ঘড়ি আর ডায়রিতে বাবার স্মৃতি

:: তুহিন সানজিদ ::

বাবার প্রিয় ঘড়িটি এখন আর টিকটিক শব্দে সময় জানিয়ে দেয় না। বাবা চলে যাবার কিছুদিন পর তার সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এবার বাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় অনেক খুঁজে সেটি সাথে করে নিয়ে এসেছি। সাথে আরো একটি মূল্যবান জিনিস পেয়েছি-বাবার লেখা ডায়রি। সব সন্তানদের জন্মদিন আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিভিন্ন রোগ এবং তার ওষুধের নাম, চিকিৎসা পদ্ধতি লেখা এই ডায়রিতে।

বাবার ব্যবহৃত এই দুটি জিনিস আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।

ঘড়ি ছিল বাবার অন্যতম একটি প্রিয় জিনিস। ২/৩টি ঘড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। কোন একটি নষ্ট হয়ে গেলে প্রতিদিন ফোন করে ঘড়ি কেনার কথা মনে করে দিতেন।

২৭/২৮ বছর আগে (সাল ঠিক মনে নেই) ৭৫০ টাকা দিয়ে কালো বেল্টের একটি জাপানি ক্যাসিও ঘড়ি কিনেছিলাম। সাতক্ষীরা থেকে ঘড়িটি হাতে দিয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরার পর বাবা দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। কিছুক্ষন পর সেটি চাইলেন নিজের হাতে দেবার জন্য। আমাকে বললেন হাতে পরিয়ে দিতে। ডান হাতে ঘড়ি পরতেন তিনি। আমি পরিয়ে দেবার পর জানতে চাইলেন কেমন দেখাচ্ছে ? বললাম খুব সুন্দর লাগছে। বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তুমি নিজে আমার হাতে ঘড়িটি পরিয়ে দিয়েছো, এটা আর ফেরৎ দেবো না, এটা তোমার দেয়া আমার জীবনের প্রথম উপহার। ভেবে দেখলাম সত্যিই তো, বাবাকে জীবনে কোনো কিছুই তো দেয়া হয়নি। বললাম, না ফেরৎ দিতে হবে না, এটা আপনার। মাসখানেক পর একই ব্রান্ডের স্টিলের বেল্টের একটি ঘড়ি কিনলাম ১০৫০ টাকা দিয়ে। বাসায় আসার কিছুক্ষন পর সেটিও একইভাবে নিয়ে নিলেন বাবা। এরপর জীবনে আর কখনও ঘড়ি ব্যবহার করিনি আমি। কোথাও গেলে ভালো একটি ঘড়ি পছন্দ হলে সেটি কিনে বাবাকে দিতাম। প্রতিদিন একেকটি ঘড়ি পাল্টে পরতেন তিনি। ঘড়ি পাবার পর বাবার হাসিমাখা মুখটি দেখলে আমার মনে হতো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সন্তান।

বাবা নেই, বাবার ঘড়ি আর ডায়রিতে এখনও বাবার শরীরের গন্ধ জড়িয়ে আছে। তাই বাবার এই স্মৃতিটুকু আকড়ে ধরে রাখতে চাই জীবনের বাকী সময়টুকু।

কুইন্স, নিউ ইয়র্ক থেকে

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দ্য নিউ ইয়র্ক মেইল

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *