গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে নিহত ৭০৪

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৫ জন শিশু, ১৭৩ জন নারী ও ৭৮ জন বয়স্ক মানুষ। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে একদিনে এত মৃত্যু দেখেনি গাজাবাসী।  

গাজার চারশোর বেশি জায়গায় রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় এসব হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বহু মানুষ এই এলাকাগুলোতে আসে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। এরপর থেকে ১৭ দিন ধরে গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এসব হামলায় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহতের দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে বিদ্যুৎ, পানি, ওষুধ ও কর্মী সংকটের কারণে গাজায় আরও একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ১৭ দিনে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

বেসরকারি দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। মানবিক সংকটের কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গাজার চারদিকে শুধু হাহাকার আর আহাজারি। জ্বালানি না থাকায় ও হামলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল। মৃতদেহ রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত বডিব্যাগ। মিলছে না সামান্য কাফনের কাপড়ও। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে তা বর্ণনাতীত।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার প্রায় ৩০ শতাংশ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব হাসপাতালে আহত ও মুমূর্ষু রোগীদের আর চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ (১২টি) এবং ৭২টি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই (৪৬টি) বন্ধ হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মোট বাসিন্দা ২৩ লাখ। এর প্রায় অর্ধেকই শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বিগত ১৫ বছরে এই শিশুরা দেখেছে পাঁচটি যুদ্ধ। ২০০৮-০৯ সালে ২৩ দিনব্যাপী চলা যুদ্ধে নিহত হয় ৩৪১ জন, ২০১২ সালের যুদ্ধে নিহত হয় ৩৫ জন, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ৫৩২ জন এবং ২০২১ সালের যুদ্ধে ৬৬ জন শিশু নিহত হয়। গাজায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনি শিশু নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। 

বলা হচ্ছে, ২০০৮-০৯ সালের যুদ্ধে যে শিশুর বয়স ছিল দুই বছর, সেও এ পর্যন্ত পাঁচটি যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে। যুদ্ধের সাক্ষী হওয়া শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা যেমন কঠিন, তেমনি যুদ্ধ শিশুদের মনে বড় ধরনের দাগ তৈরি করে বলেও ধারণা করা হয়। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *