:: খুলনা প্রতিনিধি ::
খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ বিএনপির অন্তত ৭০ জন ও ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পূর্বঘোষিত সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারগ্যাস ও শটগানের গুলি ছুঁড়েছে।
সংঘর্ষে দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, কয়রা উপজেলার যুবদল নেতা জাহিদুর রহমানসহ কমপক্ষে ৭০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
খুলনা প্রেস ক্লাবের শহীদ আবু নাসের ব্যাংক্যুয়েট হল চত্বরে কর্মিসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপির খুলনা জেলা ও মহানগর শাখা। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে এটি শুরু হয়। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শামিমুর রহমান শামীম, খুলনা মহানগরের সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন, জেলা বিএনপির সভাপতি আমীর এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীসহ মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীরা।
খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে শুক্রবার দুপুরে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে ওই সভায় যোগদানের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রেসক্লাবের সামনে আসেন। এ সময় নেতাকর্মীরা সেখান থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। তখন বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাদেরকে বাধা দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে। একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে মিছিল বের করার চেষ্টা এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা-স্যান্ডেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বেনী বাবু রোড, শামসুর রহমান রোড ও ম্যাটারনিটি হাসপাতালের সামনে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন নেতা প্রেসক্লাবের ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়।
বিএনপি নেতারা জানান, সংঘর্ষে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমান গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিলে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর পুলিশ তাদেরকে লাঠিচার্জ, নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশই প্রথমে তাদের ওপর আক্রমণ করে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ তাদের কর্মসূচিতে যে বাধা দেয়, এটা তারই ধারাবাহিকতা।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের অভিযোগ, কর্মিসভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৭০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দিঘলিয়া সেনাটি ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান রিপন, পাইকগাছা উপজেলার যুবদল নেতা তাজমুল হোসেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া পুলিশ আমাদের ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মিসভা থেকে মিছিল বের করে রাস্তায় অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে যান ও মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সরে যেতে বললে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় পুলিশের ৬-৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০জনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’