খালেদা জিয়াকে কেবিনে স্থানান্তর

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার রাত রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে তাঁকে হাসপাতালের সাত তলা থেকে চারতলায় সিসিইউতে নেওয়া হয়।

গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।

গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তাঁর চিকিৎসকরা।

ওইদিন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেটার লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দু-তিন দিন পরপর পানি বের করা লাগত, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার কেবিনে থাকা অবস্থায় তাঁর আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। বুধবার চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত তাঁকে বিদেশ পাঠানো দরকার।

 গত ২২ সেপ্টেম্বর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বেগম জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানন্তার করা হয়।

তারও আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে এক দফা সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। সেবার সাত ঘণ্টা পর আবার কেবিনে দেয়া হয়।

খালেদা জিয়ার পাশে তাঁর ছোট পুত্রবধূ মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি রয়েছেন। বেশিরভাগ সময়ই তিনি হাসপাতালে অবস্থান করে শাশুড়ির সেবা করেন। এর বাইরে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা নিয়মিত চেকআপ করছেন।

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।

২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র  জানিয়েছে, তার বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলতে পারে—এমনটাই আশা পরিবারের সদস্যদের।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের সদস্যরা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।

দীর্ঘ ৫০ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তারপরও তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের তেমন কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। মাঝে-মধ্যেই তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। নিতে হচ্ছে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। লিভার সিরোসিসের কারণে তার পেটে পানি চলে আসছে। সেটা বের করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেকটা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক জটিল অবস্থার কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার অনেকটা ইতিবাচক খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে। তবে কবে, কোথায় পাঠানোর অনুমতি দেয়া হবে সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কোথায় নেয়া হতে পারে তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময়  বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জার্মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে চিকিৎসা সম্ভব বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন তিনি।

অনেকে বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। হয়তো শনিবার কিংবা রোববারের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে আরেকটি গুঞ্জনে বলা হয়েছে,  সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিলেও কিছু দেশের নাম উল্লেখ করে শর্ত দিতে চায়। সেক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিংবা এশিয়ার কোনো দেশে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু বিএনপি চায় জার্মানি কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন আগে এসব দেশে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তাছাড়া তার শরীরে যেসব রোগ রয়েছে এবং তার শরীরের বর্তমান যে কন্ডিশন সেটার উপযুক্ত চিকিৎসা উল্লেখিত তিনটি দেশে সম্ভব। 

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। শেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *