কাজী পেয়ারার জনক কৃষিবিজ্ঞানী বদরুদ্দোজার মৃত্যু

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

কাজী পেয়ারার জনক প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

বুধবার (৩০ আগস্ট) বুধবার বিকেল ৫টায় ঢাকার উত্তরার এক বেসরকারি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী এম বদরুদ্দোজা অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন। গত সপ্তাহে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল ৫টায় তিনি মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে তার প্রথম জানাজা হবে। পরে গাইবান্ধায় নিজ গ্রামে দাফন হবে বলে জানা গেছে।

কাজী পেয়ারার কাজী নামটি তার নামের অংশ। শুধু পেয়ারার কারণেই কাজী বদরুদ্দোজার নাম বাংলাদেশের আধুনিক কৃষির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তা নয়। দেশের কৃষিখাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া থেকে শুরু করে কৃষি ও কৃষকের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কাজ করেছেন এই কৃষি সংগঠক।

ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি অ্যাগ্রি ডিগ্রি শেষ করার আগে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে বিভাগীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অনুমোদনে অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও নেতৃত্বের গুণাবলির স্বীকৃতি হিসেবে ‘ফুলব্রাইট’ স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।

১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রপ বোটানিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর দেশে ফিরে এসে কৃষি গবেষণায় নিজেকে নিবেদিত করেন ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা। এরপর থেকে সারা জীবন তিনি নিজের গবেষণা এবং এ দেশের কৃষির উন্নতির জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন।

ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ১৯৫৭ সালে ইকোনমিক বোটানিস্ট (ফাইবার) পদ লাভ করেন। সেই সময়ের কৃষকদের কাছে ফসল বলতে ছিল প্রধানত ধান ও পাট। স্বল্প পরিচিত ফসল গম ও ভুট্টা চাষ সম্পর্কে জানার জন্য তিনি সুইডেনের বিশ্বখ্যাত স্তালভ গবেষণা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

এর পরপরই লুগন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ ইন জেনেটিকস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে দেশে ফেরেন এবং নতুন উদ্যমে কৃষি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পাকিস্তান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল গম প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেন।

কাজী বদরুদ্দোজা ধানের বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দানাদার ফসল চাষ শুরুর ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেন। দেশে আধুনিক জাতের গম উদ্ভাবন ও চাষ শুরু করা আর ভুট্টার বাণিজ্যিক আবাদ তাঁর হাত দিয়ে শুরু। ভুট্টা থেকে তেল উদ্ভাবন এবং তা পোলট্রিশিল্পের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরুর ধারণাটিও তাঁর কাছ থেকে আসা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *