ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আরও একজনের মৃত্যু

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন (২৫) মারা গেছেন। এ নিয়ে এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে এই ঘটনায় দুজনের প্রাণ গেল।

এর আগে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষে আহত হন মুরসালিন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, আহত মুরসালিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া আরও বলেন, এ ঘটনায় আরও দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন মো. ইয়াসিন (১৮) ও মো. কানন চৌধুরী (২০)।

গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষের সময় নুরজাহান মার্কেটের সামনে ইটের আঘাতে আহত হয়েছিলেন মুরসালিন। পরে শাকিল ও অপর এক যুবক অচেতন অবস্থায় রিকশায় করে মোরসালিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেই দিন হাসপাতালে নিয়ে আসা শাকিল জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের সময় নুরজাহান মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইটের আঘাতে মোরসালিন আহত হন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

নিহত মুরসালিনের হুমাইয়া ইসলাম লামহা (৭) ও আমির হামজা (৪) নামে দু’টি সন্তান রয়েছে। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাই নগর গ্রামের বাসিন্দা হলেও রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার বাবার নাম মৃত মো. মানিক মিয়া।

তার স্ত্রী অনি আখতার মিতু জানান, নিউমার্কেটে একটি শার্টের দোকানে মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন তার স্বামী। সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসদ চলত। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার কাজের উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ফেরেনি মুরসালিন।

নিহত মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার ভাই নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে একটি প্যান্টের দোকানের কর্মচারী ছিল। সে কামরাঙ্গীরচরে পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় থাকতো।

এর আগে গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান নাহিদ। তিনি ডি-লিংক নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ‘ডেলিভারিম্যান’ ছিলেন। নাহিদের বাসাও রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের মেম্বার গলিতে। ওই দিন সকাল ১০টায় কর্মস্থলের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পান নাহিদ। রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বুধবারও ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। তিন দিনের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন- ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাসিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লিটন ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসউদ। চিহ্নিত তিনজনই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে।

এদিকে দুই দিন সংঘর্ষের কারণে নিউমার্কেট এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ থাকায় ঈদ বাজারে ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তাই ওই এলাকায় শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও দোকান খুলে দিতে বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যবসায়ীরা। পরে রাতে আবারও ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে নিউমার্কেট এলাকার সব দোকান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *