কারাগারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ও ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিউদ্দিন এ আদেশ দেন।

ঢাকার উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করার পর আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

রাতে মির্জা ফখরুলকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। তবে শুনানির সময় তাকে এজলাসে নেওয়া হয়নি।

ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ রাতে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন।

এর আগে মির্জা ফখরুলকে রমনা থানায় করা নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। পুলিশ কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মির্জা ফখরুলকে আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাঁকে ডিবির মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। আজ রাত আটটার পর ফখরুলকে আদালতে নেয় পুলিশ।

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ বলেন, গতকাল বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ।

আদালত সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুলের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। তবে শুনানি শেষে আদালত সে আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আজ রাত ৮টা ১০ মিনিটে মির্জা ফখরুলকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। এ সময় মির্জা ফখরুলের গাড়ির সামনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

রাত সোয়া ৯ টার দিকে মির্জা ফখরুলের জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। ৪০ মিনিট শুনানি হয়।

তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলে উদ্দিন, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহসহ ৫০ জনেরও বেশি আইনজীবী।

জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু ও রমনা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ফকির।

শুনানিতে মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মির্জা ফখরুলকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলার এজাহারে ঘটনাস্থলে মির্জা ফখরুল উপস্থিত ছিলেন এই ধরনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। মির্জা ফখরুল অসুস্থ। তাকে আজ রোববার গুলশানের বাসভবন থেকে আটক করে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।

পক্ষান্তরে রাষ্ট্রপক্ষে পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, গতকাল সমাবেশ নিয়ে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র করে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পুলিশ হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। এই দায়-দায়িত্ব মির্জা ফখরুল এড়াতে পারেন না। তার পরিকল্পনায় এই ঘটনা ঘটেছে।

মির্জা ফখরুলের পক্ষে বিএনপি সমর্থক একজন আইনজীবী শুনানি করতে গিয়ে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। তারা হামলা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়েছে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। পরে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরাও চিৎকার শুরু করেন। এদিকে মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে আইনজীবীরা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মিছিল সমাবেশ করেন।

মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ সদস্যরা গিয়ে ফখরুলসহ বাসার সবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ (চিত্র) ও হার্ডডিস্ক নিয়ে চলে যান তাঁরা। এর ঠিক ১০ মিনিট পর আবার ফিরে এসে মির্জা ফখরুলকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *