ঘণ্টায় একজনকে ১৫০’র বেশি মশা কামড়াচ্ছে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ঢাকায় প্রতি ঘন্টায় গড়ে ১৫০’র বেশি মশা একজন মানুষকে কামড়াচ্ছে বলে এক জরিপে দেখা গেছে। ঐ জরিপ জানায়, আগের তুলনায় ঢাকায় বেড়েছে মশার ঘনত্ব।

ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে শীত কমে যাওয়ার সাথে মশার উপদ্রব বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মশাও। ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬৯১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৩৬১ জন রয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমাদের গবেষক দল উড়ন্ত মশার ঘনত্ব জুন-জুলাইয়ে লার্ভার ঘনত্ব পেত গড়ে ১৫ থেকে ২০টি, বর্তমানে তা ৫০টির বেশি। আবার উড়ন্ত মশার ঘনত্ব ওই সময় আমরা পেতাম ২০ টির কম যা বর্তমানে ১৫০ টির বেশি। গবেষণাটি পিএমএইচ হিসাব ধরে করা হয়। পিএমএইচ বলতে আমরা বুঝি, একটি মানুষকে এক ঘণ্টায় কতগুলো মশা কামড়াতে পারে। এই ঘনত্ব মার্চ মাসে আরও অনেক বেশি হবে।’

তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রোগ ছড়ায় মাত্র ২২ প্রজাতির মশা। এর মধ্যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ছড়ায় এডিস মশা, ম্যালেরিয়া-এনোফিলিস, ফাইলেরিয়া-কিউলেক্স; এবং জাপানি এনসেফালাইটিস ছড়ায় কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশা।

তিনি আরও বলেন, মার্চের মশার ঘনত্ব ঠেকাতে এবং মানুষকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিল ও খাল পরিষ্কার করে সেখানে লার্ভিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগ করে মশার লার্ভিকে সম্পূর্ণরূপে মেরে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বিটিআইয়ের ব্যবহার করা যেতে পারে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করে কীটনাশক প্রয়োগ করলে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসবে না। লার্ভিসাইডের পাশাপাশি উড়ন্ত মশা নিধনে ফগিং কার্যক্রমও অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানান এই গবেষক।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান গুণী এই গবেষক।

দুই সিটি কর্পোরেশন ২০২০ সালে মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। তাতে ডেঙ্গুর প্রাক্‌–মৌসুম, মূল মৌসুম এবং মৌসুম–পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল। কর্মপরিকল্পনায় এডিশ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করতে কীটতত্ত্ববিদদের সহায়তায় জরিপ চালানো, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য পরিচালনা পর্ষদ গঠন, দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম পরিদর্শন, তদারকির জন্য ‘মশক নিধন সেল’ গঠন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা চোখে পড়ছে না।

কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা মুন্সি হেলাল উদ্দিন জানান, সিটি কর্পোরেশনকে দেখি না মানুষকে সচেতন করতে বা মশা নিধনে ওষুধ ঠিকভাবে ছিটাতে। এলাকার ড্রেন, জলাবদ্ধ এলাকা, বাসা বাড়িতে ঠিকভাবে অভিযান চালালে দেখা যাবে সব জায়গায় মশা রয়েছে। একদিন এসে অভিযান পরিচালনা করে গেলে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না। বর্তমান অবস্থায় প্রতিদিন মশক নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে এবং বাড়ির মালিকদের সচেতন করতে হবে, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের উপ প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, লে. কর্ণেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার জানান, মশক নিধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মশক নিধনে ঔষধ ছিটানোর ক্ষেত্রে মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখতে হয়, কেননা এসব মেডিসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতোমধ্যে দেশের বাহির থেকে বিভিন্ন ঔষধ ও সরঞ্জাম নিয়ে আসা হচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *