‘এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা’

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন। নৌকা মার্কা। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে তখন বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকে তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আমরা যারা প্রার্থী দিয়েছি তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন এটাই আমার আহ্বান। আপনারা দেবেন, বলেন হাত তুলে ওয়াদা করেন। 

এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত উচিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান।

বিএনপি তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের মানুষের সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জনগণের সাথে আগুন নিয়ে খেলে, লন্ডনে বসে অর্ডার দেয় তারেক। আর দেশে আগুন দিয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশের জনগণের ক্ষতি করছে হরতাল-অবরোধ দিয়ে। তারা অতীতে ক্ষমতা পেয়ে দেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ভোট চোর। দেশ বিক্রির চেষ্টা করছে খালেদা জিয়া। ২০০১ সালে বিএনপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। যে কূপ খনন করে খালেদা গ্যাস পায়নি, সেই কূপ খনন করে আমরা গ্যাস-তেল দুটোই পেয়েছি।’

আগুন-সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ পোড়ানোর মতো এত সাহস এরা কোথা থেকে পায়? মনে রাখতে হবে, আগুন নিয়ে খেলতে গেলে সেই আগুনেই হাত পোড়ে। আওয়ামী লীগ সরকার আছে মানেই উন্নয়ন আছে। আমার হারাবার কিছু নেই। সব হারিয়ে, নিজের সন্তানদের দূরে সরিয়ে দেশে এসেছিলাম এই দেশের মানুষের জন্য।’

সিলেট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করি। আজকেও আবার এসেছি। ১৯৫৯ সালেও সিলেটে এসেছিলাম। ছোট ছিলাম তখনো এসেছি। তবে ’৮১ সালে আসাটা ছিল ভিন্ন। তখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে এসেছিলাম।  তখন এসেছিলাম একটি প্রত্যয় নিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। এমন দেশে ফিরেছিলাম। আমি দেখেছি কীভাবে ভোট চুরি করে, কীভাবে গণতন্ত্র হরণ করে। ২১ বছর পর সরকার গঠন করে স্বপ্ন দেখেছি দেশকে সুন্দরভাবে গঠন করার।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করত না। ২০১৩ সালে আগুন দেওয়া শুরু করে। ’১৩ থেকে ’১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ পোড়ায়। অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনোনয়ন-বাণিজ্য করে নির্বাচন শেষ করে দেয়। আজকে দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেখানে বিএনপির আমলে সেটা ছিল না।  দারিদ্র্য হার ৪১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮-তে নামিয়েছি। ৮ লাখ ৪১ হাজার মানুষকে ঘর দিয়েছি। ২১ জেলা গৃহহীনমুক্ত করেছি, তার মধ্যে সিলেট অন্যতম। কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই লক্ষ্য রেখে কাজ করি।’

বিদেশগামীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের যুবসমাজের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। দালাল ধরে বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। ওই ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজনে বিনা জামানতে লোন দেওয়া হয়। কাজে সেইভাবে সবাই বিদেশে যাবেন। আর যারা রেমিট্যান্স পাঠায়, ওই হুন্ডি করে পাঠানো না, আমরা ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ প্রেরণ করা যায়। অর্থ প্রেরণ সহজ করে দিয়েছি। আজকে সেইভাবে টাকা পাঠালে নিজের একটা সঞ্চয় হবে। আর প্রবাসী যারা কাজ শেষ করে দেশে আসবেন তারাও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।

চা-শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করেছি। তাদের খাবার বাসস্থান, চিকিৎসা, ছেলে-মেয়েদের পড়া এবং মজুরি বাড়ানো সব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সবসময় শ্রমিকদের পাশে আছে। কারণ এই শ্রমিকদের নাগরিকত্ব ছিল না। যে নাগরিককত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর আমি আসার পরে তাদের জন্য কাজ করি।

ঐতিহ্য মেনে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন শেখ হাসিনা।

জিয়ারতকালে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এবং সমাবেশের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

এর আগে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ওসমানী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বৃহত্তর সিলেটের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *