একজন খালেদা জিয়া

:: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মুজতবা খন্দকার ::

একজীবনে একজন মানুষের যা কিছু পাওয়ার থাকে, সব তিনি পেয়েছেন। গৃহবধূ  থেকে দেশের সরকার প্রধান।  কি আর থাকে বাকি! নির্বাচন যদি একজন রাজনীতিকের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হয়ে থাকে, তবে নি:সন্ধেহে তিনি সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। কোনো নির্বাচনে তিনি হারেননি। জনগন তাকে সব সময় বসিয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে। জনগনকে কিছুমাত্র কমও দেননি তিনি। হেঁসেল থেকে রাজপথে তপ্তরোদকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ নয়বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যু নেই, খালেদা জিয়ার ইতিহাসে অমরত্বের আসন আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর প্যারোল মানে যদি রাজনৈতিক মৃত্যু হয়, তবে শেখ হাসিনার সে মৃত্যু হয়েছে বহু আগে, ওয়ান ইলেভেনের সময়, যে সময় তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। প্রত্যেক মানুষকেই একদিন মরতে হবে। কিন্তু বেগম জিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের যতসব অয়োজন দেখে দু:খের মধ্যেও কৌতুকবোধ করছি। একজন মানুষকে এত ভয়, এত পরোয়া ওদের!ভুলে যাই আমরা, একটি প্রতিহিংসা হাজারটা প্রতিহিংসার জন্ম দেয়.. এক মাঘে শীত যায়না.. তাই একজন খালেদা জিয়াকে মৃত্যু নিশ্চিত করে,রাজনীতির মাঠ নিষ্কন্টক করার স্বপ্ন, হয়তো দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে…ওদের। খালেদা জিয়া এখন শুধু একজন মানুষের নাম নয়, অটোক্রেটিক সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিয়োজিত সকল বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণাও বটে!

পেয়েছেন, আপোষহীন রাজনীতিকের সুখ্যাতি। সরকার গঠন করে, নারী প্রগতির জন্য গ্রহন করেছেন এক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক,  বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা সবই তার হাত ধরে সূচিত হয়েছে,এই দেশে। রাষ্ট্রের যা কিছু ভালো,কল্যানকর সবই তার সুযোগ্য নেতৃত্বেই এসেছে। জীবন সায়ান্বে এসে, তিনি কথিত চোরের অপবাদ নিয়ে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে তাঁকে। উপযুক্ত চিকিৎসা সেবাও দেয়া হচ্ছেনা তাকে। ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, অথচ আমরা সবাই কেমন নির্বিকার। তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে পুতুল খেলায় মেতে উঠেছে সরকার। যারা তার তিল পরিমান সমালোচনার যোগ্যতা রাখেনা,তারাই এখন সকাল বিকাল তাকে নিয়ে মশকরা করছে। যারা লুটপাট করে,দেশকে ফতুর করে দিয়েছে,তারাই এখন তাকে চোর বলতেও কসুর করছেনা। সবই তার ট্রাজেডি।  প্রতিহিংসারর রাজনীতি করেননি কখনো, রিকনসিলিয়েশনের কথা বলতেন, অথচ তাকেই চরম প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েও.  তার কারবন্দিত্বের অবসানে তার দল কাতর মিনতি ছাড়া আর কার্যত কিছুই করতে পারছেনা। মূলত: দলটির নেতৃত্বভাগের অযোগ্যতা এবং দূরদর্শীতার অভাব তার বন্ধিত্বকে প্রলম্বিত করে চলছে।বেগম জিয়ার ওপর প্রতিশোধ নেয়াকি শেষ হবে না। সম্ভবত না। তার মৃত্যু নিশ্চিত করাই যেন শাসকদলের ইচ্ছা। বলা হচ্ছে, তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হতে পারে, যদি তিনি চান। তারা বলছে, প্যারোলে মুক্তি মানে খালেদা জিয়ার রাজনীতিক মৃত্যু। অথচ, তারা জানেনা, খালেদা জিয়ার মৃত্যু নেই, খালেদা জিয়ার ইতিহাসে অমরত্বের আসন আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর প্যারোল মানে যদি রাজনৈতিক মৃত্যু হয়, তবে শেখ হাসিনার সে মৃত্যু হয়েছে বহু আগে, ওয়ান ইলেভেনের সময়, যে সময় তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। প্রত্যেক মানুষকেই একদিন মরতে হবে। কিন্তু বেগম জিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের যতসব অয়োজন দেখে দু:খের মধ্যেও কৌতুকবোধ করছি। একজন মানুষকে এত ভয়, এত পরোয়া ওদের!ভুলে যাই আমরা, একটি প্রতিহিংসা হাজারটা প্রতিহিংসার জন্ম দেয়.. এক মাঘে শীত যায়না.. তাই একজন খালেদা জিয়াকে মৃত্যু নিশ্চিত করে,রাজনীতির মাঠ নিষ্কন্টক করার স্বপ্ন, হয়তো দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে…ওদের। খালেদা জিয়া এখন শুধু একজন মানুষের নাম নয়, অটোক্রেটিক সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিয়োজিত সকল বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণাও বটে!

দুই।
খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অন্তরীণ

২০১৮-তে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কারাবন্দী বাঙালি কমান্ডো মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বদলি হয়ে চট্টগ্রাম আসেন, সাথে সুন্দরী স্ত্রী খালেদা খানম পুতুল ও দুই শিশুসন্তান পাঁচ বছর বয়সী তারেক রহমান (জন্ম ২০ নভেম্বর ১৯৬৫) ও ৭ মাসের আরাফাত রহমান কোকো (জন্ম ১২ আগস্ট ১৯৭০)। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তার আর কোয়ার্টারে ফেরা সম্ভব হয়নি, সাথের সেনানীদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। অন্য বাঙালি সেনানীদের পরিবারের মতো ক্যান্টনমেন্টে রয়ে গেল মেজর জিয়ার পরিবার-পরিজনও। পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম দখল নিলে, বাঁচার তাগিদে দুই শিশুসন্তান নিয়ে প্রায় দেড় মাস চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করার পর অতর্কিতে একদিন কালো বোরকা পরে সপুত্র খালেদা খানম পুতুল মোটরলঞ্চে চট্টগ্রাম ছেড়ে ১৬ মে ১৯৭১ নারায়ণগঞ্জ পৌঁছেন৬। সেখান থেকে বড়বোন খুরশীদ জাহান ও ভগ্নিপতি মোজাম্মেল হক একটি রেডক্রস চিহ্নিত জিপে করে তাদের ঢাকায় এনে ধানমন্ডিতে এক বন্ধুর বাড়িতে প্রায় দুই সপ্তাহ বসবাসের ব্যবস্থা করেন। একই সময়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা, এ কে এম আহসান CSP-এর বাড়িতে অন্তরীণ ছিলেন। পরে খালেদা সপুত্র ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক কুমিল্লা একাডেমির মহাপরিচালক আখতার হামিদ খান ICS-এর যোগ্য সহকারী ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি তাহেরুন্নেছা আবদুল্লাহর স্বামী পাকিস্তান জিওলজিক্যাল সার্ভের পরিচালক ভূতত্ত্ববিদ এম আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকেন। তাদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনী ব্যাপক চিরুনি অনুসন্ধান চালায়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ ও ক্যাপ্টেন আরিফ এম আবদুল্লাহর বাড়ি থেকে ১৯৭১ সালের ২ জুলাই খালেদা জিয়া ও তার শিশুসন্তানদের গ্রেফতার করে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অন্তরীণ করে রাখে। ২১ আগস্ট মেজর জিয়া পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মেজর জেনারেল জামসেদকে ‘বন্দী স্ত্রী খালেদা’ সাথে সম্ভ্রমের সাথে ব্যবহার করার জন্য একটি চিঠি পাঠান ‘Dear Gen. Jamshed, My wife Khaleda is under your custody. If you do not treat her with respect, I will kill you someday, Zia’
জিয়ার চিঠিটা মেজর শাফায়াত জামিল বাংলাদেশে প্রবেশ করে দেওয়ানগঞ্জ থেকে পোস্ট করেছিলেন।


১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানে সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর, সপুত্র খালেদা খানম পুতুলকে অন্তরীণমুক্ত করে ভারতীয় পূর্ব কমান্ডের প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা প্লেনে সিলেটে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে মেজর খালেকুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন অলি আহমদ তাদের শমসেরনগরে মেজর জিয়ার কাছে পৌঁছে দেন।


কালের বিবর্তনে খালেদা খানম পুতুল পরিচিত হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রধান খালেদা জিয়া রূপে এবং ১৯ মার্চ ১৯৯১ নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরে খালেদা জিয়া আরো দু’বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সাময়িকী ‘diem’ (Forbes পরপর তিন বছর (২০০৪ থেকে ২০০৬) তাকে পৃথিবীর অন্যতম ‘প্রভাবশালী নারী’ চিহ্নিত করেছিলেন। ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি সিনেট খালেদা জিয়াকে “Fighter for Democracy” সনদে সম্মানিত করেছিলেন।


খালেদা জিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালে, বাংলাদেশের এতিমদের সহায়তার জন্য কুয়েতের আমির ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার (৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা) প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে অনুদান পাঠান। ওই টাকা দিয়ে সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট স্থাপন করা হয় এবং বগুড়া ও ঢাকায় দুটো জমি কেনা হয়। দুই ট্রাস্টের কোনোটির ট্রাস্টি খালেদা জিয়া নন এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কোনো লেনদেনের সাথে জড়িত ছিলেন না। ট্রাস্টের জমা ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা বর্তমানে ৭ কোটি অতিক্রম করেছে।


৫ আগস্ট ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ আত্মসাতের অতিযোগে দুর্নীতি দমন ৫ (২) ও পেনাল কোডের ৪০৯/১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করে। বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫(২) ধারায় দোষী নির্ণীত করে ৫ বছর কারাদণ্ড ও ২ কোটি ১০ লাখ অর্থদণ্ড করে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডস্থ পরিত্যক্ত শত একরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। ২০১৯ সালে দণ্ড প্রদানকারী বিচারক আখতারুজ্জামান হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আরো ৭ বছর কারাদণ্ডে।


উল্লেখ্য, কথিত দুর্নীতি মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে দুর্নীতি দমন আইনে সংশোধন করে ৫(২) ধারা যুক্ত করা হয়েছিল।

উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন এবং অসম্পূর্ণ মেডিক্যাল রিপোর্ট
পরিত্যক্ত ঢাকা, কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জনতায় খালেদা জিয়া একাকিত্বের কারণে স্বভাবতই বিষণ্ণতা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়েছেন। সাথে তার পূর্বতন রোগগুলোর (১) বহুমূত্র (Diabetes) (২) উচ্চ রক্তচাপ (৩) শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যা (৪) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৬ অক্টোবর ২০১৮ ভর্তি করা হয়। স্বতন্ত্র, নির্জন কোনায় কেবিনে।


সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে বিএসএমএমইউর ভিসি ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন ৭ জন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কারাবন্দী খালেদা জিয়ার জেলে অর্জিত মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা নির্ণয় এবং চিকিৎসায় সক্ষম কোনো মানসিক রোগবিশেষজ্ঞকে বিএসএমএমইউর নির্ধারিত ৭ বিশেষজ্ঞ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ওষুধ ছাড়া মাংসপেশি ও সন্ধির বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম ও ইলেকট্রিক চার্জ দিয়ে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা প্রদানকারী ফিজিওথেরাপিস্টকেও কমিটিতে রাখা হয়নি এবং তার পর্যবেক্ষণ মেডিক্যাল রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।


খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট অসম্পূর্ণ। তার ‘রক্তচাপ ও কাশি সম্পৃক্ত হাঁপানি (Cough variant Asthma) পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন (Well Controlled)’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু পরিমাপ উল্লেখ করা হয়নি, বুকের এক্স-রে রিপোর্ট সংযুক্ত করা হয়নি।


তার “Recurreut Hyponatremia” কথা বলা হয়েছে অথচ দৈনন্দিন ব্লাড ইলেকট্রোলাইটস তথ্য রিপোর্টে উল্লেখ নেই। একইভাবে ডায়াবেটিসের পুরো তথ্য নেই এই নিমিত্তে HbAIC নিরূপণ করা অতীব প্রয়োজনীয়।


রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে সপ্তাহে মাত্র একবার ৭.৫ মিলিগ্রাম মেথোট্রেক্সেট (Methotrexate) তিন ট্যাবলেট সেব্য। তবে প্রয়োজনে ২.৫ মিলিগ্রাম করে সপ্তাহে বাড়ানো যায়। নখ ও চামড়ার রঙ পরিবর্তন, চোখের প্রদাহ, গলায় ব্যথা Sore throat), যকৃতে সমস্যা যথা- বমি বমি ভাব, পেটে অস্বস্তি, কালো প্রস্রাব এবং শ্বাসকষ্ট মেথোট্রেক্সটের পরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কবে ব্লাড কাউন্ট ও লিভার ফাংশন টেস্ট করা হয়েছিল এবং ফলাফল খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট যুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল।


রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সাথে যুক্ত সেকেন্ডারি সজোগ্রেন সিনড্রোমের কী কী উপসর্গ খালেদা জিয়ার চোখে, মুখে ও শরীরে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং কী কী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। এই রোগ নিরূপণের জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া হয়েছে কি? হয়ে থাকলে তাদের অভিমত যুক্ত না করার কারণ কী?


বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, মেথোট্রেক্সটে পর্যাপ্ত উন্নতি না হওয়ায় অপর একটি ইউমিউনোনিরোধক তসিলিজুমাব (Tocilijumab) ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ইনজেকশন নেয়ার আগে রক্তের পূর্ণ পরীক্ষা, লিভার ও কিডনির কার্যকারিতাও নির্ণয় করে নেয়া বাঞ্ছনীয়।


অসম্পূর্ণ মেডিক্যাল রিপোর্ট সম্পূর্ণ করে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে জামিন দেয়া হবে যৌক্তিক ও মানবিক ব্যাপার। এতে দেশের সর্বোচ্চ বিচারপতিদের ওপর জনগণের শ্রদ্ধা বাড়বে। এতদসঙ্গে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাসেবায় অসুস্থ খালেদা জিয়ার আস্থাও কাম্য।

খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্ত্বনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের ভাষ্যে বিএনপি নেত্রী বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কথিত ‘এতিমের টাকা চোর’। চোর অভিযোগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের উক্তি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য- ‘এগারো মাস মন্ত্রিত্ব করে ছিলাম। আমাকে চোর বলতে কারো বাধল না। আমি নাকি বলাকা সিনেমা হল করেছিলাম। আমাদের কিসমত যাদের জন্য রাজনীতি করি তাদের কেউ আমাদের বিশ্বাস করে না, এই তো দুনিয়া। জনাব সোহরাওয়ার্দীকে চোর বলেছে, হক সাহেবকে চোর বলেছে, নেতাজী সুভাষ বসুকে, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে এই বাঙালিরা চোর বলেছে, দুঃখ করার কী আছে?’

খালেদা জিয়া আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? সুস্থ হলে অনুগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়বেন এবং আপনার কর্মীদের পড়তে বলবেন। 

তথ্যসূত্র :
১. মাহফুজউল্লাহ, ‘ Begum Khaleda Zia- Her life, Her History , দি ইউনিভারসাল একাডেমি, ঢাকা ২০১৮
২. মেজর হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, বীর বিক্রম, ‘রক্তে ভেজা একাত্তর’ সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা ২০১৩।


শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *