‘নির্বাচনী খেলা খেলতে দেওয়া হবে না’

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

নির্বাচনের আগে নতুন দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘দুটি নতুন দলকে নিবন্ধন দিয়েছে, যাদের কেউ চেনে না। এদের দিয়ে তারা নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলতে চায়। এবার আর এই খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’ 

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে বিএনপির গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্লোগান ধরেন। তিনি বলেন, জোরে বলতে হবে, এটাকে গগনবিদারী করতে হবে। গণভবনে পৌঁছাতে হবে, সংসদ ভবনে পৌঁছাতে হবে। আজকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে আওয়াজ তুলেছেন—এই স্বৈরাচারী সরকার নিপাত যাক। 

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আর কোনো দাবি আছে?’ সবাই ‘না’ বলে জবাব দিলে তিনি স্লোগান ধরেন, ‘এক দফা এক দাবি’; নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা কবে যাবি।’ এবার ফখরুল বলেন, ‘তাঁকে গণবিদায় করতে হবে। ওই গণভবনে পৌঁছাতে হবে, বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।’

বেলা দুইটায় উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে এই গণমিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর বিকেল পৌনে চারটায় মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে গণমিছিল শুরু হয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মালিবাগের আবুল হোটেলের কাছে গিয়ে গণমিছিল শেষ হয়। তার আগে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়কে এক পাশে একটি ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে নেতারা বক্তব্য দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মতো আবারও পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা মনে করেছে, এইভাবে ক্যারিকেচার করে ডিগবাজি খেয়ে খেয়ে চৌদ্দ আর আঠারোতে যে নির্বাচন করেছে, আবারও ওই নির্বাচন তেইশে ( ২০২৩) করে ক্ষমতায় যাবে। এ দেশের মানুষ যেতে দেবে?’

মির্জা ফখরুল এমন প্রশ্ন তুললে সবাই ‘না’ বলে জবাব দেন। এবার তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ; সব রাজনৈতিক দল; সব দেশপ্রেমী মানুষের একটাই আওয়াজ—সেই আওয়াজ হচ্ছে, এই অবৈধ ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার নিপাত যাক, নিপাত যাক।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই আওয়ামী লীগের সরকার আমাদের সব অর্জনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। সংসদকে ধ্বংস করে দিয়েছে, প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে বিচার বিভাগকে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদের শুধু জেল দেয়, কারাগারে পাঠায়।’ তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যতই কারাগারে ঢোকাও, যত জেলে দাও, যতই নির্যাতন করো, যতই টিয়ার গ্যাস মারো, যতই লাঠিপেটা করো—এবার গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় না করে মানুষ ঘরে ফিরে যাবে না। সে জন্য শেখ হাসিনাকে সবার আগে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বক্তৃতার কিছু নাই। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন? সবাই ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করার জন্য আজকে সমস্ত বাংলাদেশ প্রস্তুত। স্বৈরাচার যাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে, তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। যাদের ওপর নির্ভর করে আগামী দিনে স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে, তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে।’

এই সরকারের আমলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। চলমান আন্দোলনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই লড়াই তখনই শেষ হবে, যখন শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। যখন আবার এ দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে, নির্ভয়ে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। সেই দিন এই লড়াই শেষ হবে। সেই লড়াইয়ে আমাদের বিজয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা রাজপথে আছি। রাজপথে থাকবো। এই সরকার বিদায় না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

গণমিছিল উপলক্ষে বেলা ১টা থেকে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী আসতে শুরু করেন বাড্ডা ও কমলাপুরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মী বাড়তে থাকে।  বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ-সংগঠনের ব্যানারে নেতাকর্মীরা আসেন দলে দলে। এসময় সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে গণমিছিল প্রাঙ্গণ মুখরিত করেন তোলেন ।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণের কর্মসূচিতে বড় শোডাউন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিকদল। জহির উদ্দিন তুহিনের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী গণমিছিলে অংশ নেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এদিন ব্যানার, ফেস্টুন, মিছিল আর স্লোগানে প্রতিবাদ জানান তারা।

এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *