু আইয়ুব আনসারি (রহ.) বলেন : আমার একটি খাদ্যভাণ্ডার ছিল এবং তা থেকে জিন খাদ্য চুরি করে নিয়ে যেত। আমি এটা টের পেয়ে হুজুর (সা.)-এর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করি। হুজুর (সা.) আমাকে শিখিয়ে দেন, তুমি যখন তাকে আসতে দেখবে, তখন পড়বে : ‘বিসমিল্লাহি আজিবি রাসুলুল্লাহি’। এরপর জিন এলে আমি তা পড়ে জিনটিকে ধরে ফেলি। জিনটিকে ধরার পর সে বলছিল যে আমি আর চুরি করতে আসব না। এরপর আমি তাকে ছেড়ে দিই। এরপর হুজুর (সা.)-এর কাছে এলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, বন্দিকে কী করেছ? আমি বললাম, তাকে ধরেছিলাম। কিন্তু সে বলল, আর আসবে না। এ কথার ওপর তাকে মুক্তি দিয়েছি। এরপর হুজুর (সা.) বললেন, (দেখবে) সে আবার আসবে। ঠিকই আমি তাকে এভাবে দু-তিনবার ধরলাম। কিন্তু সে দ্বিতীয়বার না আসার অঙ্গীকার করলে তাকে আমি ছেড়ে দিই। এরপর আবার হুজুর (সা.)-এর কাছে এলে তিনি বলেন, বন্দিকে কী করলে? আমি বললাম, আবারও এলে তাকে বন্দি করেছিলাম। কিন্তু আবার না আসার ওয়াদা করলে ছেড়ে দিয়েছি। হুজুর (সা.) এবারও বললেন, দেখবে সে আবার আসবে। সত্যিই সে আবার এলে আমি তাকে শক্তভাবে ধরলে সে বলে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে একটি বিষয় শিখিয়ে দিচ্ছি, তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। এরপর তোমার কাছে আর কোনো দিন কোনো কিছু আসবে না। এরপর নবী (সা.)-এর কাছে এসে এ কথা বললে তিনি বলেন, যদিও সে মিথ্যাবাদী, কিন্তু এ কথাটি সে সত্যই বলেছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, একটি বন্দি জিন আমাকে বলেছে, যখন আপনি বিছানায় শুইতে যাবেন, তখন ‘আয়াতুল কুরসির’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তাহলে আপনি সেই রাতে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর হিফাজতের বহির্ভূত হবেন না। আর সকাল পর্যন্ত শয়তানও আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। উপরন্তু সেই রাতে যা কিছু হবে, সবই কল্যাণকর হবে।

পরিশেষে রাসুল (সা.) বললেন, সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে। তবে হে আবু হুরায়রা! জানো কি, তুমি এ তিন রাত কার সঙ্গে কথা বলেছিলে? আমি বললাম, না। রাসুল (সা.) বললেন, সে ছিল শয়তান।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’।

অন্য একটি হাদিসে আবু ইমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বেহেশতে যেতে বাধা দেয় না।

আয়াতে বলা হয়েছে, তাঁর অনুমতি ছাড়া কারো জন্য সুপারিশ করার সাহস কার আছে? যেমন শাফায়াতের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় পড়ে থাকব। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক আমাকে ডাকবেন আর বলবেন, মাথা তোলো এবং যা বলতে হয়, তা বলো, তোমার আবেদন শোনা হবে। তুমি সুপারিশ করলে তা গৃহীত হবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সুপারিশের জন্য আমাকে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অবশেষে তাদের বেহেশতে নিয়ে যাব।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *