গাজায় ১৩ দিনে ১৫২৫ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় ১৩ দিনে ১ হাজার ৫২৫ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৮৫ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি। 

হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েল থেকে ২০৬ জনকে অপহরণ করে হামাস গাজায় জিম্মি করে রেখেছে বলে ইসরায়েল দাবি করছে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া রিফিউজি ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

মধ্য গাজার একটি আবাসিক ভবন এবং একটি গির্জা প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পৃথক এ দুটি হামলায় আরও অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে এবং ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে। 

ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ওয়াফা জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবারও গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে উল্লেখ সংখ্যক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে মিসর সীমান্তবর্তী রাফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিভিন্ন পরিবারের ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। তাদের আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইসরায়েলি বিমানবাহিনী রাফাহর আল-মাসরি টাওয়ারের উপরে বোমা ছুড়েছে।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এরপর ওই দিন থেকেই গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি। এর এক-তৃতীয়াংশই শিশু। জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় অনেক নবজাতকও নিহত হয়েছে। 

ফিলিস্তিনের নিউজ এজেন্সি ওয়াফার খবরে বলা হয়, গত বুধবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় খান ইউনিস শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত আল-বাকরির পরিবারে ভয়াবহ শোক নেমে আসে। ওই হামলায় সাত শিশুসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে এই পরিবারে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বুধবার ইসরায়েলের হামলায় হতাহত পরিবারগুলোর একটি হলো আল-বাকরির পরিবার। এমন আরও অনেক পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে কেড়ে নিয়েছে সেদিনের হামলা। 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, চিকিৎসক ও বাসিন্দারা এই হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ হামলার খবর খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। 

তবে ইসরায়েলি বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। 

আবেগতাড়িত কণ্ঠে ইউসেফ আল-আক্কাদ আরও বলেন, এটি গাজায় গণহত্যা। বিশ্ব এই শিশুদের লাশ দেখুক। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মোট বাসিন্দা ২৩ লাখ। এর প্রায় অর্ধেকই শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বিগত ১৫ বছরে এই শিশুরা দেখেছে পাঁচটি যুদ্ধ। ২০০৮-০৯ সালে ২৩ দিনব্যাপী চলা যুদ্ধে নিহত হয় ৩৪১ জন, ২০১২ সালের যুদ্ধে নিহত হয় ৩৫ জন, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ৫৩২ জন এবং ২০২১ সালের যুদ্ধে ৬৬ জন শিশু নিহত হয়। গাজায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনি শিশু নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। 

বলা হচ্ছে, ২০০৮-০৯ সালের যুদ্ধে যে শিশুর বয়স ছিল দুই বছর, সেও এ পর্যন্ত পাঁচটি যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে। যুদ্ধের সাক্ষী হওয়া শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা যেমন কঠিন, তেমনি যুদ্ধ শিশুদের মনে বড় ধরনের দাগ তৈরি করে বলেও ধারণা করা হয়। 

ইসরায়েলি হামলায় ১৮ সাংবাদিক নিহত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ ১৪তম দিনে গড়িয়েছে। এর আগের ১৩ দিনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। বিপরীতে হামাসের হামলায় তিন ইসরায়েলি সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত আটজন। এই অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাজা যেন সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। 

গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। একই সঙ্গে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলও এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। এর পর থেকেই দফায় দফায় গাজায় বিমান, স্থল এমনকি নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট বা সিপিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের এক সাংবাদিকও নিহত হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রাণহানি যে কেবল গাজাতেই হয়েছে তা নয়। হামাসের ইসরায়েল হামলার সময় তিন ইসরায়েলি সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন।

সিপিজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী শেরিফ মনসুর বলেন, ‘সাংবাদিকেরা অবশ্যই বেসামরিক ব্যক্তি এবং তাঁরা এই সংকটপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। তাই যুদ্ধরত পক্ষগুলোর উচিত নয় সাংবাদিকদের তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা। এই হৃদয়বিদারক সংঘাত কভার করার জন্য এই অঞ্চলের সাংবাদিকেরা মহান ত্যাগ স্বীকার করছেন। সব পক্ষকেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *