:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গানশুর জিশিশান জেলায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১১৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২৩০ জন।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের দিকে এই ভূমিকম্প ঘটে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, দেশটির গানসু ও কিংহাই প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পরপরই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দ্য ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ছিল ৬ দশমিক ১ মাত্রার। এটির উৎপত্তিস্থল গানসু প্রদেশের রাজধানী লানঝোর ১০২ কিলোমিটার পশ্চিম–দক্ষিণপশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠের ৩৫ কিলোমিটার গভীরে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ৫ দশমিক ৯ মাত্রার, যদিও শুরুতে ৬ মাত্রার কথা বলা হয়েছিল। আর সিনহুয়া বলছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। ভূমিকম্পের পর কয়েকবার পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কিছু গ্রামে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজে ধসে পড়া ভবনগুলোর ছাদ ও ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জরুরি উদ্ধারকাজ।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টা চলছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও অন্যান্য প্রভাব মূল্যায়নের জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি পাঠানো হয়েছে। প্রাদেশিক ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের প্রায় ২ হাজার ২০০ উদ্ধারকর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি পেশাদার বিভিন্ন জরুরি উদ্ধারকারী দল, সেনাবাহিনী ও পুলিশও উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে।
জিশিশানে এখন মঙ্গলবার সকাল। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই হিমশীতল পরিস্থিতির মধ্যেই হাজারো উদ্ধারকর্মী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ করছেন।
উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত আছেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। তাঁরা ভূমিকম্পে আহত, নিহত ও বেঁচে থাকা লোকদের সন্ধান করছেন।
প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর ইতিমধ্যে একাধিক পরাঘাত (আফটার শক) হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলছে, আরও পরাঘাত হতে পারে।
চীনের উত্তরাঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছে দেশটির অনেক অংশ।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের শানশি, হেবেই ও লিয়াওনিং প্রদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে।
হিমশীতল তাপমাত্রা উপেক্ষা করেই কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। তবে হিমশীতল তাপমাত্রার কারণে উদ্ধারকারীরা পূর্ণমাত্রায় কাজ করতে পারছেন না।
উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, জিশিশান কাউন্টিতে কিছু লোককে ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের হাতে সময় সীমিত। এদিকে কাউন্টিতে তীব্র ঠান্ডা তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। অধিকাংশ সড়ক এখন বরফে ঢাকা।
গানসুর মতো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো বেশ ভূমিকম্পপ্রবণ। অঞ্চলটি চুংহাই-তিব্বত মালভূমির পূর্ব সীমানায় অবস্থিত, যা একটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি কয়েক দশকের মধ্যে চীনে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে ২০০৮ সালে। সে বছর চীনের সিচুয়ানে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল এবং এই ভূমিকম্পে ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।