নরসিংদীতে খায়রুল কবির খোকনের বাড়িতে আগুন

:: নরসিংদী প্রতিনিধি ::

নরসিংদীতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুরে খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাড়িটি নরসিংদী জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আনসারী আগুনের ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে ১০ থেকে ১২ জন দূর্বৃত্ত খায়রুল কবির খোকনের বাড়ির সামনে আসে। এ সময় তারা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতর পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ভয়ে বাড়ির কেয়ারটেকার পালিয়ে যান। পরে দুর্বৃত্তরা বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দোতলায় উঠে প্রথমে পশ্চিম পাশের কক্ষটিতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। পরে প্রতিটি কক্ষে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

খোকনের নিকটতম প্রতিবেশী সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ উদ্দিনসহ প্রতিবেশীরা জানায়, দুস্কৃতিকারীরা রাম দা, লোহার রড ও দাড়ালো ছোড়া সহকারে ৭ থেকে ৮টি অটোরিকশা ও একটি দামী গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে আসে। পরে তারা খোকনের বাড়ির প্রধান ফটকের তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে দরজার তাল ভেঙ্গে প্রথমে মেঝেতে ও পরে বাড়ির চারাদিকে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই পুরা বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা আশেপাশের দোকানেও হামলা চালায়।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. রায়হান বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ৫টা ২০ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ১০ মিনিট চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাঁচটা ৪০ মিনিটে অগ্নিনির্বাপণ কাজ শেষ করে আমরা ফিরে আসি।’

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণা, জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন ভুঁইয়ার ভাষ্য, ছাত্রদলের ২ নেতা হত্যার বিচার দাবি ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে নিহত ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমানের কর্মী-সমর্থক ও পদবঞ্চিত নেতারা খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে আগুন দিয়েছেন।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মান্নান আনসারী বলেন, ‘আমরা বিকেল সোয়া ৫টার দিকে খবর পাই। ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। যেসময় ঘটনাস্থলে আসি তখন ঘরের প্রতিটি কক্ষে আগুন জ্বলছিল। আমরা প্রায় আধা ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই। এছাড়া বাড়িতে ঢোকার সময় আমরা নিচে অবিস্ফোরিত অবস্থায় দুটি ককটেল পাই। তবে ককটেল বিস্ফোরণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে নাকি আগুন দেওয়া হয়েছে তা আমরা জানতে পারিনি। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকেরা ওইদিনই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় দফায় দফায় চলতে থাকে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ড। পরে সর্বশেষ ২৫ মে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা মাঈনউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সেখানে দূর্বৃত্তের ছোঁড়া গুলিতে সাদিকুর রহমান সাদিক ও আশরাফুল ইসলাম নামে দুই পদবঞ্চিত নেতা নিহত হন।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তাঁর স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত সাদিকুরের ভাই আলতাফ হোসেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *